ঈদুল আযহার নামাজের নিয়ম এবং নিয়ত ও খুতবাহ | ঈদের নামায পড়ার নিয়ম | eid ul adha namaz er niom
![]() |
ঈদুল আযহার নামাজের নিয়ম এবং নিয়ত ও খুতবাহ | ঈদের নামায পড়ার নিয়ম |
ঈদের নামায বছরে পড়তে হয় বৎসরে মাত্র দুইবার, ফলে অনেকেই এর নিয়মকানুন একটু গুলিয়ে ফেলেন। ফলে নামাযের মধ্যেই এদিক সেদিক তাকা তাকি করেন অনেকেই। যার ফলে নামায ভেঙ্গে যাবে। অনেকেই কখন হাত বাঁধবেন, কখন হাত না বেঁধে ছেড়ে দেবেন এটা নিয়ে খুব চিন্তিত থাকেন, এমনকি অনেকে একবার ডানপাশের লোকেরটা অনুসরণ করেন আরেকবার বামপাশের লোকেরটা অনুসরণ করেন। অথচ বিষয়টা খুবই সহজ।
নামাযের শুরুতে আমরা যে তাকবির দেই (আল্লাহু আকবার বলি) তাকে তাকবিরে তাহরিমা বা প্রথম তাকবির বলা হয়। যে কোন নামাযে এই তাকবির দেওয়া ফরয। ঈদের নামযে এই তাকবির এবং অন্যান্য সাধারণ তাকবিরের সাথে অতিরিক্ত ৬টি তাকবির দিতে হয়।
ঈদের নামাজের নিয়ত | ঈদুল আযহা নামাযের নিয়ত
نَوَيْتُ أنْ أصَلِّي للهِ تَعَالىَ رَكْعَتَيْنِ صَلَاةِ الْعِيْدِ الْفِطْرِ مَعَ سِتِّ التَكْبِيْرَاتِ وَاجِبُ اللهِ تَعَالَى اِقْتَضَيْتُ بِهَذَا الْاِمَامِ مُتَوَجِّهًا اِلَى جِهَةِ الْكَعْبَةِ الشَّرِيْفَةِ اللهُ اَكْبَرْঈদের নিয়ত বাংলা উচ্চারণ
নাওয়াইতুআন উছাল্লিয়া লিল্লাহি তাআলা রাকআতাই ছালাতিল ঈদিল আযহা মাআ ছিত্তাতি তাকবিরাতি ওয়াজিবুল্লাহি তায়ালা মুতাওয়াজ্জিহান ইলা-জিহাতিল কা’বাতিশ শারীফাতি আল্লাহু আকবার।ঈদের নামাজের বাংলা নিয়ত | ঈদুল আযহা নামাজের বাংলা নিয়ত
আমি কেবলামুখী হয়ে আল্লাহর ওয়াস্তে ছয় তাকবীরের সাথে ঈদুল আযহার দু’ রাকআত ওয়াজিব নামায পড়তেছি আল্লাহু আকবার।বিঃদ্র আরবি ও বাংলা দুই ভাবেই নিয়ত করা যায়।
ঈদের নামাজ পড়ার নিয়ম | ঈদুল আযহা নামাজ পড়ার নিয়ম | ইদুল আযহা নামাজের নিয়ম সংক্ষিপ্তাকারে
প্রথম রাকাতে অতিরিক্ত ৩ তাকবির (ছানা পড়ার পর)দ্বিতীয় রাকাতে অতিরিক্ত ৩ তাকবির (সূরা ফাতিহা + অন্য সূরা পড়ার পর)
ঈদুল আযহার নামাজ যেভাবে আদায় করবেন?
১. যে তাকবিরের পরে সূরা/ছানা পড়তে হয় সেই তাকবিরের পর হাত বাঁধতে হয়।২. যে তাকবিরের পরে সূরা/ছানা পড়তে হয় না, সেই তাকবিরের পর হাত বাঁধতে হয় না।
এই দুইটা বিষয় মনে রাখলে হাত বাঁধা বা ছাড়া নিয়ে কোন সমস্যা আর থাকবে না। আসুন একটু বিস্তারিতভাবে দেখি:
১ম রাকাত ->
• তাকবিরে তাহরিমা (১ম তাকবির)।• হাত বাঁধা (কারণ এর পর ছানা পড়তে হবে)।
• ছানা পড়া।
• ১ম অতিরিক্ত তাকবির দেওয়া।
• হাত ছেড়ে দেওয়া।
• ২য় অতিরিক্ত তাকবির দেওয়া।
• হাত ছেড়ে দেওয়া।
• ৩য় অতিরিক্ত তাকবির দেওয়া।
• হাত বেঁধে ফেলা (কারণ এর পর সূরা পড়া হবে)।
• সূরা ফাতিহা + অন্য সূরা মিলানো।
• তাকবির দেওয়া।
• রুকু করা।
• রুকু থেকে দাঁড়ানো।
• সিজদায় যাওয়া।
• ২টি সিজদা করা।
• তাকবির দেওয়া (২য় রাকাতের জন্য)।
২য় রাকাত ->
• হাত বেঁধে দাঁড়ানো।• সূরা ফাতিহা + অন্য সূরা মিলানো।
• ৪র্থ অতিরিক্ত তাকবির দেওয়া।
• হাত ছেড়ে দেওয়া।
• ৫ম অতিরিক্ত তাকবির দেওয়া।
• হাত ছেড়ে দেওয়া।
• ৬ষ্ঠ অতিরিক্ত তাকবির দেওয়া।
• হাত না বাঁধা।
• রুকু করা।
• রুকু থেকে দাঁড়ানো।
• সিজদায় যাওয়া।
• ২টি সিজদা করা।
• শেষ বৈঠক + সালাম ফিরানো।
বিস্তারিতভাবে ঈদুল আযহা ছালাত আদায়ের পদ্ধতি / ঈদুল আযহার নামাজের নিয়ম
ঈদুল আযহার প্রথম রাকায়াত
কোনরূপ আযান-একামত ছাড়াই প্রথমে ক্বিবলামুখী দাঁড়িয়ে ‘আল্লাহু আকবর' বলে তাকবীরে তাহরীমা দিয়ে বাম হাতের উপরে ডান হাত বুকের উপরে বাঁধবে। অতঃপর ‘ছানা’ (দো‘আয়ে ইস্তেফতাহ) পড়বে। অতঃপর ‘আল্লাহু আকবর’ বলে ধীর-স্থিরভাবে দুই তাকবীরের মাঝে স্বল্প বিরতিসহ পরপর সাতটি তাকবীর দিবে। প্রতি তাকবীরে হাত কাঁধ পর্যন্ত উঠাবে, অতঃপর পূর্বের ন্যায় বুকে বাঁধবে। তাকবীর শেষ হ’লে প্রথম রাক'আতে আ'উযুবিল্লাহ ও বিসমিল্লাহ পূর্ণভাবে পড়ে ইমাম হ’লে সরবে সূরা ফাতিহা ও অন্য একটি সূরা পড়বে। মুক্তাদী হ'লে নীরবে কেবল সূরা ফাতিহা ইমামের পিছে পিছে।পড়বে ও ইমামের কিরাআত শুনবে। অতঃপর দ্বিতীয় রাক'আতে উঠে দাঁড়িয়ে পূর্বের নিয়মে ধীর-স্থিরভাবে দুই তাকবীরের মাঝে স্বল্প বিরতিসহ প্রথমে পরপর পাঁচটি তাকবীর দিবে। তারপর ‘বিসমিল্লাহ' পাঠ অন্তে সূরা ফাতিহা ও অন্য একটি সূরা পড়বে।
ঈদুল আযহার দ্বিতীয় রাকায়াত
দ্বিতীয় রাক'আতে ক্বিরাআতের শুরুতে ‘আঊযুবিল্লাহ’ পড়তে হয় না। কেবল ‘বিসমিল্লাহ’ পড়তে হয়। ঈদায়নের ছালাতে ১ম ও ২য় রাক'আতে যথাক্রমে সূরা আ'লা ও গাশিয়াহ অথবা সূরা ক্বাফ ও ক্বামার পড়া সুন্নাত (ঈদায়নের জন্য প্রথমে ছালাত ও পরে খুত্বা প্রদান করতে হয়। তার আগে পিছে কোন ছালাত নেই, আযান বা একামত নেই। ঈদগাহে বের হবার সময় উচ্চকণ্ঠে তাকবীর এবং পৌঁছার পরেও তাকবীর ধ্বনি ব্যতীত কাউকে জলদি আসার জন্য আহ্বান করাও ঠিক নয়। কোন কোন ঈদগাহে ইমাম পৌছে যাওয়ার পরেও ছালাতের পূর্বে বিভিন্নজনে বক্তৃতা করে থাকেন। এটা সুন্নাত বিরোধী কাজ ।
ঈদুল আযহার খুৎবাহ শোনার নিয়ম ও গুরুত্ব
ঈদায়নের ছালাতের পর খুৎবা দেওয়া ও তা মনোযোগ দিয়ে শ্রবণ করা সুন্নাত । ঈদায়নের খুৎবা একটি হওয়াই ছহীহ হাদীছ সম্মত । যেমনঃ عن أبي سعيد الخدري قال كان النبي صلى الله عليه و سلم يه الفطر والأضحى إلى المصلى فأول شيئ يبدأ به الصلاة ثم ينصرف فيقـوم مقابل الناس والناس جلوس على صفوفهم فيعظهم و يوصيهم ويأمرهم و إن كان يريد أن يقطع بعنا قطعه أو يأمر بشيئ أمر به ثم ينصرف، متفق عليه -
‘আবুসাঈদ খুদরী (রাঃ) হ'তে বর্ণিত তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) ঈদুল ফিত্র ও ঈদুল আযহার দিনে ঈদগাহের দিকে বের হ’তেন। (ঈদগাহে পৌছে) তিনি প্রথমে ছালাত আদায় করতেন। অতঃপর ছালাত শেষে মুছল্লীদের দিকে মুখ করে দাঁড়াতেন, মুছল্লীরা তখন নিজ নিজ কাতারে বসা থাকত। তিনি তাদেরকে উপদেশ দিতেন, নছীহত করতেন এবং নির্দেশ দিতেন। কোথাও সৈন্য প্রেরণের ইচ্ছা করলে বাছাই করতেন অথবা কোন বিষয়ে নির্দেশ দেওয়ার থাকলে নির্দেশ দিতেন। অতঃপর বাড়ীতে প্রত্যাবর্তন করতেন’ ।
মিশকাতে সংকলিত উপরোক্ত হাদীছ ও একই মর্মে ইবনু আব্বাস (রাঃ) বর্ণিত পরবর্তী হাদীছ (হা/১৪২৯) দ্বারা প্রমাণিত হয় যে, ঈদায়নের খুৎবা একটিই ছিল। মাঝখানে বসে দু’টি খুত্বা প্রদান সম্পর্কে ইবনু মাজাহ (হা/১২৮৯) ও বাযযারে কয়েকটি ‘যঈফ’ হাদীছ রয়েছে, যা ছহীহ হাদীছ সমূহের বিপরীতে গ্রহণযোগ্য নয়। ছাহেবে সুবুলুস সালাম ও ছাহেবে মির'আত বলেন, ‘প্রচলিত দুই খুৎবার নিয়মটি মূলতঃ জুম'আর দুই খুৎবার উপরে কিয়াস করেই চালু হয়েছে। এটি রাসূলের ‘আমল’ দ্বারা এবং কোন নির্ভরযোগ্য দলীল দ্বারা প্রমাণিত নয়'। খুৎবা শেষে বসে দু’হাত তুলে সকলকে নিয়ে দো‘আ করার রেওয়াজটিও হাদীছ সম্মত নয়। বরং এটিই প্রমাণিত যে, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) ঈদায়নের ছালাত শেষে দাঁড়িয়ে কেবলমাত্র একটি খুত্বা দিয়েছেন, যার মধ্যে আদেশ, নিষেধ, উপদেশ, তাকবীর, দো'আ সবই ছিল।
ইবনু মাজাহ কর্তৃক যঈফ সনদে রাসূলের মুওয়াযযিন সা'দ আল-কারায (রাঃ) বর্ণিত হাদীছে জানা যায় যে, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) ঈদায়নের খুৎবার মধ্যে বেশী বেশী তাকবীর ধ্বনি করতেন'। এ সময় মুছল্লীগণ ইমামের সাথে সাথে তাকবীর ধ্বনি করবেন'। এটি কুরআনী নির্দেশের অনুকূলে । কেননা ছিয়াম ফরয করার উদ্দেশ্য বর্ণনায় আল্লাহ বলেন, । লাঁচ এক ঊর্ভ না এটা এজন্য যে, তোমরা আল্লাহর বড়ত্ব ঘোষণা করবে একারণে যে, তিনি তোমাদেরকে সুপথ প্রদর্শন করেছেন' (বাক্বারাহ ২/১৮৫)।
অনেক মুছল্লী খুৎবার সময় অন্যদিকে মনোযোগ দেন, অনেকে চলে যান, অনেক ঈদগাহে খুৎবার সময় পয়সা তোলা হয়, এগুলি খুত্বা অবমাননার শামিল। কেননা খুৎবার সময় অন্য কাজে লিপ্ত হওয়া, পরষ্পরে কথা বলা, এমনকি অন্যকে ‘চুপ কর’ একথা বলাও নিষেধ।১০৯ সবচেয়ে বড় কথা, ঐ ব্যক্তি খুৎবা শোনার ছওয়াব ও বরকত থেকে মাহরূম হয় এবং সুন্নাত তরক করার জন্য গোনাহগার হয়।
Tag:ঈদুল আযহার নামাজের নিয়ম, পবিত্র ঈদুল আযহার নামাজের নিয়ম, ঈদুল আযহার নামাজের নিয়ত ও নিয়ম, ঈদুল আযহার নামাজের নিয়ত আরবিতে, ঈদুল আযহা নামাজ নিয়ম ঈদের, ঈদুল আযহার নামাজের নিয়ম কানুন, ঈদুল আযহার নামাজ নিয়ম কিভাবে পড়তে হয়, ঈদুল আযহার নামাজ নিয়ম কিভাবে পড়বো, ঈদুল আযহার নামাজ নিয়ম কিভাবে পড়ে, ঈদুল আযহার নামাজ নিয়ম কয় রাকাত, ঈদুল আযহার নামাজ পড়ার নিয়ম, ঈদুল আযহা নামাজের নিয়ম ফজিলত, ঈদুল আযহার নামাজের বাংলা নিয়ত, ঈদুল আযহার নামাজ নিয়ম, eid ul adha namaz er niom