সূরা আল আবাসা -সূরা আবাসা | সূরা আবাসা এর শানে নুযুল -সূরা আবাসা ফজিলত, সূরা আবাসা শানে নুযুল | surah abasa- surah abasa bangla

আসসালামু আলাইকুম! সবাই কেমন আছেন? আশা করি, আল্লাহর রহমতে ভাল আছেন। প্রিয় পাঠক-পাঠিকা! ৮০ নং সূরা আল-আবাসা পবিত্র কুরআনুল কারীমের অন্যতম সূরা। বাংলাতে হলো আবাসা। ইংরেজিতে হলো Abasa. আরবিতে হলো عبس সুরাতুল আবাসার আয়াত সংখ্যা হলো ৪২ আয়াত। আর রুকু সংখ্যা হলো ১টি। সূরা আবাসা (abasa) অবতীর্ণ হয় মক্কায়। 

সূরা আল আবাসা -সূরা আবাসা | সূরা আবাসা এর শানে নুযুল -সূরা আবাসা ফজিলত, সূরা আবাসা শানে নুযুল | surah abasa- surah abasa bangla

সূরা আল আবাসা -সূরা আবাসা | সূরা আবাসা এর শানে নুযুল -সূরা আবাসা ফজিলত, সূরা আবাসা শানে নুযুল | surah abasa- surah abasa bangla 


সূরা আবাসা এর নামকরণ

এই সূরার প্রথম শব্দ عبس থেকে এর নাম হিসেবে গ্রহণ করা হয়েছে।

সূরা আবাসা এর নাযিলের সময়-কাল

মুফাস্সির ও মুহাদ্দিসগণ একযোগে এ সূরা নাযিলের নিম্নরূপ কারণ বর্ণনা করেছেন। একবার নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের মজলিসে মক্কা মুয়ায্যমার কয়েক জন বড় বড় সরদার বসেছিলেন। তাদেরকে ইসলাম গ্রহণের ব্যাপারে উদ্যোগী করার জন্য তিনি তাদের সামনে ইসলামের দাওয়াত পেশ করছিলেন। এমন সময় ইবনে উম্মে মাকতূম (রা) নামক একজন অন্ধ তাঁর খেদমতে হাজির হলেন এবং তাঁর কাছে ইসলাম সম্পর্কে কিছু প্রশ্ন করতে চাইলেন। তার এই পশ্নে সরদারদের সাথে আলাপে বাধা সৃষ্টি হওয়ায় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বিরক্ত হলেন। তিনি তার কথায় কান দিলেন না। এই ঘটনায় আল্লাহর পক্ষ থেকে এই সূরাটি নাযিল হয়। এ ঐতিহাসিক ঘটনার কারণে এ সূরা নাযিলের সময়-কাল সহজেই নির্দিষ্ট হয়ে যায়।

এ ব্যাপারে প্রথম কথা হচ্ছে, হযরত ইবনে উম্মে মাকতুম (রা) একেবারেই প্রথমদিকে ইসলাম গ্রহণকারীদের একজন। হাফেজ ইবনে হাজার আসকালানী ও হাফেজ ইবনে কাসীর বলেন, (তিনি একেবারেই প্রথম দিকে মক্কায় ইসলাম গ্রহণ করেন) এবং  (তিনি একেবারেই প্রথম দিকে ইসলাম গ্রহণকারীদের অন্তরভুক্ত)। অর্থাৎ ইসলাম প্রচারের একেবারেই শুরুতে তিনি মক্কায় ইসলাম গ্রহণ করেন।

দ্বিতীয়ত, যেসব হাদীসে এ ঘটনাটি বর্ণনা করা হয়েছে তার কোন কোনটি থেকে জানা যায়, এ ঘটনাটির আগেই তিনি ইসলাম গ্রহণ করেছিলেন। আবার কোন কোন হাদীস থেকে প্রকাশ হয়, এ সময় তিনি ইসলামের প্রতি আকৃষ্ট হয়েছিলেন এবং সত্যের সন্ধানেই নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের কাছে এসেছিলেন। হযরত আয়েশার (রা) বর্ণনা মতে, তিনি এসে বলেছিলেন, "হে আল্লাহর রসূল! আমাকে সত্য-সরল পথ দেখিয়ে দিন।” (তিরমিয, হাকেম ইবনে হিব্বান, ইবনে জারীর, আবু লাইলা) হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা) বর্ণনা করেছেন তিনি এসেই কুরআনের একটি আয়াতের অর্থ জিজ্ঞেস করতে থাকেন এবং নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে বলেন: "হে আল্লাহর রসূল। আল্লাহ আপনাকে যে জ্ঞান শিখিয়েছেন আমাকে সেই জ্ঞান শেখান।” (ইবনে জারীর, ইবনে আবী হাতেম)

এসব বর্ণনা থেকে জানা যায়, তিনি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া.সাল্লামকে আল্লাহর নবী এবং কুরআনকে আল্লাহর কিতাব বলে মেনে নিয়েছিলেন।.অন্যদিকে ইবনে যায়েদ তৃতীয় আয়াতে উল্লেখিত মন (হয়তো সে পরিশুদ্ধ হবে) এর অর্থ করেছেন  (হয়তো সে ইসলাম গ্রহণ করবে)। (ইবনে জারীর) আবার আল্লাহ নিজেই বলেছেন : “তুমি কী জানো, হয়তো সে সংশোধিত হয়ে.যাবে অথবা উপদেশের প্রতি মনোযোগী হবে এবং উপদেশ দেয়া তার জন্য উপকারী হবে। এ ছাড়া আল্লাহ এও বলেছেন : "যে নিজে তোমার কাছে দৌড়ে আসে এবং ভীত।হয় তার কথায় তুমি কান দিচ্ছো না।” একথা থেকে ইংগিত পাওয়া যায়, তখন তার মধ্যে সত্য অনুসন্ধানের গভীরতর প্রেরণা সৃষ্টি হয়ে গিয়েছিল। তিনি নবী সাল্লাল্লাহ।আলাইহি ওয়া সাল্লামকেই হেদায়াতের উৎস মনে করে তাঁর খেদমতে হাযির হয়ে।গিয়েছিলেন। তাঁর কাছেই নিজের চাহিদা পূরণ হবে বলে মনে করছিলেন। তাঁর অবস্থা।একথা প্রকাশ করছিল যে, তাঁকে সত্য সরল পথের সন্ধান দেয়া হলে তিনি সে পথে।চলবেন।

তৃতীয়ত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের মজলিসে সে সময় যারা উপস্থিত ছিল বিভিন্ন রেওয়ায়াতে তাদের নাম উল্লেখিত হয়েছে। তারা ছিল উতবা শাইবা, আবু জেহেল, উমাইয়া ইবনে খালাফ, উবাই ইবনে খালফ প্রমুখ ইসলামের ঘোর শত্রুরা। এ থেকে জানা যায়, এ ঘটনাটি তখনই ঘটেছিল যখন রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সাথে এই লোকগুলোর মেলামেশা বন্ধ হয়নি। তাদের সাথে বিরোধ ও সংঘাত তখনো এমন পর্যায়ে পৌঁছেনি যে, তাঁর কাছে তাদের আসা যাওয়া এবং তাঁর সাথে তাদের।মেলামেশা বন্ধ হয়ে গিয়ে থাকবে। এসব বিষয় প্রমাণ করে, এ সূরাটি একেবারেই প্রথম।দিকে নাযিলকৃত সূরাগুলোর অন্তরভুক্ত।
আরো দেখুন 

সূরা আবাসা (abasa) এর বিষয়বস্তু ও মুল বক্তব্য

আপাতদৃষ্টিতে ভাষণের সূচনায় যে বর্ণনা পদ্ধতি অবলম্বন করা হয়েছে তা দেখে মনে হয়, অন্ধের প্রতি অবহেলা প্রদর্শন ও তার কথায় কান না দিয়ে বড় বড় সরদারদের প্রতি মনোযোগ দেবার কারণে এই সূরায় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে তিরস্কার ও তাঁর প্রতি ক্রোধ প্রকাশ করা হয়েছে। কিন্তু পুরো সূরাটির সমস্ত বিষয়বস্তুকে একসাথে সামনে রেখে চিন্তা করলে দেখা যাবে, আসলে এখানে ক্রোধ প্রকাশ করা হয়েছে কুরাইশদের কাফের সরদারদের বিরুদ্ধে। কারণ এই সরদাররা তাদের অহংকার, হঠধর্মিতা ও সত্য বিমুখতার কারণে রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সত্যের।দাওয়াতকে অবজ্ঞা ও ঘৃণা ভরে প্রত্যাখ্যান করছিল।

এই সংগে এখানে নবীকে তাঁর সত্য।দীনের দাওয়াত দেবার সঠিক পদ্ধতি শেখাবার সাথে সাথে নবুওয়াত লাভের প্রথম।অবস্থায় নিজের কাজ সম্পন্ন করার ব্যাপারে তিনি যে পদ্ধতিগত ভুল করে যাচ্ছিলেন তা।তাঁকে বুঝানো হয়েছে। একজন অন্ধের প্রতি তাঁর অমনোযোগিতা ও তার কথায় কান না।দিয়ে কুরাইশ সরদারদের প্রতি মনোযোগী হওয়ার কারণ এ ছিল না যে, তিনি।বড়লোকদের বেশী সম্মানিত মনে করতেন এবং একজন অন্ধকে তুচ্ছ জ্ঞান করতেন, নাউযুবিল্লাহ তাঁর চরিত্রে এই ধরনের কোন বক্রতা ছিল না যার ফলে আল্লাহ তাঁকে পাকড়াও করতে পারেন। বরং আসল ব্যাপার এই ছিল, একজন সত্য দীনের দাওয়াত।দানকারী যখন তাঁর দাওয়াতের কাজ শুরু করেন তখন স্বাভাবিকভাবেই তাঁর দৃষ্টি চলে।যায় জাতির প্রভাবশালী লোকদের দিকে। তিনি চান, এই প্রভাবশালী লোকেরা তাঁর।দাওয়াত গ্রহণ করুক।

এভাবে তাঁর কাজ সহজ হয়ে যাবে। আর অন্যদিকে দুর্বল, অক্ষম।ও সমাজে প্রভাব-প্রতিপত্তিহীন লোকদের মধ্যে তাঁর দাওয়াত ছড়িয়ে পড়লেও তাতে।সমাজ ব্যবস্থায় কোন বড় রকমের পার্থক্য দেখা দেয় না। প্রথম দিকে রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহ।আলাইহি ওয়া সাল্লামও প্রায় এই একই ধরনের কর্মপদ্ধতি অবলম্বন করেছিলেন। তাঁর।এই কর্মপদ্ধতি গ্রহণের পেছনে একান্তভাবে কাজ করেছিল তাঁর আন্তরিকতা ও সত্য দীনের দাওয়াতকে ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে দেবার প্রেরণা। বড়লোকদের প্রতি সম্মানবোধ এবং গরীব, দুর্বল ও প্রভাবহীন লোকদেরকে তুচ্ছ জ্ঞান করার ধারণা এর পেছনে মোটেই সক্রিয় ছিল না। কিন্তু আল্লাহ তাঁকে বুঝালেন, এটা ইসলামী দাওয়াতের সঠিক পদ্ধতি নয়। বরং এই দাওয়াতের দৃষ্টিতে এমন প্রত্যেক ব্যক্তিই গুরুত্বের অধিকারী, যে সত্যের সন্ধানে ফিরছে, সে যতই দুর্বল, প্রভাবহীন ও অক্ষম হোক না কেন আবার এর দৃষ্টিতে এমন প্রত্যেক ব্যক্তিই গুরুত্বহীন, যে নিজেই সত্যবিমুখ, সে সমাজে যত বড় মর্যাদার আসনে প্রতিষ্ঠিত হোক না কেন।

তাই ইসলামের দাওয়াত আপনি জোরেশোরে সবাইকে দিয়ে যান কিন্তু যাদের মধ্যে সত্যের দাওয়াত গ্রহণ করার আগ্রহ পাওয়া যায় তারাই হবে আপনার আগ্রহের আসল কেন্দ্রবিন্দু। আর যেসব আত্মম্ভরী লোক নিজেদের অহংকারে মত্ত হয়ে মনে করে, আপনি ছাড়া তাদের চলবে কিন্তু তারা ছাড়া আপনার চলবে না, তাদের সামনে আপনার এই দাওয়াত পেশ করা এই দাওয়াতের উন্নত মর্যাদার সাথে মোটেই খাপ খায় না।

সূরার প্রথম থেকে ১৬ আয়াত পর্যন্ত এই বিষয়বস্তুই আলোচিত হয়েছে। তারপর ১৭ আয়াত থেকে রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের দাওয়াত প্রত্যাখ্যানকারী কাফেরদের প্রতি ক্রোধ প্রকাশ করা হয়েছে। তারা নিজেদের স্রষ্টা ও রিযিকদাতা আল্লাহর মোকাবিলায় যে দৃষ্টিভংগী ও কর্মনীতি অবলম্বন করেছিল প্রথমে সে জন্য তাদের নিন্দা ও তিরস্কার করা হয়েছে। সবশেষে তাদেরকে এই মর্মে সতর্ক করে দেয়া হয়েছে যে, কিয়ামতের দিন তারা নিজেদের এই কর্মনীতির অত্যন্ত ভয়াবহ পরিণাম দেখতে পাবে।

আরো দেখুন

সূরা নাবা PDF ডাউনলোড

সূরা নাযিয়াত PDF ডাউনলোড 


Tag: সূরা আল আবাসা -সূরা আবাসা, সূরা আবাসা এর শানে নুযুল, সূরা আবাসা ফজিলত, সূরা আবাসা শানে নুযুল,  surah abasa, surah abasa bangla

Next Post Previous Post