আসসালামু আলাইকুম, কেমন আছেন? আশা করি, আল্লাহর রহমতে ভাল আছেন । প্রিয় পাঠক-পাঠিকা! জিলহজ মাস হল হজের মৌসুম। হজের ফরজগুলোর মধ্যে অন্যতম হজের ফরজ হলো ইহরাম বাঁধা। অর্থাৎ হজ্ব শুরু করার জন্য এহরাম বাধা হাজীদের উপর ফরজ বা আবশ্যক। অতএব এহরাম বাধার নিয়ম, ইহরাম বাঁধার স্থান- ইহরাম বাঁধার পদ্ধতি /মহিলাদের এহরাম, নাবালকের ইহরাম, বোবা ব্যক্তির ইহরাম, বেহুশ ব্যক্তির ইহরাম। এসব সম্পর্কে আপনাদেরকে জানাবো। আশা করি, আজকের পোষ্টটি আপনাদের উপকারে আসবে। সুতরাং দয়া করে পুরো পোস্টটি পড়বেন এবং দ্বীন প্রচারের স্বার্থে শেয়ার করবেন। ধন্যবাদ
এহরাম বাধার নিয়ম, ইহরাম বাঁধার স্থান- ইহরাম বাঁধার পদ্ধতি /মহিলাদের এহরাম, নাবালকের ইহরাম, বোবা ব্যক্তির ইহরাম, বেহুশ ব্যক্তির ইহরাম | Rules of Ihram
ইহরাম বাধার নিয়ম সম্পর্কে জানার আগে আপনাকে অবশ্যই জানতে হবে মিকাত সম্পর্কে অতএব আপনি যদি মিকাত সম্পর্কে না জানেন তাহলে নিচের পোস্টটি পড়ার অনুরোধ রইল👇👇
ইহরামের প্রস্তুতি কেমন হওয়া প্রয়োজন
* ইহরামের প্রস্তুতির নিয়তে প্রথমে সুন্নত তরীকায় মোচ, নখ এবং শরীরের অতিরিক্ত পশম কেটে নিবেন।
* সফরে বের হওয়ার আগে ইহরামের নিয়তে গোসল করে নিবেন। গোসল সম্ভব না হলে শুধু উযূ করলেও চলবে।
* গোসলের পর পুরুষগণ ইহরামের কাপড় পরবে। মোটা একটা কাপড় লুঙ্গির মত পরবে, আর একটা কাপড় চাদরের মত গায়ে দিবে। পরিধানের কাপড়টি যেহেতু সেলাইবিহীন তাই সতর যেন খুলে না যায় সেদিকে খুব খেয়াল রাখবে। ইহরামের কাপড় সেফটিপিন দিয়ে আটকাবে না।
* পুরুষগণ শরীরে আতর লাগাবে। ইহরামের কাপড়ে নয়।
ইহরাম বাঁধার স্থান
যারা বাংলাদেশ থেকে সরাসরি মদীনায় যাবে, তারা মদীনা থেকে মক্কা যাওয়ার পথে
জুলহুলাইফা নামক স্থানে ইহরাম বাঁধবে।
জুলহুলাইফা মদীনা শহর থেকে ছয় মাইল দক্ষিণে। কিন্তু যারা বাংলাদেশ থেকে সরাসরি মক্কা যাবে, তাদের জন্য ঢাকা থেকেই (বাসা বা বিমানবন্দর থেকে অথবা বিমান যদি পথে বিরতি দেয় সেখান থেকে ) ইহরাম বেঁধে নেওয়া ভালো। মনে রাখতে হবে ইহরামের কাপড় যেন লাগেজে না যায়, ইহরামের কাপড় থাকবে হাত ব্যাগে। ইদানিং যেহেতু বিমানের শিডিউল ঠিক থাকে না, আবার অনেকের ফ্লাইটও বাতিল হয়ে যায়, তাই বাসায় ইহরাম না বাঁধাই ভাল। তবে ইহরামের কাপড় বয়ে নেয়ার চেয়ে ভালো হল, বাড়ি থেকেই ইহরামের কাপড় পরে নেওয়া। কিন্তু তখন ইহরাম বাঁধবে না। অর্থাৎ উমরা বা হজ্বের নিয়ত করে তালবিয়া পড়বে না। মনে রাখতে হবে, নিয়ত ও তালবিয়া পড়া ছাড়া শুধু ইহরামের কাপড় পরলে।ইহরাম বাঁধা হয় না। তেমনি মাথা না মুন্ডিয়ে শুধু ইহরামের কাপড় খুললে ইহরাম ভঙ্গ হয় না।
ইহরাম বাঁধার পদ্ধতি বা নিয়ম
যারা সরাসরি মক্কায় যাবে, তারা হজ্ব ক্যাম্প বা বিমানবন্দর গিয়ে ফ্লাইট নিশ্চিত হলে, ওয়েটিং রুমে বসে থাকার ফাঁকে বাথরুমে গিয়ে, উযূ করে দক্ষিণ পাশের নামায ঘরে গিয়ে, মাকরূহ ওয়াক্ত না হওয়ার শর্তে টুপি মাথায় দিয়ে বা মাথা ঢেকে সম্ভব হলে দুই রাকা'আত নামায পড়ে নিবে। ইহরামের উদ্দেশ্যে এই দুই রাকা'আত নামায পড়া মুস্তাহাব। প্রথম রাকা` আতে সূরা কাফিরুন ও দ্বিতীয় রাকা` আতে সূরা ইখলাস পড়া উত্তম। অন্য কোনো সূরা পড়লেও চলবে। মাকরূহ ওয়াক্ত হওয়া কিংবা অন্য কোনো কারণে এই নামায পড়তে না পরলেও কোনো সমস্যা নেই। এরপর মাথার টুপি খুলে ফেলবে। অত:পর বিমানে উঠে শান্ত হয়ে বসে উমরার নিয়ত করে তালবিয়া পড়লেই ইহরাম বাঁধা হয়ে যাবে। তামাত্তু হজ্বকারী যেহেতু প্রথমে উমরা করবে, তাই প্রথমবার ইহরাম বাঁধার সময় শুধু উমরার নিয়ত করবে।
ইহরামের নিয়ত
ইহরামের নিয়ত আরবীতে
اللهم إنى أريد العمرة / حجة فيسرها لي وتقبلها منى
অর্থ: “হে আল্লাহ! আমি আপনার সন্তুষ্টির জন্য উমরা বা হজের নিয়ত করছি। আমার জন্য তা সহজ করে দিন এবং আমার পক্ষ থেকে কবূল করে নিন।' নিয়ত আরবীতে করা জরুরী নয়।
তালবিয়া
নিয়তের পর তালবিয়া পড়বে। পুরুষগণ উচ্চ কন্ঠে পড়বে। যখনই তালবিয়া পড়বে তিনবার পড়া এবং তালবিয়ার চার বাক্য চার শ্বাসে পড়া মুস্তাহাব। (রদ্দুল মুহতার ৩/৪৯২ যাকারিয়া)
মহিলাদের ইহরাম বাধাঁর নিয়ম
ইহরামের প্রস্তুতির জন্য পুরুষরা যা যা করে মহিলারাও সেগুলো করবে। পার্থক্য শুধু এতটুকু যে, গোসলের পর মহিলারা নিজেদের স্বাভাবিক কাপড় তথা ঢিলেঢালা ফুল হাতার কামিজ ও সেলোয়ার পরবে। এরপর এমন বোরকা পরবে যা চেহারা আবৃত করে । কারণ, পরপুরুষের সামনে চেহারা খোলা রাখা হারাম। (যে-সব মহিলা চেহারা খোলা রাখবে এবং যে-সব পুরুষ ইচ্ছাকৃত তাদের দিকে তাকাবে, তাদের গুনাহ হবে। ফলে তাদের ‘হজ্বে মাবরূর’ নসীব হবে না।) কিন্তু খেয়াল রাখতে হবে মুখ ঢাকার জন্য যে নেকাব পরা হবে, তা যেন চেহারায় লেগে না থাকে। সেজন্য আমাদের দেশে- বাইতুল মুকাররমসহ আরো অনেক জায়গায় ক্যাপের মত একটা জিনিষ পাওয়া যায়, কিন্তু ক্যাপের সামনের অংশ যত লম্বা ততো লম্বা নয় বরং এক দেড় ইঞ্চির মত লম্বা হবে, দেখতে অনেকটা ২/৩ তারিখের চাঁদের মত সেটা পরে তার উপর দিয়ে নেকাব পরবে। তাহলে পর্দাও হয়ে যাবে আবার নেকাব চেহারার সাথে লেগেও থাকবে না। মহিলারা হজ্ব বা উমরার নিয়তের পরে তালবিয়া পুরুষদের মতই তিনবার পড়বে, তবে উচ্চ স্বরে নয়, নিম্ন স্বরে। মহিলারা হায়েয-নেফাস অবস্থায়ও ইহরাম বাঁধতে পারবে। তবে তখন পরিচ্ছন্নতা অর্জনের জন্য গোসল করা ভালো। (মানাসিকে মোল্লা আলী কারী পৃ.৯০) অনেকে মনে করে যে, ইহরাম অবস্থায় মেয়েদের চেহারা খোলা রাখতে হয়। এটা মারাত্মক ভুল। এক ফরয আদায় করতে গিয়ে আরেক ফরয তরক করার শামিল। তাই আমরা যেভাবে চেহারা ঢাকার কথা বলেছি সেভাবে ঢাকতে হবে। অন্যথায় গুনাহ হবে।
নাবালেগের ইহরাম
নাবালেগ বাচ্চা বুদ্ধিমান হলে নিজের ইহরাম নিজেই বাঁধবে এবং হজ্ব ও উমরার যাবতীয় কাজ নিজেই করবে। কোনো ওযর ছাড়া তার পক্ষ থেকে অন্য কেউ ইহরাম বাঁধলে বা তার হজ্বের কাজ অন্য কেউ করে দিলে সহীহ হবে না। নাবালেগ বাচ্চা যদি বুদ্ধিমান না হয় তাহলে তার পক্ষ থেকে তার অভিভাবক ইহরাম বাঁধবে। তার নিজের ইহরাম বাঁধা ধর্তব্য হবে না। তবে নাবালেগ বাচ্চা যদি ইহরাম বাঁধা ছাড়াই পিতা-মাতা বা অন্য কারো সাথে হজ্বের সফরে যায় তাহলেও তাতে কোনো গুনাহ হবে না। (রদ্দুল মুহতার ৩/৫৩৫-৩৬ রশীদিয়া)
বোবার ইহরাম
বোবা ব্যক্তির ইহরাম বাঁধার জন্য তালবিয়া পড়তে হবে না। তার জন্য হজ্বের নিয়তই ইহরাম বলে গণ্য হবে। (রদ্দুল মুহতার ২/১৮১-৮২ যাকারিয়া)
বেহুশ ব্যক্তির ইহরাম
হজ্ব বা উমরার সফরে বের হয়ে ইহরাম বাঁধার আগেই যদি কেউ বেহুশ হয়ে যায়, আর মীকাত অতিক্রম করার আগে হুশ ফেরার সম্ভাবনা দেখা না যায়, তাহলে তার সঙ্গীদের মধ্য থেকে কেউ নিজের ইহরাম বাঁধার সময় বা নিজের ইহরাম বাঁধার পরে ঐ বেহুশ সঙ্গীর পক্ষ থেকেও ইহরামের নিয়ত করে নিবে। এর দ্বারা তারও ইহরাম বাঁধা হয়ে যাবে। (রদ্দুল মুহতার ৩/৫৪৮-৪৯ যাকারিয়া)
ইহরাম নিয়ে কিছু কথা
অনেককে দেখা যায় ভুলে বা না বুঝে ইহরামের কাপড় বড় ব্যাগ বা লাগেজে দিয়ে দেয় যা বিমানের মাল ঘরে রাখা হয়। ইহরামের কাপড় সাথে না থাকায় তারা বিমানবন্দরে বা মীকাত অতিক্রম করার আগে ইহরাম বাঁধে না। ফলে তাদের উপর দম ওয়াজিব হয়ে যায়। তারা মনে করে ইহরামের কাপড় ছাড়া ইহরাম বাঁধা যায় না, অথচ ইহরাম সহীহ হওয়ার জন্য ইহরামের কাপড় পরিধান করা কোনো শর্ত নয়। অতএব যারা এধরনের সমস্যায় পড়বে, তারা সাধারণ কাপড় পরিহিত অবস্থায় বিমান মীকাত অতিক্রম করার ঘোষণা দেয়ার সময় উমরার নিয়ত করে তালবিয়া পড়ে নিবে। এর দ্বারাই ইহরাম হয়ে যাবে। কারণ মূলত নিয়ত করে তালবিয়া পড়ার নামই ইহরাম। তারপর জেদ্দা বিমানবন্দরে সামান হাতে পাওয়ার পর সাধারণ পোশাক খুলে ইহরামের লেবাস পরে নিবে। ইহরাম বাঁধার পর বার ঘণ্টার কম সময় সাধারণ কাপড়ে থাকলে দম ওয়াজিব হয় না (রদ্দুল মুহতার ৩/৫৭৭যাকারিয়া)
ঢাকা থেকে সরাসরি মক্কাগামী হাজীদের বিমান সাধারণত জিদ্দায় অবতরণের ২০- ২৫ মি. আগে মীকাত অতিক্রম করে থাকে। অনেক বিমানে ঘোষণাও করা হয় যে, বিমান আর দশমিনিট পর মীকাত অতিক্রম করবে। এটাই ইহরাম ছাড়া মীকাত।অতিক্রম করার দম থেকে বাঁচার শেষ সময়। তখনও যদি কেউ ইহরাম বেঁধে নেয় তাহলে তাকে দম দিতে হবে না।
Tag: এহরাম বাধার নিয়ম, ইহরাম বাঁধার স্থান, ইহরাম বাঁধার পদ্ধতি, মহিলাদের এহরাম, নাবালকের ইহরাম, বোবা ব্যক্তির ইহরাম, বেহুশ ব্যক্তির ইহরাম, Rules of Ihram