ইমাম তাহাবীর জীবনী, ইমাম তাহাবী জীবনী- ইমাম তাহাবী এর জীবনী, ইমাম আবু জাফর আত তাহাবী এর জীবনী- ইমাম তাহাবী জীবন ও কর্ম  | biography imam tahawi

আসসালামু আলাইকুম! সবাই কেমন আছেন? আশা করি, আল্লাহর রহমতে ভাল আছেন। প্রিয় পাঠক-পাঠিকা! ইমাম আবূ জা'ফর তাহাবী (র) তৃতীয় শতকের অন্যতম শ্রেষ্ঠ হাদীস বিশারদ, অত্যন্ত উঁচু মর্যাদা সম্পন্ন ফকীহ (ইসলামী আইনজ্ঞ) এবং বিশেষজ্ঞ আলিমে দ্বীন হিসাবে খ্যাতির শীর্ষে ছিলেন মুহাদ্দিস ও ফকীহদের ভাবাকাতে (ওরে) তাঁকে সমানভাবে গণ্য করা হত। পূর্ববর্তী মনীষীদের মাঝে তাঁর ন্যায় বহুদর্শী, দক্ষ ও প্রতিভাবান আলিমের দৃষ্টান্ত খুব কমই ছিল। যিনি হাদীস ও ফিকাহ শাস্ত্রে প্রামাণিক পর্যায়ে অধিষ্ঠিত ছিলেন। হাদীস বিশেষজ্ঞগণ তাঁকে হাফিয ও ইমাম আর ফকীহগণ তাঁকে মুজতাহিদ আলিম হিসাবে আখ্যায়িত করেছেন।

ইমাম তাহাবীর জীবনী, ইমাম তাহাবী জীবনী- ইমাম তাহাবী এর জীবনী, ইমাম আবু জাফর আত তাহাবী এর জীবনী- ইমাম তাহাবী জীবন ও কর্ম  | biography imam tahawi

ইমাম তাহাবীর জীবনী, ইমাম তাহাবী জীবনী- ইমাম তাহাবী এর জীবনী, ইমাম আবু জাফর আত তাহাবী এর জীবনী- ইমাম তাহাবী জীবন ও কর্ম  | biography imam tahawi

ইমাম তাহাবী (র)-এর জীবনী

ইমাম তাহাবী (র)-এর জন্ম ও বংশ

ইমাম তাহাবী (র)-এর পূর্ণ নাম ইমাম হাফিয আবূ জাফর আহমদ ইবন মুহাম্মদ ইবন সালামা ইবন আবদুল মালিক ইবন সালমা ইবন সুলাইম ইব্‌ন খাব্বাব আয়ূদী হাজারী মিসরী আত-তাহাৰী আল-হানাফী। তিনি বর্তমান মিসরের 'তাহা' নামক প্রাচীন গ্রামে ২৩৮ হিজরীর ১২/১০ রবিউল আওয়াল রবিবার জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পূর্বপুরুষগণ ইয়ামানের সুপ্রসিদ্ধ আত্দ এবং এর শাখা হাজার গোত্রভুক্ত ছিলেন। পরবর্তীতে মিসর বিজয়ের পর তারা মিসরে এসে বসবাস শুরু করেন। যেহেতু তাঁর পূর্বপুরুষগণ ইয়ামানের আদ ও হাজার গোত্রের অধিবাসী ছিলেন, এজন্য ইমাম তাহাবী (র)-কে আদী ও হাজারী বলা হয়। আর যেহেতু মিসরের 'তাহা' নামক প্রাচীন পল্লীতে তাঁর জন্ম এজন্য তাঁকে মিসরী ও তাহাবী বলা হয়।
আরো দেখুন: শেখ সাদীর জীবনী 

ইমাম তাহাবী (র)-এর প্রাথমিক শিক্ষা

ইমাম তাহাবী (র) প্রাথমিক শিক্ষা স্বীয় মামা ইমাম আবু ইবরাহীম মুযানী শাফিঈ (র) থেকে লাভ করেন এবং তিনি তাঁর নিকট থেকে শাফিঈ ফিকাহও লাভ করেছেন। প্রথমত তিনি ইমাম মুযানী (র) থেকে শিক্ষা লাভ করে তাঁরই মাযহাব 'শাফিঈ মাযহাব' গ্রহণ করে নিয়েছিলেন। পরবর্তীতে যখন ইমাম আহমদ ইবন আবী ইমরান হানাফী (র) মিসরের কাব্জী (বিচারক) হিসাবে আগমন করেন তখন তিনি মামার দারস ও মায্হাব পরিত্যাগ করে ইমাম আহমদ ইবন আবী ইমরান হানাফী (র)-এর দারস ও মাযহাব তথা হানাফী মাযহাব গ্রহণ করেন।

ইমাম তাহাবী (র)-এর হানাফী মাযহাৰ গ্রহণ করার কারণ

বস্তুত এ বিষয়ে দু'টি বক্তব্য পাওয়া যায় :
১. আল্লামা মুহাম্মদ ইবন আহমদ সুয়ূতী (র) স্বয়ং ইমাম তাহাবী (র)-কে মাযহাব পরিবর্তনের কারণ জিজ্ঞাসা করেছেন। তিনি উত্তরে বলেছেন যে, আমার মামা ইমাম মুযানী (র) হানাফী মাযহাবের গ্রন্থসমূহ অধিক অধ্যয়ন করতেন। তাই আমিও হানাফী গ্রন্থসমূহ অধিকভাবে অন্যয়ন করা শুরু করে দেই। আমার কাছে শাফিঈ দলীল-প্রমাণ অপেক্ষা হানাফী দলীল-প্রমাণ অত্যন্ত মঘৃবৃত, অকাট্য ও তাত্ত্বিক মনে হয়। এই জন্য আমি শাফিঈ মাযহাব পরিত্যাগ করে হানাফী মাযহাব গ্রহণ করি।

২. দ্বিতীয় যে কারণটি সাধারণত শাফিঈ লিখকগণ বর্ণনা করেছেন, যেটিতে বাস্তবতাকে উপেক্ষা করা হয়েছে। যেমন আল্লামা যাহাবী (র) তাকিরাতুল হুফ্ফায গ্রন্থে লিখেছেনঃ وكان أولا شافعيا يقرء على المزني فقال له يوما والله ماجاء منكم شيء فغضب من ذلك وانتقل إلى أبي عمران - অর্থাৎ প্রথম দিকে ইমাম তাহাবী (র) শাফিঈ মাযহাবের অনুসারী ছিলেন। একটি ক্লাশে তাঁর উপর তাঁর মামা অন্তুষ্ট হয়ে বললেন ঃ “আল্লাহর কসম। তোমার দ্বারা কিছুই হবে না।” এতে ইমাম তাহাবী (র) অসন্তুষ্ট হয়ে আবূ ইমরান হানাফী (র)-এর দারসে গিয়ে যোগ দিলেন। মাযহাব পরিবর্তনের আরেকটি কারণ আল্লামা আবদুল আযীহ হারুবী (র) উল্লেখ করেছেনঃ أن الطحاوي كان شافعي المذهب فقره في كتابه أن الحاملة اذا ماتت وفي بطنها ولد حتى لم يشق في بطنها خلافا لابي حنيفة وكان المجاري ولد مشقوقا فقال لاارضى بمذهب رجل يرضى بهلاکی فترك مذهب الشافعي وصار من عظماء المجتهدين على مذهب أبي حنيفة - অর্থাৎ ইমাম তাহাবী (র) প্রথম দিকে শাফিঈ মাযহাবের অনুসারী ছিলেন। এক দিন তিনি শাফিঈ ফিকাহ্-এর গ্রন্থে পড়লেন যে, যখন অন্তঃসত্ত্বা নারী মৃত্যুবরণ করে এবং তার পেটে বাচ্চা যদি জীবিত থাকে তাহলে তার পেট বিদীর্ণ করা যাবে না। কিন্তু আবূ হানীফা (র)-এর মাযহাব-এর ব্যতিক্রম (বিদীর্ণ করা যাবে)। বস্তুত ইমাম তাহাবী (র)-কে হানাফী মাযহাব মর্তে পেট বিদীর্ণ করে বের করা হয়েছিল। ইমাম তাহাবী (র)- এটা পড়ে বললেন আমি সেই ব্যক্তির মাযহাবের প্রতি সন্তুষ্ট নই, যে কি-না আমার ধ্বংসের উপর সন্তুষ্ট হয়। এরপর তিনি শাফিঈ মাযহাব ছেড়ে হানাফী মাযহাব গ্রহণ করেছেন এবং এই মাযহাবের একজন মুজতাহিদ আলিম হিসাবে খ্যাতি লাভ করেছেন।

মাওলানা ফকীর মুহাম্মদ যাহলামী এই ঘটনাটি বিস্তারিত বর্ণনা করেছেন এইভাবে ? ফতোয়া বারহানায় ইমাম তাহাবী (র)-এর মাযহাব পরিবর্তনের কারণ লেখা হয়েছে এটি যে, তিনি একদিন স্বীয় মামার নিকট পড়ছিলেন। ক্লাশে এই নিম্নোক্ত মাসআলাটি এলো : যদি কোন অন্তঃসত্ত্বা নারী মারা যায় আর তার পেটে বাচ্চা জীবিত থাকে তাহলে ইমাম শাফিঈ (র)-এর মতে উক্ত নারীর পেট বিদীর্ণ করে বাচ্চা বের করা জায়িয নেই। কিন্তু হানাফী মাযহাব-এর ব্যতিক্রম। তিনি এটা পড়তেই দাঁড়িয়ে বললেন, আমি সেই ব্যক্তির অনুসরণ কখনো করব না, যে কিনা আমার ন্যায় ব্যক্তির ধ্বংসের পরোয়া করবে না। কেননা তিনি তাঁর মায়ের পেটে থাকা অবস্থায়-ই তাঁর মা মারা গিয়েছেন এবং তাঁর পেট বিদীর্ণ করে বের করা হয়েছে। এই অবস্থা অবলোকন করে তাঁর মামা তাঁকে বললেন, আল্লাহর কসম। “ভূমি কম্বিনকালেও ফকীহ্ হবে না। পরবর্তীতে তিনি যখন আল্লাহর অনুগ্রহে হাদীস ও ফিকাহ্ শাস্ত্রে সমানভাবে দক্ষতা অর্জন করে ইমাম ও মুজতাহিদের ন্যায় সর্বোচ্চ আসনে অধিষ্ঠিত হন তখন প্রায়ই বলতেন, আমার মামাকে আল্লাহ্ রহমত করুন! যদি তিনি আজ জীবিত থাকতেন তাহলে স্বীয় শাফিঈ মাযহাব মতে অবশ্যই নিজের কসমের কাফ্ফারা আদায় করতেন।

হাদীস শিক্ষায় ইমাম তাহাবী (র)-এর সফর

ইমাম তাহাবী (র) তৎকালের মুসলিম জাহানের প্রখ্যাত হাদীস কেন্দ্রসমূহ সফর করে হাদীস শ্রবণ ও সংগ্রহ করেছেন। মিসর, ইয়ামান, হিজায, শাম, খোরাসান, কৃষ্ণা, বসরা, রায় ও ইরাকে -হানীস সংগ্রহের জন্য বছরের পর বছর পরিভ্রমণ করেছেন।

ইমাম তাহাবী (র)-এর ওফাত

ইমাম তাহাবী (র) বিরাশি বছর বয়সে ৩২১ হিজরীর ৩০ শাওয়াল বৃহস্পতিবার রাতে মিসরে ইতিকাল করেন। এ ব্যাপারে আল্লামা সামআনী (র), আল্লামা ইবন কাসীর (র), আল্লামা ইবন খলকান, আল্লামা ইন হাজার আসকালানী (র), আল্লামা সুয়ূতী (র) ও আল্লামা হামুখী (র) প্রমুখ ঐকমত্য পোষণ করেছেন।


Tag: ইমাম তাহাবীর জীবনী, ইমাম তাহাবী জীবনী, ইমাম তাহাবী এর জীবনী, ইমাম আবু জাফর আত তাহাবী এর জীবনী,ইমাম তাহাবী জীবন ও কর্ম, biography imam tahawi

Next Post Previous Post