ছাগলের দুধের উপকারিতা | Benefits of Goat Milk
আসসালামু আলাইকুম! সবাই কেমন আছেন? আশা করি, ভাল আছেন। প্রিয় পাঠক-পাঠিকা! আজকে আমরা জানবো, ছাগলের দুধের উপকারিতা | Benefits of Goat Milk
ছাগলের দুধের উপকারিতা | Benefits of Goat Milk
সাধারণ নানা পুষ্টি উপাদানের উৎস হিসেবে গরুর দুধের উপরই মানুষ নির্ভরশীল। অনেকে আছেন, দুধ খেতে পছন্দ করেন কিন্তু গরুর দুধ হজম করতে সমস্যা হয় তারা ছগলের দুধ বেছে নিতে পারেন। এটি গরুর দুধের মতোই স্বাস্থ্যকর খাবার। ছাগলের দুধ মানবদেহের জন্য খুবই উপকার। নিচে ছাগলের দুধের উপকারিতা | Benefits of Goat Milk সম্পর্কে আলোচনা করা হলোঃ
ছাগলের দুধের উপকারিতাগুলো | Benefits of Goat Milk
উচ্চমাত্রায় পুষ্টিগুণের কারণে ডায়েটের একটি গুরুত্বপূর্ণ অনুষঙ্গ দুধ। দেহের স্বাস্থ্য উন্নয়নে দুধ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে। আমাদের দৈনিক ক্যালসিয়াম ও চর্বির চাহিদা পূরণের পাশাপাশি এক গ্লাস দুধ হজম প্রক্রিয়া ও রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতার উন্নতি ঘটায়।
ছাগলের দুধ হজম করা যায় সহজেই
খাদ্য গ্রহণের পর যে জিনিসটি সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ তা হলো এ খাদ্য সবচে’ দ্রুততার সঙ্গে হজম করতে পারে সে বিষয়টি খেয়াল রাখা। গরুর দুধের তুলনায় সহজেই হজম হয় ছাগলের দুধ। গরুর দুধের তুলনায় ছাগলের দুধের প্রোটিনও বেশি। হজম করা অনেক সহজ। ছাগলের দুধের চর্বির দানা গরুর দুধের তুলনায় প্রায় অর্ধেক এবং এতে আছে উঁচুমাত্রার মিডিয়াম শৃঙ্খল ফ্যাটি এসিড। এ ধরনের ফ্যাটি এসিড শরীরের জন্য ভালো।
ছাগলের দুধের পুষ্টিগুণ মায়ের দুধের কাছাকাছি:
গবেষণায় জানা যায় ছাগলের দুধের পুষ্টিগুণ মায়ের দুধের কাছাকাছি। কারণ, শিশু খাদ্য হিসেবে ছাগলের দুধের ফর্মুলা গরুর দুধের পরিপূর্ণ বিকল্প হলেও একজন শিশুর চাহিদা বা প্রয়োজন একজন বয়স্ক লোক কিংবা একজন বালকের তুলনায় ভিন্ন। একটি শিশুকে যদি একমাত্র খাবার হিসেবে কেবল ছাগলের দুধ দেয়া হয়, তাহলে এর মধ্যে বিদ্যমান প্রোটিনকে গুরুত্ব দিতে হবে। শিশুর নবগঠিত কিডনীর জন্যে দুষ্পাচ্য মাত্রার প্রোটিন নেই।
বিভিন্ন রোগে ছাগলের দুধের উপকারিতা
বিভিন্ন রোগ থেকে মুক্তি পেতে ছাগলের কাঁচা দুধ বেশ কার্যকরী। ডেঙ্গু আক্রান্তদের রক্তে প্লাটিলেটের সংখ্যা বৃদ্ধিতে সাহায্য করে। অন্যান্য রোগের ক্ষেত্রে ছাগলের কাঁচা দুধ উপকারী। এর অ্যান্টিবডি ক্ষমতা রয়েছে এবং এটি জন্ডিস থেকে আরোগ্য লাভের প্রাকৃতিক উপাদান বলা যায়।
হার্ট ভালো রাখে
কোলেস্টেরলের মাত্রা কম থাকায় ছাগলের দুধ হার্টের জন্য বেশ উপকারি।
অন্ত্রের স্বাস্থ্য উন্নতি
ছাগলের দুধে প্রদাহ প্রতিরোধী উপাদান পাওয়া যায়। যা অন্ত্রের প্রদাহ কার্যকরীভাবে নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে। যাদের হজমশক্তি কম যাদের জন্য ছাগলের দুধ উৎকৃষ্ট খাবার; এতে কোনো গ্যাস্ট্রিক, অ্যাসিডিটি বা হজম সমস্যা দেখা দেয় না।
ছাগলের দুধে এলার্জি প্রবণতা কম
গরুর দুধ যে বাচ্চাদের সবচাইতে বেশি এলার্জি ঘটায়। গরুর দুধের প্রতি শিশুদের এলার্জি নিয়ে পরিচালিত সাম্প্রতিক এক গবেষণায় দেখা গেছে, শতকরা ৯৩ ভাগ শিশু ছাগলের দুধ খেতে পারে কোনরকম এলার্জি প্রতিক্রিয়া ছাড়াই।
বাড়ন্ত শিশুদের জন্য উপকারী
প্রোটিন, স্বাস্থ্যকর চর্বি, ভিটামিন আয়রন এবং অন্যান্য প্রয়োজনীয় পুষ্টি উপাদানের পাওয়ার হাউস বলা হয়ে থাকে। উচ্চমাত্রায় ক্যালসিয়াম থাকার কারণে এটি দাঁত ও হাড় মজবুত রাখে। এটি বাড়ন্ত শিশুদের দেহে পর্যাপ্ত শক্তি জোগায়।
ক্যালসিয়াম সমৃদ্ধ
গরুর দুধের তুলনায় ছাগলের দুধ বেশি ক্যালসিয়াম সমৃদ্ধ। ক্যালসিয়াম আপনার হাড়ের জন্য ভাল।
ত্বকের যত্নে ছাগলের দুধ
ত্বকের যত্নে এই দুধ অনেক বেশি উপকারী। ছাগলের দুধে ভিটামিন এ রয়েছে যার ফলে আপনার ত্বক মসৃণ এবং সুস্থ করে তোলে।
ছাগলের দুধ ‘ল্যাকটোজ অসহিষ্ণুতা’
ছাগলের দুধে ল্যাকটোজ থাকলেও গরুর দুধের তুলনায় কম এবং এর ল্যাকটোস অসহিষ্ণুতাও অনেক কম। ছাগলের দুধের অধিক ”হজমশীলতার” জন্যই এমনটা হয়ে থাকে বলে বিজ্ঞানীরা মনে করেন। ছাগলের দুধ সহজে হজম হওয়ায় সহজে বিপাক ঘটে এবং তা বেশিক্ষণ অন্ত্রে অবস্থান করে না।
এছাড়াও, আয়ুর্বেদ চিকিৎসা পদ্ধতি বেশ জনপ্রিয়। এই শাস্ত্রের অনেক চিকিৎসকের মতে, ছাগলের দুধ সহজপাচ্য, তাই জ্বর আক্রান্ত রোগীরা সহজেই এটি হজম করতে পারে। এ ছাড়া ছাগলের দুধ ডেঙ্গু প্রতিরোধেও কাজ করে।
ছাগলের দুধের উপকারিতা | Benefits of Goat Milk
১. প্রদাহ নিরাময়কারী (Anti inflammatory)
Anti inflammatory এবং ক্ষারীয় গুণ থাকার কারনে গ্যাস্টিক প্রদাহে আক্রান্ত ব্যক্তি ছাগলের দুধ পানে উপকৃত হতে পারেন।
২. ওজন কমাতে সহায়ক
ফ্যাট কম থাকায় এটি স্থূলতা (obesity) ও ওজন কমাতে সাহায্য করে। দেহের জন্য প্রয়োজনীয় ফ্যাটি এসিডের আধিক্য ছাগলের দুধের গ্রহণযোগ্যতা আরো বাড়িয়ে তোলে।
৩. কোষ্ঠক্যঠিণ্য (constipation) ও পেট ফাঁপা (bloating) প্রতিরোধকারী
ছাগলের দুধ মানুষের দেহের জন্য প্রয়োজনীয় আয়রন ও কপার বিপাকে সহায়ক।
৪. ক্যালসিয়াম সমৃদ্ধ
অধিক পরিমান ক্যালসিয়াম থাকায় ছাগলের দুধ মানবদেহের হাড়, দাঁত ও মাংসপেশি সুস্থসবল ও মজবুত রাখে। এতে ট্রিপটোফেন (এমাইনো এসিড) আছে যা মানুষের জন্য অতি প্রয়োজনীয়।
৫. সহজপাচ্য (Easily Digestible)
ছাগলের দুধের চর্বিকনা ক্ষুদ্র (গাভীর দুধের দশভাগের একভাগ) হওয়ায় সহজেই পরিপাককারী এনজাইম ভিতরে প্রবেশ করে হজম করতে পারে।
৬. এন্টিএলার্জিক
ছাগলের দুধ এলার্জি জাতীয় সমস্যা (হাঁপানী,চর্মরোগ ইত্যাদি) হতে মুক্ত থাকতে সাহায্য করে।
৭. সহজে শোষণ ও বিপাকের উপযোগী
রাসায়নিক গঠন মাতৃদুগ্ধের সবচেয়ে কাছাকাছি হওয়ায় এর শোষণ ও বিপাকের হার (Bio availability) সর্বাধিক।
৮. রোগ প্রতিরোধক
ছাগলের দুধে বিদ্যমান পর্যাপ্ত সেলেনিয়াম রোগ প্রতিরোধক্ষমতাকে সর্বোচ্চ কর্মক্ষম করে।
৯. ছাগল যক্ষামুক্ত
ছাগলের দুধপানে যক্ষাআক্রান্ত হবার কোন সম্ভাবনা নেই।
১০. মস্তিষ্কের জন্য উপকারী
ছাগলের দুধ পরিশ্রান্ত (overtaxed) মস্তিষ্ককে সতেজ করে।
১১. হৃদপিন্ডের ধমনীর ব্লক (Arteriosclerosis) প্রতিরোধ করে
ধমনীর ব্লকের জন্য দায়ী Xanthene Oxidase ছাগলের দুধে কম থাকে।
১২. ল্যাকটোজ কম
ছাগলের দুধে ল্যাকটোজ কম থাকায় ল্যাকটোজ হজমে অক্ষম ব্যক্তির জন্য এটি সহায়ক।
১৩. শিশু ও বৃদ্ধের জন্য উপযোগী
মিউকাস বিরোধী হওয়ায় শিশুদের খাদ্যনালীতে মিউকাস তৈরী, এলার্জি ও চামড়া র্যাসমুক্ত রাখে।
১৪. অস্থিসন্ধির সুরক্ষা দেয়
বায়োঅর্গানিক সোডিয়াম থাকায় ছাগলের দুধ অস্থিসন্ধিকে সুস্থ, কর্মক্ষম ও ফ্লেক্সিবল রাখে।
১৫. অতিশয় পুষ্টিসমৃদ্ধ
ছাগলের দুধে ক্যালসিয়াম, ফসফরাস, রিবোফ্লাভিন, ভিটামিন বি ১২, প্রোটিন, কার্বোহাইড্রেট, ফ্যাট, ফ্যাটিএসিড বিদ্যমান থাকায় এটি স্বাস্থ্যরক্ষায় প্রয়োজনীয় ভূমিকা রাখে।
Tag: ছাগলের দুধের উপকারিতা, ছাগলের দুধের উপকারিতা ও অপকারিতা, ছাগলের দুধের উপকার, ছাগলের দুধের উপকারিতা কি, ছাগলের দুধ বৃদ্ধির উপায়, ছাগলের দুধ এর উপকারিতা, ছাগলের দুধ খাওয়ার উপকারিতা, ছাগল দুধের উপকারিতা, ছাগলের দুধে কি উপকার, ছাগলের দুধ কি উপকার, Benefits of Goat Milk