ইতিকাফের/এতেকাফের/ইতেকাফের ফজিলত | ইতিকাফের/এতেকাফের/ইতেকাফের বিধান |  ইতিকাফের/এতেকাফের/ইতেকাফের নিয়ম |  ইতিকাফের/এতেকাফের/ইতেকাফের নিয়ত |  ইতিকাফের/এতেকাফের/ইতেকাফের হুকুম |  ইতিকাফের/এতেকাফের/ইতেকাফের সময়সীমা | ইতিকাফের/এতেকাফের ইতেকাফের মাসআলা | ইতিকাফের/এতেকাফের/ইতেকাফের দোয়া |  ইতিকাফের/এতেকাফের/ইতেকাফ অবস্থায় মোবাইল ব্যবহার করা যাবে কিনা |  ইতিকাফের/এতেকাফের/ইতেকাফের আমল | ইতিকাফের/এতেকাফের/ইতেকাফের আয়াত | ইতিকাফের/এতেকাফের/ইতেকাফ ভঙ্গের কারণ | ইতিকাফের/এতেকাফের/ইতেকাফের গুরুত্ব ও ফজিলত | itikaf 2022 | itikaf rules in bangla | benefits of itikaf

ইতিকাফের/এতেকাফের/ইতেকাফের ফজিলত | ইতিকাফের/এতেকাফের/ইতেকাফের বিধান | 
ইতিকাফের/এতেকাফের/ইতেকাফের নিয়ম | 
ইতিকাফের/এতেকাফের/ইতেকাফের নিয়ত | 
ইতিকাফের/এতেকাফের/ইতেকাফের হুকুম | 
ইতিকাফের/এতেকাফের/ইতেকাফের সময়সীমা | ইতিকাফের/এতেকাফের ইতেকাফের মাসআলা | ইতিকাফের/এতেকাফের/ইতেকাফের দোয়া |  ইতিকাফের/এতেকাফের/ইতেকাফ অবস্থায় মোবাইল ব্যবহার করা যাবে কিনা |  ইতিকাফের/এতেকাফের/ইতেকাফের আমল | ইতিকাফের/এতেকাফের/ইতেকাফের আয়াত | ইতিকাফের/এতেকাফের/ইতেকাফ ভঙ্গের কারণ | ইতিকাফের/এতেকাফের/ইতেকাফের গুরুত্ব ও ফজিলত | itikaf 2022 | itikaf rules in bangla | benefits of itikaf

ইতিকাফের/এতেকাফের/ইতেকাফের ফজিলত | ইতিকাফের/এতেকাফের/ইতেকাফের বিধান |   ইতিকাফের/এতেকাফের/ইতেকাফের নিয়ম |   ইতিকাফের/এতেকাফের/ইতেকাফের নিয়ত |   ইতিকাফের/এতেকাফের/ইতেকাফের হুকুম |   ইতিকাফের/এতেকাফের/ইতেকাফের সময়সীমা | ইতিকাফের/এতেকাফের ইতেকাফের মাসআলা | ইতিকাফের/এতেকাফের/ইতেকাফের দোয়া |  ইতিকাফের/এতেকাফের/ইতেকাফ অবস্থায় মোবাইল ব্যবহার করা যাবে কিনা |  ইতিকাফের/এতেকাফের/ইতেকাফের আমল | ইতিকাফের/এতেকাফের/ইতেকাফের আয়াত | ইতিকাফের/এতেকাফের/ইতেকাফ ভঙ্গের কারণ | ইতিকাফের/এতেকাফের/ইতেকাফের গুরুত্ব ও ফজিলত | itikaf 2022 | itikaf rules in bangla | benefits of itikaf

ইতিকাফের/এতেকাফের/ইতেকাফের ফজিলত ও জরুরি বিধি-বিধান /নিয়ম / নিয়ত / সময়সীমা / মাসয়েল / করনীয় /বর্জনীয় / হুকুম / শর্ত / প্রকার 


আরবি ‘ইতিকাফ’ শব্দের অর্থ অবস্থান করা, বসা, বিশ্রাম করা, সাধনা করা, ধ্যান করা ইত্যাদি। রমজানের ২১তম রাত হতে ২৯তম রাত পর্যন্ত সাংসারিক যাবতীয় ঝামেলা হতে মুক্ত হয়ে মসজিদে ইবাদতের উদ্দেশ্যে অবস্থান করাকে ইতিকাফ বলে। রমজানের শেষ ১০ দিন মসজিদে ইতিকাফ করা সুন্নাতে মুয়াক্কাদা-ই-কিফায়া। মহল্লার কোনো একজন ব্যক্তি ইতিকাফ পালন করলে সবার পক্ষ হতে আদায় হয়ে যায়। কেউ যদি ইতিকাফ না করেন তবে সবাই সুন্নাত ত্যাগের জন্য দায়ী থাকবে। প্রিয় নবী হযরত মোহাম্মদ (সা.) পবিত্র মাহে রমজানের শেষ ১০ দিন ইতিকাফ করতেন।

মহানবী (সা.) বলেন, ‘যে ব্যক্তি রমজান মাসের শেষ ১০ দিন ইতিকাফ করবে, সে ব্যক্তি দুটি হজ ও দুটি ওমরাহর সমান সওয়াব হাসিল করবে।’ (বায়হাকি) মহানবী (সা.) আরো বলেন, ‘যে ব্যক্তি ইবাদতের নিয়তে সওয়াবের আশায় ইতিকাফ করবেন তার যাবতীয় গুনাহ মাফ হয়ে যায়।’ (দায়লামী) রাসুল (সা.) বলেন, ‘যে ব্যক্তি সারাজীবনে একদিন হলেও ইতিকাফ করবেন, কিয়ামতের দিন দোজখ তার কাছ থেকে ১৫শ’ বছর পথ দূরে থাকবে।’

ইতিকাফের/এতেকাফের/ইতেকাফের উদ্দেশ্য ও লক্ষ্য

ইতিকাফের মূল লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য হলো, ‘লাইলাতুল কদর’ অনুসন্ধান করা। যে ব্যক্তি পবিত্র মাহে রমজানের শেষ ১০দিন ইতিকাফ করবেন, তিনি নিশ্চয়ই ‘লাইলাতুল কদরের’ ফজিলত লাভ করবেনই।

১- আল্লাহর সাথে সম্পর্ক দৃঢ় করা
আল্লাহর দিকে আকৃষ্ট হওয়া ও আল্লাহ কেন্দ্রিক ব্যতিব্যস্ততা যখন অন্তর সংশোধিত ও ঈমানি দৃঢ়তা অর্জনের পথ, কেয়ামতের দিন তার মুক্তিও বরং এ পথেই, তাহলে ইতিকাফ হল এমন একটি ইবাদত যার মাধ্যমে বান্দা সমস্ত সৃষ্টি-জীব থেকে আলাদা হয়ে যথাসম্ভব প্রভুর সান্নিধ্যে চলে আসে। বান্দার কাজ হল তাঁকে স্মরণ করা, তাঁকে ভালোবাসা ও তাঁর ইবাদত করা। সর্বদা তার সন্তুষ্টি ও নৈকট্য লাভের চেষ্টা করা, এরই মাধ্যমে আল্লাহর সাথে বান্দার সম্পর্ক দৃঢ় ও মজবুত হয়।

২- পাশবিক প্রবণতা এবং অহেতুক কাজ থেকে দূরে থাকা
রোজার মাধ্যমে আল্লাহ তাআলা তাঁর বান্দাদেরকে বাঁচিয়ে রাখেন অতিরিক্ত পানাহার ও যৌনাচারসহ পশু প্রবৃত্তির বিবিধ প্রয়োগ থেকে, তেমনি তিনি ইতিকাফের বিধানের মাধ্যমে তাদেরকে বাঁচিয়ে রাখেন অহেতুক কথা-বার্তা, মন্দ সংস্পর্শ ও অধিক ঘুম হতে।
ইতিকাফের মাধ্যমে একজন ব্যক্তি সম্পূর্ণ অর্থে আল্লাহর জন্য নিবেদিত হয়ে যায়। সালাত, কোরান তিলাওয়াত, জিকির ও দুআ ইত্যাদির নির্বাধ চর্চার মাধ্যমে আল্লাহর নৈকট্য লাভের অফুরান সুযোগের আবহে সে নিজেকে পেয়ে যায়।

৩- শবে কদর তালাশ করা
ইতিকাফের মাধ্যমে শবে কদর খোঁজ করা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের মূল উদ্দেশ্য ছিল, আবু সায়ীদ খুদরি রাদিয়াল্লাহ আনহা থেকে বর্ণিত হাদিস সে কথারই প্রমাণ বহন করে, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন : إِنِّي اعْتَكَفْتُ الْعَشْرَ الْأَوَّلَ، أَلْتَمِسُ هَذِهِ اللَّيْلَةَ، ثُمَّ اعْتَكَفْتُ الْعَشْرَ الْأَوْسَطَ، ثُمَّ أُتِيتُ، فَقِيلَ لِي: إِنَّهَا فِي الْعَشْرِ الْأَوَاخِرِ، فَمَنْ أَحَبَّ مِنْكُمْ أَنْ يَعْتَكِفَ فَلْيَعْتَكِفْ

আমি প্রথম দশকে ইতিকাফ করেছি এই (কদর) রজনী খোঁজ করার উদ্দেশে, অতপর ইতিকাফ করেছি মাঝের দশকে, অতপর মাঝ-দশক পেরিয়ে এলাম, তারপর আমাকে বলা হল, (কদর) তো শেষ দশকে। তোমাদের মধ্যে যদি কেউ ইতিকাফ করতে চায় সে যেন ইতিকাফ করে, অতপর লোকেরা তাঁর সাথে ইতিকাফ করল। [মুসলিম : ১১৬৭]

৪-মসজিদে অবস্থানের অভ্যাস গড়ে তোলা
ইতিকাফের মাধ্যমে বান্দার অন্তর মসজিদের সাথে জুড়ে যায়, মসজিদের সাথে সম্পৃক্ত হওয়ার অভ্যাস গড়ে উঠে। হাদিস অনুযায়ী যে সাত ব্যক্তিকে আল্লাহ তাআলা তাঁর নিজের ছায়ার নীচে ছায়া দান করবেন তাদের মধ্যে একজন হলেন ওই ব্যক্তি মসজিদের সাথে যার হৃদয় ছিল বাঁধা : وَرَجُلٌ قَلْبُهُ مُعَلَّقٌ فِي المَسَاجِدِ
ওই ব্যক্তি মসজিদের সাথে যার হৃদয় ছিল বাঁধা। [বুখারি : ৬৬০]

৫- দুনিয়া ত্যাগ ও বিলাসিতা থেকে দূরে থাকা
ইতেকাফকারী যেসব বিষয়ের স্পৃক্ততায় জীবন যাপন করত সেসব থেকে সরে এসে নিজেকে মসজিদে আবদ্ধ করে ফেলে। ইতিকাফ অবস্থায় দুনিয়া ও দুনিয়ার স্বাদ থেকে সে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে, ঠিক ঐ আরোহীর ন্যায় যে কোন গাছের ছায়ার নীচে বসল, অতঃপর সেখান থেকে উঠে চলে গেল।

৬- ইচ্ছাশক্তি প্রবল করা এবং প্রবৃত্তিকে খারাপ অভ্যাস ও কামনা-বাসনা থেকে বিরত রাখার অভ্যাস গড়ে তোলা কেননা ইতিকাফ দ্বারা খারাপ অভ্যাস থেকে বিরত থাকার ট্রেন্ড গড়ে উঠে। ইতিকাফ তার জন্য সুবর্ণ সুযোগ সৃষ্টি করে দেয় নিজেকে ধৈর্যের গুণে গুণান্বিত করতে ও নিজের ইচ্ছাশক্তিকে শাণিত করতে। ইতিকাফ থেকে একজন মানুষ সম্পূর্ণ নতুন মানুষ হয়ে বের হয়ে আসার সুযোগ পায়। যা পরকালে উপকারে আসবেনা তা থেকে বিরত থাকার ফুরসত মেলে।

এক কথায় আমরা বলতে পারি দুনিয়াদারীর ঝামেলা থেকে সম্পূর্ণ মুক্ত হয়ে একাগ্রচিত্তে আল্লাহর ইবাদতে মশগুল হওয়া, বিনয় নম্রতায় নিজেকে আল্লাহর দরবারে সমপর্ণ করা এবং বিশেষ করে লাইলাতুল কদরে ইবাদত করার সুযোগ লাভ করাই ই‘তিকাফের উদ্দেশ্য।

ইতিকাফের/এতেকাফের/ইতেকাফের প্রকারভেদ

ইতিকাফ ৩ প্রকার। যথা- ১. ওয়াজিব ইতিকাফ, ২. সুন্নাতে মুয়াক্কাদা, ৩. নফল ইতিকাফ।

ওয়াজিব ইতিকাফ : যা মানত করার কারণে ওয়াজিব হয়। সে ইতিকাফ অবশ্যই পালন করতে হবে।

সুন্নাাতে মুয়াক্কাদা : যা মাহে রমজানে (লাইলাতুল কদরের সওয়াব অর্জনের জন্য) শেষ ১০ দিন করা হয়। যা আমাদের প্রিয়নবী (সা.) এবং সাহাবায়ে কেরামগণ করেছেন। বর্তমানে সারা বিশ্বের বিশেষ করে প্রায় সব মসজিদের সম্মানিত খতিব ও ইমাম সাহেবরা করে থাকেন। এই ইতিকাফ কিয়ামত পর্যন্ত চলতে থাকবে।

নফল : নফল ইতিকাফের কোনো নির্ধারিত সময় নেই। যে কোনো মাসের যে কোনো দিনের যে কোনো সময় তা করা যায়। আর এই ইতিকাফকেই নফল ইতিকাফ বলে।

ইতিকাফের/এতেকাফের/ইতেকাফের শর্ত

ইতিকাফের শর্ত ৩টি। যথা- ১. যে কোনো মসজিদে নিয়মিত জামাতের সঙ্গে নামাজ আদায় করা হয়, এরূপ কোনো মসজিদে পুরুষদের অবস্থান করতে হবে। মহিলারা আপন ঘরে পর্দার সঙ্গে ইতিকাফ করবে। ২. ইতিকাফের নিয়তে ইতিকাফ করতে হবে। কারণ বিনা নিয়তে ইতিকাফ হয় না। ৩. ইতিকাফকারীকে সর্বদা পাক-পবিত্র থাকতে হবে।

ইতিকাফের/এতেকাফের/ইতেকাফের আহকাম

ইসলামি শরিয়াতে ইতিকাফের অবস্থান ইতিকাফ করা সুন্নাত। ইতিকাফের সবচেয়ে উপযোগী সময় রমজানের শেষ দশক, ইতিকাফ কোরান, হাদিস ও ইজমা দ্বারা প্রমাণিত। ইমাম আহমদ রহ. বলেন : কোন মুসলমান ইতিকাফকে সুন্নাত বলে স্বীকার করেনি এমনটি আমার জানা নেই।

ইতিকাফের/এতেকাফের/ইতেকাফের রুকন

ইতিকাফের রুকন এর রুকন ২টি- (ক) নিয়ত করা, (খ) মাসজিদে অবস্থান করা, নিজ বাড়ীতে বা অন্য কোথাও ই‘তিফাক করলে তা শুদ্ধ হবে না।

ইতিকাফের/এতেকাফের/ইতেকাফের নিয়ত

ইতিকাফের জন্য মসজিদে প্রবেশের সময় নিয়ত করে নিতে হয়। নিয়ত : ‘নাওয়াইতু আন সুন্নাতুল ইতিকাফ-মাদুমতু হাজাল মাসজিদ।’ এই নিয়ত করে মসজিদে প্রবেশ করে এক কোণে বিছানা বিছাতে হবে। যাতে নামাজী মুসল্লিদের যাতায়াত বা নামাজে কোনো ব্যাঘাত না ঘটে।

ইতিকাফের/এতেকাফের/ইতেকাফের করণীয় 

ইতিকাফ অবস্থায় করণীয় হচ্ছে- ১. বেশি বেশি আল্লাহর জিকির-আজকার করা, ২. নফল নামাজ আদায় করা, ৩. কোরআন তেলাওয়াত করা, ৪. দ্বীনি ওয়াজ-নসিহত শোনা ও ৫. ধর্মীয় গ্রন্থাবলী পাঠ করা।

ইতিকাফের/এতেকাফের/ইতেকাফের বর্জনীয় 

ইতিকাফ অবস্থায় যেসব কাজ বর্জনীয়- ১. ইতিকাফ অবস্থায় বিনা ওজরে মসজিদের বাইরে যাওয়া, ২. দুনিয়াবি আলোচনায় মগ্ন হওয়া, ৩. কোনো জিনিস বেচাকেনা করা, ৪. ব্যবসা-বাণিজ্যের হিসাব-নিকাশ করা, ৫. ওজরবশত বাইরে গিয়ে প্রয়োজনাতিরিক্ত বিলম্ব করা ও ৬. স্ত্রীর সঙ্গে সহবাস করা। এসব কাজ করলে ইতিকাফ ভঙ্গ হয়ে যায়।

ইতিকাফের/এতেকাফের/ইতেকাফের নিয়ম / itikaf rules in bangla


১- ইতিকাফের সময়সীমা
সবচেয়ে কম সময়ের ইতিকাফ হল, শুদ্ধ মত অনুযায়ী, একদিন একরাত। কেননা সাহাবায়ে কেরাম রাদিয়াল্লাহু আনহুম সালাত অথবা উপদেশ শ্রবণ করার অপেক্ষায় বা জ্ঞান অর্জন ইত্যাদির জন্য মসজিদে বসতেন, তবে তারা এ সবের জন্য ইতিকাফের নিয়ত করেছেন বলে শোনা যায়নি। সর্বোচ্চ কতদিনের জন্য ইতিকাফ করা যায় এ ব্যাপারে উলামার মতামত হল, এ ব্যাপারে নির্ধারিত কোন সীমারেখা নেই।

২- ইতিকাফে প্রবেশ ও বাহির হওয়ার সময়
ইতেকাফকারী যদি রমজানের শেষ দশকে ইতিকাফের নিয়ত করে তা হলে একুশতম রাত্রির সূর্য অস্ত যাওয়ার পূর্বে মসজিদে প্রবেশ করবে, কেননা তার উদ্দেশ্য কদরের রাত তালাশ করা, যা আশা করা হয়ে থাকে বেজোড় রাত্রগুলোতে, যার মধ্যে একুশের রাতও রয়েছে।

তবে ইতিকাফ থেকে বের হওয়ার ক্ষেত্রে উত্তম হল চাঁদ রাত্রি মসজিদে অবস্থান করে পরদিন সকালে সরাসরি ইদগাহে চলে যাওয়া। তবে চাঁদ রাতে সূর্যাস্তের পর মসজিদ থেকে বের হয়ে গেলেও কোন সমস্যা নেই, বৈধ রয়েছে।

৩- ইতিকাফের শর্তাবলি / itikaf rules in bangla
ইতিকাফের অনেকগুলো শর্ত রয়েছে। শর্তগুলো নিম্নরূপ : ইতিকাফের জন্য কেউ কেউ রোজার শর্ত করেছেন, কিন্তু বিশুদ্ধ মত হল রোজা শর্ত নয়। কেননা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে প্রমাণিত আছে যে তিনি কোন এক বছর শাওয়ালের প্রথম দশকে ইতিকাফ করেছিলেন, আর এ দশকে ঈদের দিনও আছে। আর ঈদের দিনে তো রোজা রাখা নিষিদ্ধ।

১. ইতিকাফের জন্য মুসলমান হওয়া শর্ত। কেননা কাফেরের ইবাদত গ্রহণযোগ্য হয় না।
২. ইতেকাফকারীকে বোধশক্তিসম্পন্ন হতে হবে, কেননা নির্বোধ ব্যক্তির কাজের কোনো উদ্দেশ্য থাকে না। আর উদ্দেশ্য ছাড়া কাজ শুদ্ধ হতে পারে না।

৩. ভালো-মন্দ পার্থক্য করার জ্ঞান থাকতে হবে, কেননা কম বয়সী, যে ভাল-মন্দের পার্থক্য করতে পারে না, তার নিয়তও শুদ্ধ হয় না।
৪. ইতিকাফের নিয়ত করতে হবে, কেননা মসজিদে অবস্থান হয়তো ইতিকাফের নিয়তে হবে অথবা অন্য কোনো নিয়তে। আর এ দুটোর মধ্যে পার্থক্য করার জন্য নিয়তের প্রয়োজন। উপরন্তু রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তো বলেছেন: إِنَّمَا الأَعْمَالُ بِالنِّيَّاتِ، وَإِنَّمَا لِكُلِّ امْرِئٍ مَا نَوَى 

প্রত্যেক কাজের নির্ভরতা নিয়তের উপর, যে যা নিয়ত করবে সে কেবল তাই পাবে। [বুখারি : ১]

৫. ইতিকাফ অবস্থায় মহিলাদের হায়েজ-নিফাস থেকে পবিত্র থাকা জরুরি, কেননা এ অবস্থায় মসজিদে অবস্থান করা হারাম, অবশ্য ইস্তেহাজা অবস্থায় ইতিকাফ করা বৈধ। আয়েশা রাদিয়াল্লাহ আনহা আনহা বলেন : اعْتَكَفَتْ مَعَ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ امْرَأَةٌ مِنْ أَزْوَاجِهِ مُسْتَحَاضَةٌ، فَكَانَتْ تَرَى الحُمْرَةَ، وَالصُّفْرَةَ، فَرُبَّمَا وَضَعْنَا الطَّسْتَ تَحْتَهَا وَهِيَ تُصَلِّي

রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাথে তাঁর স্ত্রীগণের মধ্য হতে কেউ একজন ইতিকাফ করেছিলেন ইস্তেহাজা অবস্থায়। তিনি লাল ও হলুদ রঙ্গের স্রাব দেখতে পাচ্ছিলেন, আমরা কখনো তার নীচে পাত্র রেখে দিয়েছি নামাজের সময়। [বুখারি : ২০৩৭]

ইস্তেহাজাগ্রস্তদের সাথে অন্যান্য ব্যধিগ্রস্তদেরকে মেলানো যায়, যেমন যার বহুমূত্র রোগ বিশিষ্ট ব্যক্তি আছে, তবে শর্ত হল মসজিদ যেন অপবিত্র না হয়।

৬. গোসল ফরজ হয় এমন ধরনের অপবিত্রতা থেকে পবিত্র হতে হবে। অপবিত্র লোক মসজিদে অবস্থান করা হারাম। যদিও কোন কোন আলেম ওজু করার শর্তে মসজিদে অবস্থান বৈধ বলেছেন। আর যদি অপবিত্রতা, যৌন স্পর্শ অথবা স্বামী-স্ত্রীর মিলনের ফলে হয়, তবে সকলের মতে ইতিকাফ ভঙ্গ হয়ে যাবে। আর যদি স্বপ্নদোষের কারণে হয়, তা হলে কারোর মতে ইতিকাফ ভঙ্গ হবে না। আর যদি হস্তমৈথুনের কারণে হয় তা হলে সঠিক মত অনুসারে ইতিকাফ ভঙ্গ হয়ে যাবে।

৭. ইতিকাফ মসজিদে হতে হবে: এ ব্যাপারে সকল আলেম একমত যে ইতিকাফ মসজিদে হতে হবে, তবে জামে মসজিদ হলে উত্তম কেননা এমতাবস্থায় জুমার নামাজের জন্য ইতেকাফকারীকে মসজিদ থেকে বের হতে হবে না।

ইতিকাফের/এতেকাফের/ইতেকাফের মসজিদ থেকে বের হওয়ার বিধান

১. ইতেকাফকারী যদি বিনা প্রয়োজনে মসজিদ থেকে বের হয় তাহলে তার ইতিকাফ ভঙ্গ হয়ে যাবে।

২. আর ইতিকাফের স্থান থেকে যদি মানবীয় প্রয়োজন মিটানোর জন্য বের হয় তাহলে ইতিকাফ ভঙ্গ হবে না।

৩. মসজিদে থেকে পবিত্রতা অর্জন সম্ভব না হলে মসজিদ থেকে বের হওয়ার অনুমতি আছে।

৪. বাহক না থাকার কারণে ইতেকাফকারীকে যদি পানাহারের প্রয়োজনে বাইরে যেতে হয় অথবা মসজিদে খাবার গ্রহণ করতে লজ্জা বোধ হয়, তবে এরূপ প্রয়োজনে বাইরে যাওয়ার অনুমতি আছে।

৫. যে মসজিদে ইতিকাফে বসেছে সেখানে জুমার নামাজের ব্যবস্থা না থাকলে জুমার সালাত আদায়ের প্রয়োজনে মসজিদ থেকে বের হওয়া ওয়াজিব। আর এ জন্য আগে ভাগেই রওয়ানা হওয়া মুস্তাহাব।

৬. ওজরের কারণে ইতেকাফকারী মসজিদ থেকে বের হতে পারে। ছাফিয়্যা রাদিয়াল্লাহ আনহা থেকে বর্ণিত হাদিস এর প্রমাণ : أَنَّهَا جَاءَتْ إِلَى رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ تَزُورُهُ فِي اعْتِكَافِهِ فِي المَسْجِدِ فِي العَشْرِ الأَوَاخِرِ مِنْ رَمَضَانَ، فَتَحَدَّثَتْ عِنْدَهُ سَاعَةً، ثُمَّ قَامَتْ تَنْقَلِبُ، فَقَامَ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ مَعَهَا يَقْلِبُهَا.

ছাফিয়্যা রাদিয়াল্লাহ আনহা আনহা রমজানের শেষ দশকে ইতিকাফস্থলে রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাথে সাক্ষাৎ করতে এলেন। রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাথে কতক্ষণ কথা বললেন, অতঃপর যাওয়ার জন্য উঠে দাঁড়ালেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামও তাকে বিদায় দিতে উঠে দাঁড়ালেন। [বুখারি : ২০৩৫]

৭. কোন নেকির কাজ করার জন্য ইতেকাফকারীর মসজিদ থেকে বের হওয়া বৈধ নয়। যেমন রোগী দেখতে যাওয়া, জানাযায় উপস্থিত হওয়া ইত্যাদি। এ মর্মে আয়েশা রাদিয়াল্লাহ আনহা আনহা বলেন: السُّنَّةُ عَلَى الْمُعْتَكِفِ : أَنْ لَا يَعُودَ مَرِيضًا، وَلَا يَشْهَدَ جَنَازَةً، وَلَا يَمَسَّ امْرَأَةً، وَلَا يُبَاشِرَهَا، وَلَا يَخْرُجَ لِحَاجَةٍ، إِلَّا لِمَا لَا بُدَّ مِنْهُ،

ইতেকাফকারীর জন্য সুন্নত হল, সে রোগী দেখতে যাবে না, জানাযায় উপস্থিত হবে না, স্ত্রীকে স্পর্শ করবে না ও তার সাথে কামাচার থেকে বিরত থাকবে এবং অতি প্রয়োজন ব্যতীত মসজিদ থেকে বের হবে না। [আবূ দাউদ : ২৪৭৩]

৮. ইতিকাফ-বিরুদ্ধ কোন কাজের জন্য ইতেকাফকারীর মসজিদ থেকে বের হওয়া বৈধ নয়, যেমন ক্রয়-বিক্রয়, স্বামী-স্ত্রীর মিলন ইত্যাদি।


ইতেকাফকারীর জন্য যা কিছু বিধিবদ্ধ

১. ইবাদত আদায়, যেমন সালাত, কোরান তিলাওয়াত, জিকির ও দুআ ইত্যাদি। কেননা ইতিকাফের উদ্দেশ্য হল আল্লাহ তাআলার সমীপে অন্তরের একাগ্রতা নিবেদন করা এবং তাঁর প্রতি আকৃষ্ট হওয়া যা উপরোক্ত ইবাদত আদায় ছাড়া সম্ভব নয়। অনুরূপভাবে যেসব ইবাদতের প্রভাব অন্যদের পর্যন্ত পৌঁছায় যেমন সালামের উত্তর দেওয়া, সৎ কাজের আদেশ ও অসৎ কাজ থেকে বারণ, প্রশ্নের উত্তর দেওয়া, পথ দেখানো, ইলম শিক্ষা দেওয়া কোরান পড়ানো ইত্যাদিও করতে পারবে। কিন্তু শর্ত হল এগুলো যেন এত বেশি না হয় যে ইতিকাফের মূল উদ্দেশ্যই ছুটে যায়।

২. ইতেকাফকারীর জন্য মুস্তাহাব হল তার ইতিকাফের স্থানে কোন কিছু দ্বারা পর্দা করে নেয়া। কেননা রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তুর্কি গম্বুজের ভিতরে ইতিকাফ করেছেন যার দরজায় ছিল চাটাই। اعْتَكَفَ فِي قُبَّةٍ تُرْكِيَّةٍ، عَلَى سُدَّتِهَا قِطْعَةُ حَصِيرٍ.

ক-পত্র সরিয়ে নিলাম, তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এসে বললেন : যে ইতিকাফ করেছে সে তার ইতিকাফের স্থানে ফিরে যাবে। [বুখারি : ২০৪০]


ইতেকাফকারীর জন্য যা অনুমোদিত

১. ইতেকাফকারীর জন্য মসজিদে পানাহার ও ঘুমানোর অনুমতি আছে। এ ব্যাপারে সকল ইমামের ঐক্যমত রয়েছে। তবে এ সতর্ক হওয়া উচিত; কেননা আল্লাহর প্রতি একাগ্রচিত্ত এবং একনিষ্ঠভাবে মনোনিবেশের জন্য কম খাওয়া কম ঘুমানো সহায়ক বলে বিবেচিত।

২. গোসল করা, চুল আঁচড়ানো, তেল ও সুগন্ধি ব্যবহার, ভাল পোশাক পরা, এসবের অনুমতি আছে। আয়েশা রাদিয়াল্লাহ আনহার হাদিসে এসেছে :

أَنَّهَا كَانَتْ تُرَجِّلُ النَّبِيَّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، وَهِيَ حَائِضٌ وَهُوَ مُعْتَكِفٌ فِي المَسْجِدِ وَهِيَ فِي حُجْرَتِهَا يُنَاوِلُهَا رَأْسَهُ

তিনি মাসিক অবস্থায় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের মাথার কেশ বিন্যাস করে দিতেন, যখন রসুল মসজিদে ইতিকাফরত অবস্থায় থাকতেন, আয়েশা রাদিয়াল্লাহ আনহা তার কক্ষে থাকা অবস্থায় রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের মাথার নাগাল পেতেন। [বুখারি : ২০৪৬]

৩. ইতেকাফকারীর পরিবার তার সাথে সাক্ষাৎ করতে পারবে, কথা বলতে পারবে, কেননা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের স্ত্রীগণ ইতিকাফকালীন তার সাথে সাক্ষাৎ করতেন। কিন্তু সাক্ষাৎ দীর্ঘ না হওয়া বাঞ্ছনীয়।

ইতেকাফকারী যা থেকে বিরত থাকবে

১. ওজর ছাড়া ইতেকাফকারী এমন কোন কাজ করবে না যা ইতিকাফকে ভঙ্গ করে দেয়, আল্লাহ তাআলা বলেন, وَلَا تُبۡطِلُوٓاْ أَعۡمَٰلَكُمۡ ٣٣ $ محمد: ٣٣

তোমরা তোমাদের কাজসমূহকে নষ্ট করো না। [সূরা মুহাম্মদ : ৩৩]

২. ঐ সকল কাজ যা ইতিকাফের উদ্দেশ্যকে ব্যাহত করে, যেমন বেশি কথা বলা, বেশি মেলামেশা করা, অধিক ঘুমানো, ইবাদতের সময়কে কাজে না লাগানো ইত্যাদি।

৩. ইতেকাফকারী মসজিদে অবস্থানকালে ক্রয়-বিক্রয় করবে না, কেননা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মসজিদে ক্রয়-বিক্রয় করতে নিষেধ করেছেন। نَهَى رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ عَنِ الْبَيْعِ وَالِاشْتِرَاءِ فِي الْمَسْجِدِ

এমনিভাবে যা ক্রয় বিক্রয়ের কাজ বলে বিবেচিত যেমন বিভিন্ন ধরনের চুক্তিপত্র, ভাড়া, মুদারাবা, মুশারাকা, বন্দক রাখা ইত্যাদি। কিন্তু যদি মসজিদের বাহিরে এমন ক্রয়-বিক্রয় হয় যা ছাড়া ইতেকাফকারীর সংসার চলে না তবে তা বৈধ বলে বিবেচিত হবে। [মুসনাদে আহমদ : ৬৯৯১]

মসজিদে পারতপক্ষে বায়ু ত্যাগ করা থেকে বিরত থাকতে হবে। আনাস রাদিয়াল্লাহু আনহুর হাদিসে এসেছে, যখন বেদুইন লোকটি মসজিদে প্রস্রাব করেছিল তখন রাসুল বলেছিলেন : إِنَّ هَذِهِ الْمَسَاجِدَ لَا تَصْلُحُ لِشَيْءٍ مِنْ هَذَا الْبَوْلِ، وَلَا الْقَذَرِ إِنَّمَا هِيَ لِذِكْرِ اللهِ عَزَّ وَجَلَّ، وَالصَّلَاةِ وَقِرَاءَةِ الْقُرْآنِ

মসজিদ প্রস্রাব, ময়লা-আবর্জনার উপযোগী নয়, বরং মসজিদ অবশ্যই আল্লাহর জিকির এবং সালাত ও কোরান তিলাওয়াতের জন্য। [মুসলিম : ২৮৫]

৪. ইতিকাফ অবস্থায় যৌন স্পর্শ নিষেধ, এ ব্যাপারে সকল আলেমের ঐকমত্য রয়েছে। তবে অধিকাংশ আলেমের মতে বীর্যস্খলনের দ্বারাই কেবল ইতিকাফ ভঙ্গ হয়

ইতিকাফ অবশ্য পালনীয়

★★★ এলাকাবাসীর পক্ষ থেকে যে কেউ ইতিকাফ করলে সুন্নতে কিফায়া আদায় হয়ে যাবে। কিন্তু গ্রামের বা পাড়া-মহল্লার কেউ ইতিকাফ না করলে সবাই গুনাহগার হবে।

প্রত্যেক ইতিকাফকারী রোজাদারের আল্লাহর ইবাদত, পবিত্র কোরআন তিলাওয়াত, নামাজ-রোজা, জিকির-আজকার, তাসবিহ-তাহলিল, দোয়া-দরুদ, মোরাকাবা-মোশাহেদা ও তওবা-ইস্তেগফারে ব্যস্ত থাকা এবং পার্থিব বিষয়ে কথাবার্তা, আলাপ-আলোচনা থেকে দূরে থাকা অত্যাবশ্যক।

এ সময় দুনিয়াবি কাজকর্ম থেকে সম্পর্ক ছিন্ন করে সম্পূর্ণভাবে আল্লাহর ইবাদতে মশগুল হতে হয়। ফলে ইতিকাফকারী বেহুদা কথাবার্তা ও গুনাহ থেকে বেঁচে থাকেন। একাগ্রচিত্তে কয়েক দিনের ইবাদতের ফলে তার অন্তরে আল্লাহর ভয় বা তাকওয়া গভীরভাবে রেখাপাত করে। ইতিকাফ পালনকালে যেকোনো ধরনের পার্থিব বিষয় থেকে সম্পূর্ণ মুক্ত থাকতে হবে।

মহিলাদের ইতিকাফ : পুরুষ যেমনভাবে মসজিদে ইতিকাফ করবে তেমনি মহিলারাও তাদের নিজ নিজ গৃহে ইতিকাফ করবে। নারীদের জন্য ইতিকাফ জায়েজ ও বৈধ। তবে ইসলামের প্রথম যুগে মহিলারা যেমন অবাধে মসজিদে ইতিকাফ করতেন, বর্তমান সময়ে ফেতনার আশঙ্কায় তা জায়েজ নয়। বরং মহিলারা ঘরে নিজ কক্ষে ইতিকাফ করবে।

হযরত ওমর ও হযরত আয়শা (রা.) থেকে বর্ণিত হাদিস। তারা বলেন, রাসহৃল (সা.) রমজানের শেষ দশকে ইতিকাফ করতেন। নবীজীর (সা.) ইন্তেকালের পর তার স্ত্রীগণ ইতিকাফ করতেন। (বুখারী)

ইতিকাফ : কেন করবেন, কীভাবে করবেন?

নবীজি ইতিকাফকে খুব গুরুত্ব দিতেন। হজরত আয়েশা (রা.) বলেছেন, ‘রাসুলুল্লাহ (সা.) প্রতি রমজানের শেষ দশক (মসজিদে) ইতিকাফ করতেন। এ আমল তাঁর ইন্তেকাল পর্যন্ত কায়েম ছিল।’ (বুখারি ও মুসলিম)

ইতিকাফ বলতে কী বুঝায় বা এর পরিচয় কী?
পবিত্র রমজান মাসে বিভিন্ন ইবাদত-বন্দেগির মধ্যে এতেকাফ একটি গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত। ‘ইতিকাফ’ একটি আরবি শব্দ। এর আভিধানিক অর্থ অবস্থান করা, স্থির থাকা, কোনো স্থানে আটকে পড়া বা আবদ্ধ হয়ে থাকা।

ইসলামি শরিয়তের পরিভাষায় রমজান মাসের শেষ দশক বা অন্য কোনো দিন জাগতিক কাজকর্ম ও পরিবার-পরিজন থেকে কিছুটা বিচ্ছিন্ন হয়ে আল্লাহকে রাজি খুশি করার নিয়তে পুরুষের জন্য মসজিদে বা নারীদের ঘরে নামাজের নির্দিষ্ট একটি স্থানে ইবাদত করার উদ্দেশ্যে অবস্থান করা ও স্থির থাকাকে ইতিকাফ বলে।

এতেকাফের গুরুত্ব ও ফজিলত / ইতিকাফের নিয়ম ও ফজিলত/ এতেকাফের ফজিলত কি / ইতেকাফের ফজিলত / ইতিকাফের ফজিলত / এতেকাফ এর ফজিলত / ইতিকাফের গুরুত্ব ও ফজিলত / ইতিকাফের ফজিলত ও তাৎপর্য / এতেকাফ করার ফজিলত / রমজানে এতেকাফের ফজিলত

পবিত্র কোরআন অনুযায়ী ইতিকাফের বর্ণনা

★★★ পবিত্র কোরআনে বলা হয়েছে, ‘তোমরা স্ত্রীদের সঙ্গে মিলিত হবে না, যখন তোমরা মসজিদে ইতিকাফে থাকবে।’ (সূরা আল-বাকারা, আয়াত: ১৮৭)

পবিত্র কোরআনের আয়াতে সূরা বাকারা : ১৮৭নং আয়াতে ইরশাদ করেছেন, আর তোমরা মসজিদে এতেকাফ কালে স্ত্রীদের সাথে মেলামেশা করো না

ইতিকাফের ফজিলত

ইতিকাফ একটি মহান ইবাদত, মদিনায় অবস্থানকালীন সময়ে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম প্রতি বছরই ইতিকাফ পালন করেছেন। দাওয়াত, তরবিয়ত, শিক্ষা ও জিহাদে ব্যস্ত থাকা সত্ত্বেও রমজানে তিনি ইতিকাফ ছাড়েননি। ইতিকাফ ঈমানি তরবিয়তের একটি পাঠশালা। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের হিদায়েতি আলোর একটি প্রতীক। ইতিকাফরত অবস্থায় বান্দা নিজেকে আল্লাহর ইবাদতের জন্য দুনিয়ার অন্যান্য সকল বিষয় থেকে আলাদা করে নেয়। ঐকান্তিকভাবে মশগুল হয়ে পড়ে আল্লাহর নৈকট্য অর্জনের নিরন্তর সাধনায়। ইতিকাফ ঈমান বৃদ্ধির একটি মূখ্য সুযোগ। সকলের উচিত এ সুযোগ কাজে লাগিয়ে নিজের ইমানি চেতনাকে প্রাণিত করে তোলা ও উন্নততর পর্যায়ে পৌঁছে দেয়ার চেষ্টা করা।

নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সহধর্মিণী আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন : রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রমজানের শেষের দশকে ইতিকাফ করেছেন, ইন্তেকাল পর্যন্ত। এরপর তাঁর স্ত্রীগণ ইতিকাফ করেছেন। [বুখারি : ২০২৪; মুসলিম : ১১৭২]

عَنْ عَائِشَةَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهَا، قَالَتْ: كَانَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، يَعْتَكِفُ فِي كُلِّ رَمَضَانٍ.

আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন : রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম প্রত্যেক রমজানে ইতিকাফ করতেন। [বুখারি : ২০৪১]

অন্য এক হাদিসে এসেছে— إِنِّي اعْتَكَفْتُ الْعَشْرَ الْأَوَّلَ، أَلْتَمِسُ هَذِهِ اللَّيْلَةَ، ثُمَّ اعْتَكَفْتُ الْعَشْرَ الْأَوْسَطَ، ثُمَّ أُتِيتُ، فَقِيلَ لِي: إِنَّهَا فِي الْعَشْرِ الْأَوَاخِرِ، فَمَنْ أَحَبَّ مِنْكُمْ أَنْ يَعْتَكِفَ فَلْيَعْتَكِفْ ” فَاعْتَكَفَ النَّاسُ مَعَهُ، قَالَ: «وَإِنِّي أُرِيتُهَا لَيْلَةَ وِتْرٍ، وَإِنِّي أَسْجُدُ صَبِيحَتَهَا فِي طِينٍ وَمَاءٍ» فَأَصْبَحَ مِنْ لَيْلَةِ إِحْدَى وَعِشْرِينَ، وَقَدْ قَامَ إِلَى الصُّبْحِ، فَمَطَرَتِ السَّمَاءُ، فَوَكَفَ الْمَسْجِدُ، فَأَبْصَرْتُ الطِّينَ وَالْمَاءَ، فَخَرَجَ حِينَ فَرَغَ مِنْ صَلَاةِ الصُّبْحِ، وَجَبِينُهُ وَرَوْثَةُ أَنْفِهِ فِيهِمَا الطِّينُ وَالْمَاءُ، وَإِذَا هِيَ لَيْلَةُ إِحْدَى وَعِشْرِينَ مِنَ الْعَشْرِ الْأَوَاخِرِ

আমি (প্রথমে) এ রাতের সন্ধানে প্রথম দশে ইতিকাফ পালন করি। অতপর ইতিকাফ পালন করি মাঝের দশে। পরবর্তীতে ওহির মাধ্যমে আমাকে জানানো হয় যে, এ রাত শেষ দশে রয়েছে। সুতরাং তোমাদের মাঝে যে (এ দশে) ইতিকাফ পালনে আগ্রহী, সে যেন তা পালন করে। লোকেরা তার সাথে ইতিকাফ পালন করল। রাসুল বলেন, আমাকে তা এক বেজোড় রাতে দেখানো হয়েছে এবং দেখানো হয়েছে যে, আমি সে ভোরে কাদা ও মাটিতে সেজদা দিচ্ছি। অতপর রাসুল একুশের রাতের ভোর যাপন করলেন, ফজর পর্যন্ত তিনি কিয়ামুল্লাইল করেছিলেন। তিনি ফজর আদায়ের জন্য দণ্ডায়মান হয়েছিলেন। তখন আকাশ ছেপে বৃষ্টি নেমে এল, এবং মসজিদে চুঁইয়ে চুঁইয়ে পানি পড়ল। আমি কাদা ও পানি দেখতে পেলাম। ফজর সালাত শেষে যখন তিনি বের হলেন, তখন তার কপাল ও নাকের পাশে ছিল পানি ও কাদা। সেটি ছিল একুশের রাত। [মুসলিম : ১১৬৭]

আবু হুরাইরা রাদিয়াল্লাহ আনহা হতে বর্ণিত, তিনি বলেন : يَعْتَكِفُ فِي كُلِّ رَمَضَانٍ عَشَرَةَ أَيَّامٍ، فَلَمَّا كَانَ العَامُ الَّذِي قُبِضَ فِيهِ اعْتَكَفَ عِشْرِينَ يَوْمًا

রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম প্রতি রমজানে দশ দিন ইতিকাফ করতেন, তবে যে বছর তিনি পরলোকগত হন, সে বছর তিনি বিশ দিন ইতিকাফে কাটান। [বুখারি : ২০৪৪]

রাসুল সা: বলেন— إِنِّي اعْتَكَفْتُ الْعَشْرَ الْأَوَّلَ، أَلْتَمِسُ هَذِهِ اللَّيْلَةَ، ثُمَّ اعْتَكَفْتُ الْعَشْرَ الْأَوْسَطَ، ثُمَّ أُتِيتُ، فَقِيلَ لِي: إِنَّهَا فِي الْعَشْرِ الْأَوَاخِرِ، فَمَنْ أَحَبَّ مِنْكُمْ أَنْ يَعْتَكِفَ فَلْيَعْتَكِفْ ” فَاعْتَكَفَ النَّاسُ مَعَهُ،

আমি কদরের রাত্রির সন্ধানে প্রথম দশ দিন ইতিকাফ করলাম। এরপর ইতিকাফ করলাম মধ্যবর্তী দশদিন। অতপর ওহি প্রেরণ করে আমাকে জানানো হল যে তা শেষ দশদিনে। সুতরাং তোমাদের যে ইতিকাফ পছন্দ করবে, সে যেন ইতিকাফ করে। ফলে, মানুষ তার সাথে ইতিকাফ যাপন করল। [মুসলিম : ১১৬৭]

আবু হুরাইরা রাদিয়াল্লাহ আনহা হতে বর্ণিত হাদিসে উভয়টির উল্লেখ পাওয়া যায়। তিনি বলেন : يَعْتَكِفُ فِي كُلِّ رَمَضَانٍ عَشَرَةَ أَيَّامٍ، فَلَمَّا كَانَ العَامُ الَّذِي قُبِضَ فِيهِ اعْتَكَفَ عِشْرِينَ يَوْمًا

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম প্রতি রমজানের শেষ দশদিন ইতিকাফ করতেন। তবে যে বছর পরলোকগত হন তিনি বিশ দিন ইতিকাফ করেছেন। [বুখারি : ৩০৯]

আয়শা রাদিয়াল্লাহু আনহা বলেন, أَنَّ النَّبِيَّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ اعْتَكَفَ مَعَهُ بَعْضُ نِسَائِهِ وَهِيَ مُسْتَحَاضَةٌ تَرَى الدَّمَ» ، فَرُبَّمَا وَضَعَتِ الطَّسْتَ تَحْتَهَا مِنَ الدَّمِ

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাথে তাঁর জনৈকা স্ত্রীও ইতিকাফ করলেন। তখন তিনি ছিলেন ইস্তেহাজা অবস্থায়, রক্ত দেখছেন। রক্তের কারণে হয়তো তাঁর নীচে গামলা রাখা হচ্ছে। [বুখারি : ৩০৯]

নবীজি ইতিকাফকে খুব গুরুত্ব দিতেন। হজরত আয়েশা (রা.) বলেছেন, ‘রাসুলুল্লাহ (সা.) প্রতি রমজানের শেষ দশক (মসজিদে) ইতিকাফ করতেন। এ আমল তাঁর ইন্তেকাল পর্যন্ত কায়েম ছিল।’ (বুখারি ও মুসলিম)

ইতিকাফ আদায় করা বা সহিহ হওয়ার জন্য কী কী শর্ত রয়েছে?

ইতিকাফ আদায় করা বা সহিহ হওয়ার জন্য চারটি শর্ত রয়েছে: ১. পুরুষের মসজিদে এবং নারীদের জন্য ঘরে অবস্থান করা। ২. ইতিকাফের নিয়ত করা ৩. বড় না পাক থেকে পাবিত্রতা অর্জন করা। এবং ৪. রোজা রাখা

ইসলামের দৃষ্টিতে সবচেয়ে উৎকৃষ্ট ইতেকাফ কী?

মসজিদুল হারামে আদায়কৃত ইতিকাফ ইসলামের দৃষ্টিতে সবচেয়ে উৎকৃষ্ট ইতেকাফ। তারপর মসজিদে নববীর ইতিকাফ এবং তারপর বায়তুল মুকাদ্দাস। তারপর উৎকৃষ্ট ইতেকাফ হলো- কোনো জামে মসজিদে ইতিকাফ করা যেখানে রীতিমতো জামায়াতে নামায হয়। এরপর মহল্লার মসজিদে।

একজন মুসলিম কেন ইতিকাফ করবে?

১- একটি ইসলামের বিধান মান্য করার মাধ্যমে আল্লাহর সাথে সম্পর্ক দৃঢ় করার উদ্দেশ্যে । ২-মানবীয় পাশবিক প্রবণতা এবং অহেতুক কাজ থেকে দুরে থাকার চর্চা। ৩- শবে কদর তালাশ করার উদ্দেশ্যে।

মহানবী (সা.) বলেন, আমি লাইলাতুল কদরের সৌভাগ্য ও মহিমা অনুসন্ধানে প্রথম দশদিন ও মাঝের দশদিন এতেকাফ করেছি অবশেষে আমার কাছে একজন ফেরেশতা এসে বলেছেন, লাইলাতুল কদর শেষ দশকে। কাজেই তোমাদের মধ্যে যারা লাইলাতুল কদরকে অর্জন করতে চায়, তারা যেন শেষ দশকে এতেকাফ করে।

৪- মসজিদে অবস্থানের অভ্যাস গড়ে তোলা। ৫- দুনিয়ামুখি মানসিকতা ত্যাগ ও বিলাসিতা থেকে দুরে থাকা। ৬. এছাড়া হাদিসে ইতিকাফ করার ফজিলতের কথা উল্লেখ রয়েছে, এইসব ফজিলত অর্জনের উদ্দেশ্যও ইতিকাফ করা যেতে পারে। যেমন এতেকাফের ফজিলত সম্পর্কে রাসুল (সা.) বলেছেন, যে ব্যক্তি রোজার শেষ ১০ দিন এতেকাফ করবে, সে ব্যক্তি দু’টি হজ ও দুটি ওমরার সমপরিমাণ সওয়াব পাবে। (বুখারি ও মুসলিম)

হজরত ইবনে আব্বাস (রা.) থেকে অপর একটি হাদিস বর্ণিত, রাসূলে পাক (সা.) বলেছেন, যে ব্যক্তি আল্লাহর সন্তুষ্টির উদ্দেশে এতেকাফ করবে, আল্লাহ তায়ালা তার এবং জাহান্নামের আগুনের মধ্যে তিনটি পরিখার দূরত্ব সৃষ্টি করবেন। প্রত্যেক পরিখার প্রশস্ততা দুই দিগন্তের চেয়েও বেশি। (বায়হাকি)।

ইতিকাফের সময় কি কি কাজ করা যাবে এবং কি কি কাজ করা যাবে না

এক. এতেকাফের মধ্যে যেসব কাজ করা জায়েজ বা করা যাবে
১. পেশাব পায়খানার জন্যে বাইরে যাওয়া জায়েয। মনে রাখতে হবে এসব প্রয়োজন এমন স্থানে পূরণ করতে হবে যা মসজিদের নিকটে হয়।
২. ফরয গোসলের জন্যেও এতেকাফের স্থান থেকে বাইরে যাওয়া জায়েয। তবে মসজিদেই গোসল করার ব্যবস্থা থাকলে সেখানেই গোসল করতে হবে।
৩. খানা খাওয়ার জন্য মসজিদের বাইরে যাওয়া যায় যদি খানা নিয়ে আসর কোনো লোক না থাকে। খানা আনার লোক থাকলে মসজিদে খাওয়াই জরুরী।
৪. জুমা ও ঈদের নামাযের জন্যেও বাইরে যাওয়া জায়েয।
৫. যদি কোথাও আগুন লাগে, অথবা কেউ পানিতে পড়ে ডুবে যাচ্ছে অথবা কেউ কাউকে মেরে ফেলছে অথবা মসজিদ পড়ে যাওয়ার আশঙ্কা হয় তাহলে এসব অবস্থায় এতেকাফের স্থান থেকে বাইরে যাওয়া শুধু জায়েযই নয় বরঞ্চ জরুরী।
৬. জুমার নামায আদায়ের জন্য বা কোনো জরুরত পুরণ করার জন্যে বের হলো এবং এ সময়ে সে কোনো রোগীর সেবা করলো অথবা জানাযায় শরীক হলো তাহলে তাতে কোনো দোষ হবে না।
৭. যে কোনো প্রাকৃতিক অথবা শরীয়াতের প্রয়োজনে মসজিদ থেকে বের হওয়া জায়েয।
৮. যদি কেনাবেচার কোনো লোক না থাকে এবং বাড়ীতে খাবার কিছু না থাকে তাহলে প্রয়োজনমত কেনাবেচা করা এতেকাফকারীর জায়েয।
৯. আযান দেয়ার জন্যে মসজিদের বাইরে যাওয়া জায়েয।
১০. এতেকাফ অবস্থায় কাউকে দীন সম্পর্কে পরামর্শ অথবা চিকিৎসা সংক্রান্ত পরামর্শ দেয়া জায়েয। বিয়ে করা, ঘুমানো এবং আরাম করা জায়েয।

দুই. এতেকাফে যেসব কাজ করা না জায়েজ বা অবৈধ
১. এতেকাফ অবস্থায় যৌনক্রিয়া করা এবং স্ত্রীকে আলিঙ্গন করা হলে এতেকাফ নষ্ট হবে।
২. এতেকাফ অবস্থায় কোনো দুনিয়ার কাজে লিপ্ত হওয়া মাকরূহ তাহরিমী। বাধ্য হয়ে করলে জায়েয হবে।
৩. এতেকাফ অবস্থায় একেবারে চুপচাপ বসে থাকা মাকরূহ তাহরিমী। যিকির ফিকির, তেলাওয়াত প্রভৃতিতে লিপ্ত থাকা উচিত।
৪. মসজিদে বেচাকেনা করা। লড়াই-ঝগড়া করা, গীবত করা অথবা কোনো প্রকার বেহুদা কথা বরা মাকরূহ।
৫. কোনো প্রাকৃতিক ও শরয়ী প্রয়োজন ব্যতিরেকে মসজিদের বাইরে যাওয়া অথবা প্রাকৃতিক ও শরয়ী প্রয়োজনে বাইরে গিয়ে সেখানেই থেকে যাওয়া জায়েয নয়। তাতে এতেকাফ নষ্ট হয়ে যাবে।

কী কী কারণে ই‘তিকাফ ভঙ্গ হয়ে যায়?

১. স্বেচ্ছায় বিনা প্রয়োজনে মাসজিদ থেকে বের হলে
২. কোন শির্ক বা কুফরী কাজ করলে।
৩. পাগল বা বেঁহুশ হয়ে গেলে।
৪. নারীদের হায়েয-নিফাস শুরু হয়ে গেলে।
৫. স্ত্রীসহবাস বা যে কোন প্রকার যৌন সম্ভোগ করলে।

রাসুল [সা.] কীভাবে ইতেকাফ করতেন?

১. আয়েশা রা. হতে বর্ণিত, তিনি বলেন : রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মৃত্যু-পূর্ব পর্যন্ত রমজানের শেষ দশ দিনে এতেকাফ পালন করেছেন। [বোখারি : ২০২৬।]

২. এতেকাফরত অবস্থাতেও রাসুল পাক-পবিত্রতা ও পরিচ্ছন্নতার প্রতি গুরুত্বারোপ করতেন।

৩. এতেকাফকালীন রাসুল কোন অসুস্থ ব্যক্তির দর্শনে যেতেন না, অংশ নিতেন না কোন জানাজায়, বর্জন করতেন স্ত্রী সংস্পর্শ বা সহবাস। আয়েশা রা. বলেন : এতেকাফকারীর সুন্নত হচ্ছে অসুস্থের দর্শনে গমন না করা, জানাজায় অংশ না নেয়া, নারী সংসর্গ ও সহবাস বর্জন করা এবং অত্যবশ্যকীয় কোন প্রয়োজন ব্যতীত এতেকাফ হতে বের না হওয়া। [আবু দাউদ : ২৪৭৩।]

৪. রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম অত্যবশ্যকীয় কোন কারণ ব্যতীত এতেকাফগাহ হতে বের হতেন না। আয়েশা রা. হতে বর্ণিত, তিনি বলেন : রাসুল এতেকাফরত অবস্থায় কোন কারণ ব্যতীত গৃহে প্রবেশ করতেন না। [বোখারি : ২০২৯।]

৫. এতেকাফরত অবস্থায় রাসুলের স্ত্রী-গণ তার সাথে সাক্ষাৎ করতেন এবং কথোপকথন করতেন তার সাথে। সাফিয়া রা. বলেন : রাসুল এতেকাফরত অবস্থায় আমি তার সাথে সাক্ষাতের জন্য এলাম, তার সাথে আলাপ করে অত:পর চলে এলাম...। [বোখারি : ৩০৩৯।] প্রমাণ করে, এতেকাফরত অবস্থাতেও রাসুল স্ত্রী-গণের সংবাদ নিয়েছেন। এতেকাফের ফলে যে মূর্খরা তাদের পরিবার-পরিজনের কথা ভুলে যায়, তারা এ থেকে শিক্ষা নিতে পারে।

সুতরাং আখিরাতের চূড়ান্ত কল্যাণে গুনাহ মাফ ও জান্নাত লাভের জন্য ইতিকাফের প্রস্তুতি নেয়া প্রত্যেক মুমিন মুসলমানের জন্য একান্ত আবশ্যক। ইতিকাফকালীন সময়ে পরিবারের সকল খরচাদি ও প্রাথমিক সমস্যা সমাধান করে আল্লাহর রাস্তায় নিজেকে রমজানের শেষ দশ দিন সপে দেয়ার জন্য আমরা এখন থেকেই প্রস্তুতি শুরু করি। আল্লাহ আমাদেরকে ইতিকাফের মাধ্যমে আল্লাহর রেজামন্দি হাছিলের তাওফিক দান করুন। আমিন।

Tag: রমজানে ইতিকাফের হুকুম কি, ইতিকাফের হুকুম কি, hukum itikaf, ইতিকাফের নিয়ত, ইতিকাফের নিয়ম, ইতিকাফের ফজিলত, ইতিকাফ ভঙ্গের কারণ, এতেকাফের জন্য শর্ত কি কি, ইতিকাফের শর্ত, এতেকাফের নিয়মাবলী, এতেকাফের ফজিলত, এতেকাফের নিয়ত, ইতিকাফের গুরুত্ব ও ফজিলত, ইতিকাফের নিয়ম, এতেকাফের দোয়া, এতেকাফের শর্ত, এতেকাফের ফজিলত, এতেকাফের নিয়মাবলী, এতেকাফের দোয়া, এতেকাফের নিয়ত, এতেকাফে বসার সময়, এতেকাফ ভঙ্গের কারণ, ইতিকাফের গুরুত্ব ও ফজিলত, ইতিকাফের ফজিলত, ইতিকাফের হুকুম কি, itikaf rules in bangla, এতেকাফের ফজিলত pdf, এতেকাফের গুরুত্ব ও ফজিলত, ইতিকাফের নিয়ম ও ফজিলত, এতেকাফের ফজিলত কি, ইতেকাফের ফজিলত,ইতিকাফের ফজিলত, এতেকাফ এর ফজিলত, ইতিকাফের গুরুত্ব ও ফজিলত, ইতিকাফের ফজিলত ও তাৎপর্য, এতেকাফ করার ফজিলত, রমজানে এতেকাফের ফজিলত, ইতিকাফের গুরুত্ব, what are the benefits of itikaf, importance of itikaf, benefits of itikaf in ramadan, The virtue of Itikaf, what are the benefits of itikaf, importance of itikaf, benefits of itikaf in ramadan, 
Next Post Previous Post