৮৩ নং সূরা মুতাফফিফীন বা সুরা আল মুতাফফিফীন (অর্থ, নামকরণ, শানে নুযূল, বিষয়বস্তু, পটভূমি) | সূরা মুতাফফিফীন এর শানে নুযুল | surah mutaffifin bangla- surah al mutaffifin bangla

আসসালামু আলাইকুম! সবাই কেমন আছেন? আশা করি, ভাল আছেন। প্রিয় পাঠক-পাঠিকা! পবিত্র কুরআনুল কারীমের ৮৩ নং সূরা মুতাফফিফীন বা সুরা আল মুতাফফিফীন সম্পর্কে আজকের পোস্টে আলোচনা করা হবে।

আশা করি আজকের পোস্ট এর মাধ্যমে ৮৩ নং সূরা মুতাফফিফীন বা সুরা আল মুতাফফিফীন (অর্থ, নামকরণ, শানে নুযূল, বিষয়বস্তু, পটভূমি)  | সূরা মুতাফফিফীন এর শানে নুযুল  |  surah mutaffifin bangla- surah al mutaffifin bangla সম্পর্কে জানতে পারবেন। দয়া করে পুরো পোস্টটি পড়ার অনুরোধ রইল। 
৮৩ নং সূরা মুতাফফিফীন বা সুরা আল মুতাফফিফীন (অর্থ, নামকরণ, শানে নুযূল, বিষয়বস্তু, পটভূমি)  | সূরা মুতাফফিফীন এর শানে নুযুল  |  surah mutaffifin bangla- surah al mutaffifin bangla

সূরা মুতাফফিফীন বা সুরা আল মুতাফফিফীন

সূরা মুতাফফিফীন হলো কোরআন মাজীদের ৮৩ নং সূরা। সূরা মুতাফফিফীন এর পূর্বের সূরা ইনফিতার আর পরবর্তী সূরা  ইনশিকাক। আয়াত সংখ্যা ৩৬ টি। কোন রুকু সংখ্যা নাই। সূরা মুতাফফিফীন মক্কায় অবতীর্ণ হয়। 


সূরা আল মুতাফফিফীন এর নামকরণ

প্রথম আয়াত وَیْلٌ لِّلْمُطَفِّفِیْنَۙ থেকে সূরাটির নামকরণ করা হয়েছে। সূরা মুতাফফিফীন কুরআনের ৩০ তম পারার সূরা।


সূরা মুতাফফিফীন এর শানে নুযুল 

এই সূরার বর্ণনাভংগী ও বিষয়বস্তু থেকে পরিষ্কার জানা যায়, এটি মক্কা মু’আয্যমায় প্রথম দিকে নাযিল হয়। সে সময় আখেরাত বিশ্বাসকে মক্কাবাসীদের মনে পাকা-পোক্তভাবে বসিয়ে দেবার জন্য একের পর এক সূরা নাযিল হচ্ছিল। সূরাটি ঠিক তখনই নাযিল হয় যখন মক্কার লোকেরা পথে-ঘাটে-বাজারে মজলিসে মহফিলে মুসলমানদেরকে টিটকারী দিচ্ছিল এবং তাদেরকে অপমানিত ও লাঞ্ছিত করছিল। তবে জুলুম, নিপীড়ন ও মারপিট করার যুগ তখনো শুরু হয়নি। কোন কোন মুফাস্‌সির এই সূরাকে মদীনায় অবতীর্ণ বলেছেন। হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা)-এর নিম্নোক্ত বর্ণনাটিই মূলত এ ভুল ধারণার পেছনে কাজ করছে। তিনি বর্ণনা করেছেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যখন মদীনায় এলেন তখন এখানকার লোকদের মধ্যে ওজনে ও মাপে কম দেবার রোগ ভীষণভাবে বিস্তার লাভ করেছিল। তখন আল্লাহ নাযিল করেন وَیْلٌ لِّلْمُطَفِّفِیْنَۙ সূরাটি। 


এরপর থেকে লোকেরা ভালোভাবে ওজন ও পরিমাপ করতে থাকে। (নাসাঈ, ইবনে মাজাহ, ইবনে মারদুইয়া, ইবনে জারীর, বাইহাকী ফী শু’আবিল ঈমান) কিন্তু যেমন ইতিপূর্বে সূরা দাহারের ভূমিকায় আমি বলে এসেছি, সাহাবা ও তাবেঈগণ সাধারণত কোন একটি আয়াত যে ব্যাপারটির সাথে খাপ খেতো সে সম্পর্কে বলতেন, এ আয়াতটি এ ব্যাপারে নাযিল হয়েছে। কাজেই ইবনে আব্বাস (রা)-এর রেওয়ায়াত থেকে যা কিছু প্রমাণ হয় তা কেবল এতটুকু যে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হিজরতের পরে যখন মদীনার লোকদের মধ্যে এ বদঅভ্যাসটির ব্যাপক প্রসার দেখেন তখন আল্লাহর হুকুমে তাদের এ সূরাটি শুনান এবং এর ফলে তারা সংশোধিত হয়ে যায়।


সূরা মুতাফফিফীন এর বিষয়বস্তু ও মূল বক্তব্য

ব্যবসায়ীদের মধ্যে যে সাধারণ বেঈমানীটির ব্যাপক প্রসার ঘটেছিল প্রথম ছ'টি আয়াতে সে জন্য তাদের পাকড়াও করা হয়েছে। তারা অন্যের থেকে নেবার সময় ওজন ও মাপ পুরো করে নিতো। কিন্তু যখন অন্যদেরকে দেবার সময় আসতো তখন ওজন ও মাপে প্রত্যেককে কিছু না কিছু কম দিতো। সমাজের আরো অসংখ্য অসৎকাজের মধ্যে এটি এমন একটি অসৎকাজ ছিল যার অসৎ হবার ব্যাপারটি কেউ অস্বীকার করতে পারতো না। এ ধরনের একটি অসৎকাজকে এখানে দৃষ্টান্ত স্বরূপ পেশ করে বলা হয়েছে। এটি আখেরাত থেকে গাফেল হয়ে থাকার অপরিহার্য ফল। যতদিন লোকদের মনে এ অনুভূতি জাগবে না যে, একদিন তাদেরকে আল্লাহর সামনে হাজির হতে হবে এবং সেখানে এক এক করে সব হিসেব দিতে হবে। ততদিন তাদের নিজেদের কাজ ও লেনদেনের ক্ষেত্রে পূর্ণভাবে সততা অবলম্বন সম্ভবই নয়। 


সততা ও বিশ্বস্ততাকে “উত্তম নীতি” মনে করে কোন ব্যক্তি কিছু ছোট ছোট বিষয়ে সততার নীতি অবলম্বন করলেও করতে পারে কিন্তু যেখানে বেঈমানী একটি "লাভজনক নীতি” প্রমাণিত হয় সেখানে সে কখনই সততার পথে চলতে পারে না। মানুষের মধ্যে একমাত্র আল্লাহর ভয়ে ও আখেরাতের প্রতি বিশ্বাসের ফলেই সত্যিকার ও স্থায়ী সত্যতা বিশ্বস্ততা সৃষ্টি হতে পারে। কারণ এ অবস্থায় সততা একটি “নীতি” নয়, একটি “দায়িত্ব” গণ্য হয় এবং দুনিয়ায় সততার নীতি লাভজনক হোক বা অলাভজনক তার ওপর মানুষের সততার পথ অবলম্বন করা বা না করা নির্ভর করে না। 


এভাবে নৈতিকতার সাথে আখিরাত বিশ্বাস সম্পর্ককে অত্যন্ত প্রভাবশালী ও মনোমুগ্ধকর পদ্ধতি বর্ণনা করার পর ৭ থেকে ১৭নং পর্যন্ত আয়াতে বলা হয়েছে, দুষ্কৃতকারীদের কাজের বিবরণী প্রথমেই অপরাধজীবীদের রেজিষ্টার (Black List) লেখা হচ্ছে এবং আখেরাতে তাদের মারাত্মক ধ্বংসের সম্মুখীন হতে হবে। তারপর ১৮ থেকে ২৮ পর্যন্ত আয়াতে সৎলোকদের উত্তম পরিণামের কথা বর্ণনা করা হয়েছে। সেখানে বলা হয়েছে, তাদের আমলনামা উচ্চ মর্যাদা সম্পন্ন লোকদের রেজিষ্টারে সন্নিবেশিত করা হচ্ছে। আল্লাহর নৈকট্যলাভকারী ফেরেশতারা এ কাজে নিযুক্ত রয়েছেন।


সবশেষে ঈমানদারদেরকে সান্ত্বনা দেয়া হয়েছে এবং এই সংগে কাফেরদেরকে এই মর্মে সতর্কও করে দেয়া হয়েছে যে, আজ যারা ঈমানদারদেরকে অপমানিত ও লাঞ্ছিত করার কাজে ব্যাপৃত আছে কিয়ামতের দিন তারা অপরাধীর পর্যায়ে থাকবে এবং নিজেদের এ কাজের অত্যন্ত খারাপ পরিণাম দেখবে। আর সেদিন এ ঈমানদাররা এ অপরাধীদের খারাপ ও ভয়াবহ পরিণাম দেখে নিজেদের চোখ শীতল করবে।


Tag: ৮৩ নং সূরা মুতাফফিফীন বা সুরা আল মুতাফফিফীন (অর্থ, নামকরণ, শানে নুযূল, বিষয়বস্তু, পটভূমি)  | সূরা মুতাফফিফীন এর শানে নুযুল  |  surah mutaffifin bangla- surah al mutaffifin bangla
Next Post Previous Post