ইহরাম অবস্থায় কোন কাজটি হারাম, মুহরিমের জন্য নিষিদ্ধ কাজ সমূহ | ইহরাম অবস্থায় নিষিদ্ধ কাজ

আসসালামু আলাইকুম! সবাই কেমন আছেন? আশা করি, আল্লাহর রহমতে ভাল আছেন। হজের অন্যতম ফরজ হলো ইহরাম বাঁধা। সুতরাং ইহরাম অবস্থায় নিষিদ্ধ কাজ, ইহরাম অবস্থায় যেসব কাজ করতে পারবেন এবং ইহরাম অবস্থায় যেসব কাজ করতে পারবেন না। সুতরাং ইহরাম অবস্থায় কোন কাজটি হারাম সে সম্পর্কে আজকে আমরা আপনাকে জানাবো। ইনশাআল্লাহ। দয়া করে পুরো পোস্ট পড়ার অনুরোধ রইলো।

ইহরাম অবস্থায় নিষিদ্ধ কাজ | ইহরাম অবস্থায় কোন কাজটি হারাম, মুহরিমের জন্য নিষিদ্ধ কাজ সমূহ

ইহরাম অবস্থায় নিষিদ্ধ কাজ | ইহরাম অবস্থায় কোন কাজটি হারাম, মুহরিমের জন্য নিষিদ্ধ কাজ সমূহ


ইহরাম বাঁধার পর দু’টি কাজ

১.বেশি বেশি তালবিয়া পড়া। 

যে কোনো স্থান ও অবস্থার পরিবর্তনে তালবিয়া পড়া সুন্নাত। যেমন: ঘরে-বাইরে, পথেঘাটে, বাসে, বিমানে, এমনিভাবে প্রত্যেক নামাযের পরে, উপরে উঠার সময়, নিচে নামার সময়, ঘুমানোর আগে ও পরে। মোটকথা সব জায়গায় তালবিয়া পড়তে থাকা, এমনকি কারো সাথে সাক্ষাৎ হলে আগে তালবিয়া পড়া তারপর সালাম দেওয়া। (রদ্দুল মুহতার ৩/৪৯২) 
★প্রত্যেকে আলাদা আলাদাভাবে তালবিয়া পড়বে। মুআল্লিম বা অন্য কারো সাথে তাল মিলিয়ে পড়বে না। রদ্দুল মুহতার ৩/৫০২ 
★ যখনই তালবিয়া পড়া হবে এক সাথে তিনবার পড়া মুস্তাহাব। মানাসিক১০২-৩

২. ইহরাম অবস্থায় নিষিদ্ধ কাজসমূহ থেকে বেঁচে থাকা। 

ইহরাম অবস্থায় নিষিদ্ধ কাজের বর্ণনা : নিষিদ্ধ কাজসমূহ কয়েক ভাগে বিভক্ত। যেমনঃ
১. আল্লাহর হুকুমের সাথে সম্পৃক্ত। যেমন : কোনো প্রকারের গুনাহ করা।
২. শরীর ও কাপড়ের সাথে সম্পৃক্ত। যেমন : ক. পুরুষদের জন্য মাথা, চেহারা, পায়ের পাতা ঢেকে রাখা। তাই এমন জুতা পরতে পারবে না যা দ্বারা পায়ের পাতা ঢেকে যায়। মহিলারা মাথা, চেহারা ঢেকে রাখবে কিন্তু নেকাব যাতে চেহারায় লেগে না থাকে সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। খ. চুল, মোচ, নখ ইত্যাদি কাটা। গ. গোসলের সময় ইচ্ছাকৃত শরীরের ময়লা পরিষ্কার করা। ঘ. কাপড় বা শরীরে কোনো প্রকার সুগন্ধি ব্যবহার করা, তাই আতর, সেন্ট, সুগন্ধিযুক্ত তেল, সাবান, সোনো, পাউডার ইত্যাদি কোনো কিছুই ব্যবহার করা যাবে না। এমনকি পানের
সাথে সুগন্ধি জর্দা খাওয়াও মাকরূহ। মেহেদিও খোশবুর অন্তর্ভুক্ত তাই পুরুষ-মহিলা কেউই মেহেদি ব্যবহার করতে পারবে না। ঙ. পুরুষদের জন্য শরীরের যে কোনো অঙ্গের গঠনে সেলাই করা কাপড় পরা যথা : পাঞ্জাবি, সেলোয়ার, জোব্বা, শার্ট, গেঞ্জি, সোয়েটার, কোর্ট, জাঙ্গিয়া, মোজা ইত্যাদি। (মানাসিকে মোল্লা আলী কারী পৃ.১১৭) উল্লেখ্য, যদিও সেলাইবিহীন লুঙ্গি পরা উত্তম কিন্তু সেলাই করা লুঙ্গি পরাও জায়িয আছে। বিশেষত এমন বয়োবৃদ্ধ হাজী যার সতর খুলে যাওয়ার বেশ আশংকা আছে, তার জন্য সেলাই করা লুঙ্গি পরাই উত্তম। (আদ্দুররুল মুখতার ২/৪৮৯, আহকামে হজ্ব পৃ. ৩৪)
৩. স্ত্রীর সাথে সম্পৃক্ত। যেমন : স্ত্রীর সাথে যৌন-উত্তেজক কোনো কথাবার্তা বলা। স্ত্রীর সাথে অন্তরঙ্গ মুহূর্তের কোনো কাজ করা। তবে স্ত্রীর পাশে বসা বা চলাচলের সময় স্ত্রীর হাত ধরতে কোনো সমস্যা নেই। কিন্তু স্ত্রীর সাথে একই বিছানায় শোয়া বা ঘুমানো উচিত নয়। (মানাসিক পৃ. ১১৯)
৪. সাথীদের সাথে সম্পৃক্ত। যেমন : সাথীর সাথে কিংবা অন্য যে কোনো মানুষের সাথে ঝগড়া করা। কারো কোনো জিনিষ না বলে নেওয়া। (হজ্বের সফরে যথাসম্ভব অন্যকে নিজের উপর প্রধান্য দেওয়ার চেষ্টা করা।) (মানাসিক পৃ.১১৭) উল্লেখ্য, কোনো পতিত জিনিষ ধরবে না। পতিত জিনিষ ধরলে বা উঠালে চোর সাব্যস্ত হয়ে জেলে যাওয়ার আশংকা রয়েছে। তবে হ্যাঁ, পতিত জিনিষের মালিককে বলা যেতে পারে যে, আপনার সামান উঠিয়ে নেবে।
৫. প্রাণীর সাথে সম্পৃক্ত। যেমন : বন্য পশু শিকার করা বা কোনো শিকারীকে সাহায্য করা। উকুন মারা এবং মারতে সাহায্য করা । (মানাসিক পৃ. ১১৯)


ইহরাম বাঁধার পর হতে ইহরাম খোলা পর্যন্ত নিম্নে বর্ণিত কাজ গুলো নিষিদ্ধ এ ব্যাপারে খুবই সতর্ক থাকতে হবে।

১। ক্ষৌর কার্য করা। 
২। নখ কাটা বা ছিড়ে ফেলা।
৩। মাথায় ও দাঁড়িতে এমনভাবে হাত বুলানো যাতে চুল পড়ে যায়। অতএব, ওযু গোসলের সময় ও সাবধান থাকতে হবে।
৪। স্ত্রী সঙ্গে থাকলে তার সাথে মিলন বা এ সম্পৰ্কীয় আলোচনা।
৫ । গোসলে বা কাপড় কাচায় সুগন্ধি যুক্ত সাবান ব্যবহার করা।
৬ । স্থলজ প্রাণি শিকার করা বা অন্যের শিকারে কোন রূপ সাহায্য করা।
৭। ঝগড়া বিবাদ এমনিতেও নিষিদ্ধ ংঃ ইহরামের অবস্থায় কাঠোরভাবে নিষিদ্ধ।
আরো দেখুন: হহজের ফরজসমুহ

ইহরাম অবস্থায় যে সব বিষয় থেকে বেঁচে থাকা উচিৎ  বা প্রয়োজন 

১। সেলাইযুক্ত কাপড় যা শরীরের পরিমাপে বানানো হয়েছে। যেমন- কোর্তা, পায়জামা, টুপি, গেঞ্জি, মোজা, আচকান, দস্তানা ইত্যাদি ইহরাম অবস্থায় পরা নিষিদ্ধ। কাপড়ে কেবল সেলাই থাকলেই নিষিদ্ধ নয়।
সেলাইকৃত কাড়া লুঙ্গি বা চাদর নিষিদ্ধ নয়। লেপ, কম্বল, কাঁথা নিষিদ্ধ নয়। টাকা রাখার থলি অথবা বেল্ট কোমরে রাখায় কোন দোষ নেই ।
২। ঘুমন্ত অথবা জাগ্রত অবস্থায় ইচ্ছাকৃত অথবা অনিচ্ছাকৃত সর্বাবস্থায় মাথা কিংবা চেহারা ঢাকা নিষিদ্ধ।
৩। এমন জুতা পরিধান করা নিষেধ যাহা পায়ের মধ্যবর্তী উঁচু হাড় ঢাকা পড়ে যায় ।
৪। সর্বপ্রকার সুগন্ধি এমনকি যে বস্তুতে সুগন্ধ রয়েছে তাও নিষেধ। সুগন্ধিযুক্ত কোন বস্তু যদি খাদ্যে দেয়া হয় তাকে সেটা খাওয়া জায়েজ।
৫ । সুগন্ধিযুক্ত জর্দা খাওয়া নিষেধ।
৬। সিগারেট বা ধুমপান এমনিতে মন্দ অভ্যাস, স্বাস্থ্যের জন্যও বিশেষ ক্ষতিকর বলে ডাক্তারগণ একমত। তদুপরি এতে সুগন্ধ থাকার কারণে ইহরাম অবস্থায় ধুমপান থেকে বিরত থাকা উচিৎ।


ইহরাম অবস্থায় যে সব কাজ করা যায় 

* ইহরাম অবস্থায় মাথা ও মুখ ব্যতীত সম্পূর্ণ শরীর কাঁথা, কম্বল, চাদর ইত্যাদি দিয়ে ঢাকা। মাথা ও গাল বালিশে রেখে শোয়া। তবে সম্পূর্ণ চেহারা বালিশে রেখে উপুড় হয়ে শোয়া যাবে না। (মানাসিক পৃ.১২৩)
* ইহরাম অবস্থায় ইহরামের কাপড় ময়লা বা নাপাক না হলেও পরিবর্তন করা। অনেকে মনে করে ইহরামের চাদর খুললেই ইহরাম খুলে যায়। একথা ঠিক নয়। হলক বা তাকসীর তথা চুল মুন্ডানো বা ছোট করার আগ পর্যন্ত ইহরাম খুলবে না। (মানাসিক পৃ.৯৮)
* ইহরামের কাপড় ছিঁড়ে গেলে সেলাই করে পরা। (মানাসিক পৃ. ৯৮)
* সুগন্ধিযুক্ত সাবান ব্যবহার না করে গোসল করা । তবে ইচ্ছাকৃত শরীরের ময়লা উঠানো যাবে না। (মানাসিক পৃ. ১২০)
* সুঘ্রাণযুক্ত ফল-মুল খাওয়া যাবে। তবে ইচ্ছাকৃত ফল বা ফুলের ঘ্রাণ নিবে না। (মানাসিক পৃ. ১২১,১২৪)
ঘ্রাণমুক্ত লিপজেল, ভ্যাসলিন ঠেকাবশত ব্যবহার করা। (কিতাবুল মাসাইল ৩/১৬২)
* সেলাইযুক্ত বেল্ট, ব্যাগ ইত্যাদি ব্যবহার করা। (মানাসিক পৃ.১২২)
* মাথা ও চেহারা না ঢাকার শর্তে কান ঢাকা। (বর্তমানে কান ঢাকার জন্য ইয়ারফোন আকৃতির যে বস্তু পাওয়া যাচ্ছে তা ইহরাম অবস্থায় ব্যবহার করা যাবে।) (কিতাবুল মাসাইল ৩/১৩৮)
* ইহরাম অবস্থায় গৃহপালিত পশু যেমন : হাঁস-মুরগি, গরু-ছাগল ইত্যাদি জবাই করা এবং মাছ শিকার করা। (মানাসিক পৃ.১১৯)
* ইহরাম অবস্থায় মশা-মাছি, সাপ-বিচ্ছু, পিঁপড়া,
পোকা-মাকড়, হিংস্র জানোয়ার মারা। পিঁপড়া কষ্টদায়ক না হলে মারা যাবে না। (মানাসিক পৃ ১২৫, ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/২৫২)
* দাঁত উঠানো। ফোঁড়া, বিচি ইত্যাদি গালা, ভাঙ্গা নখ কেটে ফেলা, ব্রাশ করাও যাবে তবে সুগন্ধি পেস্ট ব্যাবহার করা যাবে না। (মানাসিক পৃ.১২২)
* ইহরাম অবস্থায় চশমা, ঘড়ি, আংটি, মাফলার ব্যবহার করতে কোনো অসুবিধা নেই। (আদ্দুররুল মুখতার ২/৪৮৯)

আরো দেখুন: হজের মাসআলা প্রব-১

মহিলাদের বিশেষ কিছু মাসাইল 

* মহিলারা পায়ের পাতা ঢেকে ফেলে, এমন জুতা, হাত ও পায়ের মোজা, জাঙ্গিয়া- পেন্টি ইত্যাদি পরতে পারবে। মানাসিক পৃ. ১১৫
* মাসিক বা সন্তান প্রসবোত্তর স্রাব চলাকালীনও ইহরাম বাঁধতে পারবে। তাওয়াফ, নামায, কুরআন তিলাওয়াত ও মসজিদে প্রবেশ ব্যতীত ঐ অবস্থায় হজ্বের অন্যান্য সব কাজই করতে পারবে। মানাসিক পৃ.৯০
* স্বর্ণ ও অন্যান্য অলংকার পরতে পারবে। তবে ইহরাম অবস্থায় অলংকার না পরাই ভালো। মানাসিক পৃ.১১৬
* ইহরাম অবস্থায় চুলে তেল দেওয়া, সিঁথি করা নিষেধ। চুল বেঁধে রাখতে পারবে। তবে চুল না আঁচড়ানোর কারণে যদি খুব বেশি সমস্যা হয়, চুলে জট লেগে যাওয়ার উপক্রম হয়, তাহলে সাজসজ্জার নিয়ত ছাড়া প্রয়োজন অনুযায়ী বড় দাঁতের চিরুনি দ্বারা চুল আঁচড়ানো যাবে। মানাসিক পৃ.১২৪, গুনইয়াতুন নাসিক পৃ. ৮৯-৯০
* কালো বোরকা ব্যবহার করতে পারবে। অনেকে সাদা বোরকা ব্যবহার জরুরী মনে করে। এধারণা মোটেও ঠিক নয়। মানাসিক পৃ.১১৫
* মেহেদি, লিপস্টিক ঘ্রাণমুক্ত হলেও ব্যবহার করা যাবে না। গুনইয়াতুন নাসিক পৃ.৯০

*মক্কায় অবস্থানকালে মহিলারা হজ্বের ইহরাম বাসাতেই বাঁধবে। মহিলাদের ইহরামের জন্য মসজিদে হারামে যাওয়ার প্রয়োজন নেই। মানাসিক পৃ. ১১৫

*চুল ধোয়ার জন্য সুগন্ধি শ্যাম্পু ব্যাবহার করা যাবে না। বর্তমান বাজারের সব শ্যাম্পুই সুগন্ধিযুক্ত তাই ইহরাম অবস্থায় শ্যাম্পু ব্যবহার থেকে বিরত থাকতে হবে। কিতাবুল মাসাইল ৩/১৬৩

Tag: ইহরাম অবস্থায় কোন কাজটি হারাম, মুহরিমের জন্য নিষিদ্ধ কাজ সমূহ, ইহরাম অবস্থায় নিষিদ্ধ কাজ

Next Post Previous Post