তারাবির নামাজ ২০ রাকাতের দলিল | তারাবির নামাজ কয় রাকাত | তারাবির নামাজ কত রাকাত | tarabi namaz koy rakat bangla

তারাবির নামাজ ২০ রাকাতের দলিল | তারাবির নামাজ কয় রাকাত | তারাবির নামাজ কত রাকাত | tarabi namaz koy rakat bangla

তারাবির নামাজ ২০ রাকাতের দলিল | তারাবির নামাজ কয় রাকাত | তারাবির নামাজ কত রাকাত | tarabi namaz koy rakat bangla

তারাবীহ নামাজ কি ?

তারাবীহ ‎(تراويح) হল ইসলাম ধর্মের পবিত্র রমজান মাসের গুরুত্বপূর্ণ অতিরিক্ত রাতের নামাজ যেটি মুসলিমগণ রমজান মাস ব্যপী প্রতি রাতে এশার ফরজ নামাজের পর পড়ে থাকেন।রাসুলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন, ‘আল্লাহ তাআলা রমজানের রোজাগুলো ফরজ করেছেন এবং এর রাতে তারাবি নামাজের জন্য দণ্ডায়মান হওয়াকে অশেষ পুণ্যের কাজ হিসেবে চিহ্নিত করেছেন।’ তিনি তার সাহাবীদের নিয়ে তিন রাত্রি তারাবীহ আদায় করেছেন।

উম্মতের উপর ফরজ হয়ে যেতে পারে এ আশঙ্কায় পরেরদিন তিনি আর জামাতের সাথে তারাবীহ আদায় করেননি। মুসলমানগন আবু বকর (রা:) এর খেলাফত কাল ও উমর (রা:) এর খেলাফতের প্রথম দিকে এ অবস্থায়ই ছিল। এরপর আমীরুল মুমিনীন উমর (রা:) প্রখ্যাত সাহাবী তামীম আদদারী (রা:) ও উবাই ইবনে কাআব (রা:) এর ইমামতিতে তারাবীর জামাতের ব্যবস্থা করেন। যা আজ পর্যন্ত কায়েম আছে। আলহামদুলিল্লাহ! এ তারাবীর জামাত শুধু রমজান মাসেই সুন্নাত।

তারাবী নামায এর রাকাত সংক্রান্ত পর্যালোচনা

তারাবী নামায এর রাকাত সম্পর্কে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে শুরু করে এ যাবত কত রাকাত পড়া হয়েছে এবং আমাদের জন্য কত রাকাত পড়া উচিৎ এ সম্পর্কে নিম্নে একটি পর্যালোচনা পেশ করা হল ।

রাসুল সাঃ ও আবু বকর রা: এর যুগে তারাবী
পবিত্র রমজান মাসে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তারাবীর নামায পড়েছেন, এ ব্যপারে কারো কোন দ্বিমত নেই। কিন্তু কত রাকাআত পড়েছেন, এ ব্যপারে তালাশ করলে বিভিন্ন ধরনের বর্ণনা পাওয়া যায়। তার মাঝে তিনটি বর্ণনা প্রশিদ্ধ।পর্যায়ক্রমে তাহলো,হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রা. বর্ণিত হাদীস, হযরত আয়েশা রা. . বর্ণিত হাদীস, হযরত জাবের রা. বর্ণিত হাদীস ।

(১) হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রা. থেকে বর্ণিত,তিনি বলেনঃ রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রমজান মাসে ২০ রাকাআত তারাবী ও বিতর পড়তেন। (মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা, ২য় খন্ড, ৩৯৪ পৃ; ৭৭৭৪ আসসুনানুল কুবরা বায়হাকী-২য় খন্ড ৪৯৬ পৃষ্ঠা)

এর মাঝে হযরত আয়শা রা: ও হযরত জাবের বর্ণিত হাদীস দু’খানা সম্পর্কে আমরা পরে আলোচনা করব ইনশা আল্লাহ। এখন আমরা হযরত ইবনে আব্বাস রা: কতৃক বর্ণিত হাদীস সস্পর্কে আলোচনা করছি। হাফেজ ইবনে হাজর আসকালানী রহ: বলেন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যেই দুই দিন জামাআতের সাথে তারাবীর ইমামতি করেছিলেন সেই দুই দিন বিশ রাকাআত নামায পড়েছিলেন। (আত্তালখিসুল হাবীর: ১ম খন্ড ১১৯ পৃষ্ঠা)

উক্ত আলোচনা দ্বারা বুঝা গেল রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বিশ রাকাআত তারাবী পড়েছিলেন। কিন্তু রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ধারাবাহিক এই আমলের প্রচলন করেননি, কেননা তার আশংকা ছিল যে, ধারাবাহিক করলে আল্লাহ তাআলা যদি এই আমলকে ফরজ করে দেন? তাই তিনি নিয়মতান্ত্রিকভাবে বিশ রাকাআত বা জামাতের সাথে না পড়ে সাহাবায়ে কেরামের উপর ছেড়ে দিয়েছেন। ফলে দুই, তিন জন বা একাকা তারা তারাবী পড়তে লাগলেন এভাবে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর পবিত্র জমানা শেষ হয়ে যায়। তারপর প্রথম খলিফা হযরত আবু বকর রা: এর যুগেও এই অবস্থাই ছিল। তিনি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর অনুসরণ করে এ ব্যাপারে নিয়মতান্ত্রিক কিছু করেননি। তাছাড়া তার খেলাফতের সময়টা তো অধিকাংশ কেটেছে মাথাচাড়া দিয়ে উঠা বিভিন্ন নব্য বাতিল ফেরকাকে স্তমিত করার ক্ষেত্রে। যুগ চলল সামনের দিকে , হযরত উমর রা: এর খেলাফত কালের শুরু কয়েকটি বছর সেই ধারাবাহিকতাই কেটে গেল। এর দ্বারা বুঝাগেল তারাবী নামাযের রাকাআত সংখ্যা বিশরাকাআত।

তারাবীর নামাজ ৮ রাকাত নাকি ২০ রাকাত ???

তারাবীহ নামাজ ২০ রাকআত। যারা বলে ৮ রাকাআত তাদের বক্তব্য সঠিক নয় । মুলত ধর্মপ্রান সাধারন মুসলমানদের মধ্যেবিভেদ সৃষ্টির লক্ষে আহলে হাদীস বা লামাজহাবী সম্প্রদায় ৮ রাকাআত তারাবীহ এই মতামতের নেতৃত্ব দিয়ে থাকে । সংশয়নিরসনের জন্য ৮ রাকআত বা এসংক্রান্ত বুখারীও মুসলিম শরীফে বর্নিত হাদীস ও তার সঠিক মর্ম নিম্নে তুলে ধরা হল।

111
প্রথম হাদীসঃ-আবু সালামা ইবনে আব্দুর রহমান থেকে বর্ণিত, তিনি আম্মাজান আয়েশা (রাঃ) কে জিজ্ঞেস করলেন,রমজানে রাসুল (সাঃ) এর নামাজ কেমন ছিল? উত্তরে তিনি বললেন, রাসুল (সাঃ) রমজানে ও অন্যান্য মাসে বিতির সহএগার রাকআতের বশী পড়তেন না।(বুখরী শরীফ হাঃ নং ১১৪৭)

দ্বিতীয় হাদীসঃ-ইয়াহইয়া ইবনে আবু সালামা (রঃ) বলেন আমি রাসুল (সঃ) এর রাত্রী কালীন নামাজ সম্পর্কে আয়েশা(রাঃ) কে জিজ্ঞেস করলাম । উত্তরে তিনি বললেন, রাসুল(সঃ) রাত্রে তের রাকআত নামাজ আদায় করতেন । প্রথমে আটরাকাত পড়তেন , এর পর বিতির পড়তেন, তার পর দুই রাকত নামাজ বসে আদায় করতেন ।( মুসলিম শরীফ- হাঃ নং১৭২৪)

এজাতীয় হাদীস দ্বারা লা মাজহাবী সম্প্রদায়- তারাবীহ ৮ রাকাত এর উপর দলীলপেশ করে থাকে।উপরোক্ত হাদীস সমূহের

উত্তরঃ-প্রথম উত্তর: আয়েশা (রাঃ) থেকে উপরোক্ত হাদীস দুটি যেমনি ভাবে সহীহ সনদে বর্ণিত হয়েছে ঠিক তেমনিমুসলিম শরীফেই আয়েশা (রাঃ) থেকে দশ রাকাতের হাদীস ও বর্ণিত আছে।

যেমন হাদীসঃ-কাসেম ইবনে মুহাম্মদ থেকে বর্ণিত তিনি বলেন , আমি আয়েশা (রাঃ) কে বলতে শুনেছি যে, রাসুল (সাঃ)রাত্রিতে দশ রাকাত নামাজ, এক রাকাত বিতির,ও ফজরের দুই রাকাত সুন্নত সহ মোট ১৩ রাকাত পড়তেন।( মুসলিমশরীফ- হাঃ নং ১৭২৭)

এমন কি আয়েশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত হদীস গুলোর প্রতি লক্ষ করলে বোঝা যায় রাসুল (সাঃ) রাত্রীকালীন নামাজ- কোনরাত্রীতে ১১ রাকাত ,কখনো১৩ রাকাত কখনো ৯ রাকাত, আবার কখনো ৭ রাকাত ও, আদায় করতেন । সুতরাং আয়েশা(রাঃ) এর হাদীস দ্বারা কোন সংখ্যা নির্দিষ্ট করা সম্পুর্ন অযৌক্তিক।

দ্বিতীয় উত্তরঃ-প্রকৃত পক্ষে আয়েশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত হাদীস গুলো তাহাজ্জুদ সম্পর্কিত , তারাবীহ সম্পর্কিত নয় ।একারনেই হাদীস গ্রন্থাকারগনএজাতীয় হাদীসকে তাহাজ্জুদের অধ্যায়ে উল্লেখ করেছেন , তারাবীর অধ্যায়ে উল্লেখ করেননি।

তৃতীয় উত্তরঃ-আহলে হাদীসগন তারাবী ৮ রাকাত হওয়ার স্বপক্ষে যে হাদীসগুলো পেশ করে থাকেন, সেঅনুযায়ী তারানিজেরাই আমল করেন না। কেননা হাদীসে রমজান ও অন্যান্য মাসের কথাও উল্লেখ রয়েছে , অথচ তারা তাদের হাদীসঅনুযায়ী অন্যান্য মাসে তারাবীহ পড়েনা।

বিশ রাকাত তারাবীর দলীল সমুহ:১ নং হাদীসঃ-সায়ের ইবনে ইয়াজিদ (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন সাহাবা গন উমর(রাঃ) এর খেলাফত কালে রমজান মাসে বিশ রাকাত তারাবীহ পড়তেন ।(বাইহাকী শরীফ-খঃ ২/৪৯৬ হাঃ নং ৪৬১৭)

২ নং হাদীসঃ-ইয়াজিদ ইবনে রুমান (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেনঃ- হযরত উমর (রাঃ) এর যুগে সাহাবারা বিতির সহতেইশ রাকাত তারাবীহ পড়তেন । (মুয়াত্তা মালেক খঃ ১পৃঃ ১১৫)

৩ নং হাদীসঃ-আতা ইবনে আবী রাবাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন আমি সাহাবাদেরকে বিতির সহ তেইশ রাকাততারাবী পড়তে দেখেছি মুসান্নাফে ইবনে আবি শায়বা – ৫/২২৪)(উল্লেখিত সবগুলো হাদীস সহীহ)এছাড়াও অসংখ্য হাদীসদ্বারা একথা সুস্পষ্ট রুপে প্রমানিত হয় যে, তারাবীহ নামাজ ২০ রাকাত যার উপর খোলাফয়ে রাশেদীন ,সমস্ত সাহাবা ,তাবেই, তাবে তাবেই, সালফে সালেহীন গন, ঐক্যমতে আমল করেছেন। এবং চার মাজহাবের ইমাম গনও এ ব্যাপারেঐক্যমত পোষন করেছেন ।সুতরাং যারা ৮ রাকাত তারাবীর কথা বলেন ,তারা মুলতসরলমনা মুসলমানদের অন্তরে বিভ্রান্তিরবিষ ঢেলে ইসলামকে বিতর্কিত করতে চান।আল্লাহ তা’য়ালা আমাদের সঠিক বুঝ দান করুক। আমিন

চার মাযহাবের দৃষ্টিতে তারাবির নামাজ কত রাকাত 

হানাফী মাযহাবের বর্ণনা: হযরত আসাদ ইবনে আমর ইমাম আবু ইউসুফ রহ: থেকে বর্ণনা করেছেন যে, আমি ইমাম আবু হানিফা রহ: কে তারাবী এবং এ ব্যপারে উমর রা: এর কর্ম সম্পর্কে প্রশ্ন করি। তিনি এর উত্তরে বলেছেন। তারাবী সুন্নতে মুয়াক্কাদা। এবং হযরত ওমর রা: তা নিজের পক্ষ থেকে অনুমান করে কিছুর আবিস্কারও করেননি, বরং তিনি দলীলের ভিত্তিতে এবং নবীজী থেকে প্রাপ্ত কোন নির্দেশনার ভিত্তিতে এ আদেশ করেছেন। (আলবাহরুর রায়েক, বাবুল বিতর ওয়াল নাওয়াফেল ১ম খন্ড,১১৬পৃষ্ঠা, দেওবন্দ প্রকাশনী)

উক্ত বর্ণনা দ্বারা এবং সর্বযুগে হানাফী মাযহাবের মুহাক্কিক উলামা ও আনুসারী সকলের আমল বিশ রাকআত তারাবীর উপর। হানাফী মাযহাবের ফিকহও ফাতওয়ার সকল কিতাবে বিশ রাকআত তারাবীর কথাই বলা হয়েছে। সুতরাং এর কম করা যাবে না। 

মালেকী মাযহাব: তারাবীর রাকআত সংখ্যা নিয়ে তাদের মাঝে কিছুটা মতপার্থক্য আছে, কিন্তু তা তারাবীর বিশ রাকআত থেকে কম হবে এনিয়ে নয়, বরং কারো বর্ণনায় আছে বিতর সহ ৩৯ রাকআত ।  (আলমুদাওয়ানাতুল কুবরা, ১খন্ড, ১৯৩ পৃষ্ঠা।)  তবে মালেকী মাযহাবের কোন কোন মুহাদ্দিস যেমন ইবনে আব্দুল বার রহ: প্রমূখ তারাবীর নামায (২০) বিশ রাকআত পড়াকেই উত্তম ও গ্রহযোগ্য মনে করেন। 

শাফেয়ী মাযহাব: ইমাম শাফেয়ী রহ: এর নিজে লেখা , কিতাবুল উম্ম, এই গ্রন্থে রয়েছে যে, তারাবীর নামায বিশ রাকআত পড়া আমার নিকট পছন্দনীয়। কেননা উমর রা: থেকে এমনই বর্ণিত আছে। আর মক্কাবাসীগনও বিশ রাকাআত তারাবীর নামায পড়েন। (কিতাবুল উম ১ম খন্ড, ১৫৯ পৃষ্ঠা, দারুল ফিকর প্রকাশনী। আরো দেখুন আল মাজমু শারহুল মুহাযযাব, কিতাবুস সালাত, বাবুত তাতাওউ ,৫ম খন্ড, ৪৪পৃষ্ঠা দারুলহাদিস প্রকাশনী) 

হাম্বলী মাযহাব: এই মাযহাবের গ্রহণযোগ্য গ্রন্থ “আলমুগনী”তে রয়েছে যে, তারাবী নামায সুন্নতে মুয়াক্কাদা, আর সর্বপ্রথম রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামই তারাবীর নামায পড়েছেন। তবে হযরত উমর রা: এর দিকে যে , তারাবীর নামাযকে সম্পর্কিত করা হয়, তার মর্ম হলো এইযে, হযরত উমর রা: সাহাবায়ে কেরামের সর্বসমম্মত রায় অনুযায়ী জামাতের সাথে নিয়মতান্ত্রিক তারাবী পড়ার বিধানের প্রচলন করেছেন। নতুবা মূল তারাবীর সুচনা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকেই হয়েছে। আব আব্দুল্লাহ আহমদ ইবনে হাম্বলের মতে তারাবী নামায বিশ রাকাআত। (আলমুগনী ১ম খন্ড,৮৩৩ও ৮৩৪ পৃষ্ঠা) 

ইজমা এর আলোকে তারাবীর নামাজ কত রাকআত 
২০ রাকাআত তারাবী রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সময় থেকে যুগ যুগ ধরে অনবরত চলে আসছে। বিশেষ করে হযরত উমর রা: এর খিলাফত কালে তারাবীর নামায জামাআতবদ্ধভাবে পড়ার প্রতি গুরুত্বারোপ করার ফলে পবিত্র মক্কা-মদীনাসহ আরব আজম তথা তামাম পৃথিবীতে মুসলমানদের নিকট এ বিষয়টা ব্যাপক ও সুস্পষ্ট হয়ে যায়। কয়েকটি অনির্ভরযোগ্য বিচ্ছিন্ন ঘটনা ব্যতীত সর্বত্রই মুসলমানরা ২০ রাকাআত তারাবী পড়তে থাকে বরং তারাবী ২০ রাকাআত হওয়ার ব্যপারে সকল মুহাজির ও আনসার সাহাবী এবং গোটা মুসলিম উম্মাহর ইজমা তথা ঐক্যমত সংঘটিত হয়। ২০ রাকাআত তারাবীর ব্যাপারে খুলাফায়ে রাশেদীন এবং অন্য সাহাবীর কোন ধরণের আপত্তি কোন কিতাবে উল্লেখ নেই। পবিত্র মক্কা-মদীনা সহ যুগ যুগ ধরে সর্বত্রই ২০ রাকাআত তারাবীর নিয়ম চলে আসাই এই ইজমার (মুসলি উম্মাহর ঐক্যমতের ) উজ্জল দলীল বহন করে। তার পরেও সুদৃঢ়ভাবে উপলব্ধি করার জন্য মুসলিম বিশ্বের বরেণ্য কয়েকজন ইমামের উক্তি নিম্নে প্রদত্ত হলো-বিখ্যাত তাবেয়ী, ইমাম আ’তা বিন আবীরাবাহ (রহ:) বলেন: ০আমি লোকদেরকে (সাহাবী ও তাবেয়ীগণকে) পেয়েছি, তারা বিতরসহ ২৩ রাকাআত পড়তেন। প্রখ্যাত মহাদ্দিস আল্লামা মোল্লা আলী কারী (রহ:) লিখেছেন:তারাবীর নামায ২০ রাকাআত এর উপর সব সাহাবায়ে কিরামের ইজমা (সর্ব সম্মত ঐক্যমত) সংঘটিত হয়েছে। বুখারী শরীফের ব্যাখ্যাকার ইমাম ক্বাসতালানী (রহ:) লিখেছেন:হযরত উমর (রা:) এর যুগের অবস্থা প্রায় ইজমা বা সর্বসম্মত ঐক্যমত পর্যায়ের । ইমাম ইবনে কুদামা হাম্বলী (রহ:) তাঁর বিখ্যাত গ্রন্থ আল মুগনীতে লিখেন: হযরত উমর (রহ:) যা করেছেন এবং যে বিষয়ে সব সাহাবায়ে কিরাম ঐ সময়ে ইজমা (সর্বসম্মত ঐক্য) হয়েছেন, তা অনুসরণের ক্ষেত্রে সর্বাপেক্ষা গ্রহণযোগ ও সর্বোত্তম। উল্লেখ্য যে, ইবনে কুদামা (রহ:) এর উপরোক্ত বক্তব্যে ইজমার গ্রহণযোগ্যতা, বিশেষ করে সাহাবীগণের ইজমা সর্বাপেক্ষা প্রাধান্যযোগ্য ও সর্বোত্তম অনুসরণীয় হওয়ার প্রতিও ইঙ্গিত রয়েছে।

তারাবীর নামাযের রাকাত সংখ্যা নিয়ে প্রশ্ন

প্রশ্ন : আমি প্রশ্নটি আগেও করেছিলাম। আশা করি এর উত্তর দিয়ে আমাকে উপকৃত করবেন। কারণ এর আগে আমি সন্তোষজনক জবাব পাইনি। প্রশ্নটি তারাবীর নামায সম্পর্কে। তারাবীর নামায কি ১১ রাকাত, নাকি ২০ রাকাত? সুন্নাহ অনুযায়ী তো তারাবীর নামায ১১ রাকাত । শাইখ আলবানী রহিমাহুল্লাহ “আলক্বিয়াম ওয়াত তারাউয়ীহ” বইতে বলেছেন তারাবী নামায ১১ রাকাত। এখন কিছু মানুষ সেসব মসজিদে নামায পড়েন যেখানে ১১ রাকাত তারাবী পড়া হয়। আবার কিছু মানুষ সেসব মসজিদে নামায পড়েন যেখানে ২০ রাকাত তারাবী পড়া হয়। এখানে যুক্তরাষ্ট্রে এটি একটি সংবেদনশীল মাসয়ালা হয়ে দাঁড়িয়েছে। যিনি ১১ রাকাত তারাবী পড়েন তিনি ২০ রাকাত সালাত আদায়কারীকে ভৎর্সনা করেন। আবার যিনি ২০ রাকাত তারাবী পড়েন তিনি ১১ রাকাত সালাত আদায়কারীকে ভৎর্সনা করেন। এটা নিয়ে একটা ফিতনা (গোলযোগ) সৃষ্টি হয়েছে। এমনকি মসজিদে হারামেও ২০ রাকাত তারাবী পড়া হয়। তাহলে মসজিদে হারাম ও মসজিদে নববীতে সুন্নাহর বিপরীত আমল হচ্ছে কেন? কেন তাঁরা মসজিদে হারাম ও মসজিদে নববীতে ২০ রাকাত তারাবী নামায আদায় করেন?

উত্তর:
সকল প্রশংসা আল্লাহর জন্য। আলেমদের ইজতিহাদনির্ভর মাসয়ালাগুলো নিয়ে কোন মুসলিমের সংবেদনশীল আচরণ করাকে আমরা সমীচীন মনে করি না। যে আচরণের কারণে মুসলমানদের মাঝে বিভেদ ও ফিতনা সৃষ্টি হয়।

শাইখ ইবনে উছাইমীন রহিমাহুল্লাহকে এমন ব্যক্তি সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হয় যিনি ইমামের সাথে ১০ রাকাত তারাবী নামায পড়ে বিতিরের নামাযের অপেক্ষায় বসে থাকেন, ইমামের সাথে অবশিষ্ট তারাবী নামায পড়েন না, তখন তিনি বলেন:

“এটি খুবই দুঃখজনক যে, আমরা মুসলিম উম্মাহর মধ্যে এমন একটি দল দেখি যারা ভিন্ন মতের সুযোগ আছে এমন বিষয় নিয়ে বিভেদ সৃষ্টি করেন। এই ভিন্ন মতকে তারা অন্তরগুলোর বিচ্ছেদের কারণ বানিয়ে ফেলেন। সাহাবীদের সময়েও এই উম্মতের মাঝে মতভেদ ছিল, কিন্তু তা সত্ত্বেও তাঁদের অন্তরগুলো ছিল ঐক্যবদ্ধ। তাই দ্বীনদারদের কর্তব্য, বিশেষভাবে যুব-সমাজের কর্তব্য হচ্ছে- ঐক্যবদ্ধ থাকা। কারণ শত্রুরা তাদেরকে নানারকম ফাঁদে ফেলানোর জন্য ওঁত পেতে বসে আছে।”[আশ-শারহুল মুমতি‘ (৪২২৫)]

এই মাসয়ালার ব্যাপারে দুই পক্ষই অতিরিক্ত বাড়াবাড়ি করে। প্রথম পক্ষের লোকেরা যারা ১১ রাকাতের বেশি তারাবী পড়েন তাদের আমলকে একেবারে অস্বীকার করে এ আমলকে বিদআত আখ্যায়িত করেন। আর দ্বিতীয় পক্ষের লোকেরা যারা শুধু ১১ রাকাতে সীমাবদ্ধ থাকেন তাদের আমলকে অস্বীকার করে বলেন: তারা ইজমা‘ এর খেলাফ করছে।

চলুন আমরা এ ব্যাপারে শাইখ ইবনে উছাইমীন রহিমাহুল্লাহ এর উপদেশ শুনি, বলেন:

“এক্ষেত্রে আমরা বলব: বাড়াবাড়ি বা শিথিলতা কোনটাই উচিত নয়। কেউ কেউ আছেন সুন্নাহ্ তে বর্ণিত সংখ্যা মানার ব্যাপারে কড়াকড়ি আরোপ করেন এবং বলেন: সুন্নাহ্ তে যে সংখ্যার বর্ণনা এসেছে তা থেকে বাড়ানো নাজায়েয। যে ব্যক্তি সে সংখ্যার বেশী তারাবী পড়ে তার কঠোর বিরোধিতা করেন এবং বলেন যে, সে গুনাহগার ও সীমালঙ্ঘণকারী।

এই দৃষ্টিভঙ্গি যে ভুল এতে কোন সন্দেহ নেই। কিভাবে সে ব্যক্তি গুনাহগার বা সীমালঙ্ঘণকারী হবে যেখানে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে রাতের সালাত (কিয়ামুল লাইল) সম্পর্কে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেছিলেন:“দুই রাকাত দুই রাকাত।” তিনি তো কোন সংখ্যা নির্দিষ্ট করে দেননি। এ কথা সবারই জানা আছে যে,যেই সাহাবী রাতের সালাত সম্পর্কে নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) কে প্রশ্ন করেছিলেন, তিনি রাতের নামাযের সংখ্যা জানতেন না। কারণ যিনি সালাতের পদ্ধতিই জানেন না,রাকাত সংখ্যা সম্পর্কে তার না-জানবারই কথা। আর তিনি রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর সেবকও ছিলেন না যে আমরা এ কথা বলব- তিনি রাসূলের বাসার ভিতরের আমল কি সেটা জানতেন। যেহেতু নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সেই সাহাবীকে কোন সংখ্যা নির্দিষ্ট করে দেননি, শুধু সালাতের পদ্ধতি বর্ণনা করেছেন,এতে জানা গেল যে, এ বিষয়টি উন্মুক্ত। সুতরাং যে কেউ ইচ্ছা করলে ১০০ রাকাত তারাবীর নামায ও ১ রাকাত বিতির নামায আদায় করতে পারেন। আর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-বাণী : (صلوا كما رأيتموني أصلي) “তোমরা আমাকে যেভাবে সালাত আদায় করতে দেখলে সেভাবে সালাত আদায় কর।”

এই হাদিসটির বিধান সাধারণ নয়; এমনকি এ মতাবলম্বীদের নিকটও নয়। তাই তো তারা কোন ব্যক্তির উপর একবার ৫ রাকাত,একবার ৭ রাকাত, অন্যবার ৯ রাকাত বিতির আদায় করা ওয়াজিব বলেন না। আমরা যদি এ হাদিসকে সাধারণভাবে গ্রহণ করি তাহলে আমাদেরকে বলতে হবে যে বিতিরের নামায কোনবার ৫ রাকাত,কোনবার ৭ রাকাত এবং কোনবার ৯ রাকাত আদায় করা ওয়াজিব। বরং “তোমরা আমাকে যেভাবে সালাত আদায় করতে দেখলে সেভাবে সালাত আদায় কর”-এ হাদিস দ্বারা সালাত আদায়ের পদ্ধতি বুঝানো উদ্দেশ্য; সালাতের রাকাত সংখ্যা নয়। তবে রাকাত সংখ্যা নির্দিষ্ট করে এমন অন্য কোন দলীল পাওয়া গেলে সেটা ভিন্ন কথা।

যাই হোক,যে বিষয়ে শরিয়তে প্রশস্ততা আছে সে বিষয়ে কারো উপর চাপ প্রয়োগ করা উচিত নয়। ব্যাপারটি এ পর্যন্ত গড়িয়েছে যে,আমরা দেখেছি কিছু ভাই এ বিষয়টি নিয়ে এত বেশি বাড়াবাড়ি করেন যে,যেসব ইমাম ১১ রাকাতের বেশি তারাবী নামায পড়েন এরা তাদের উপর বিদআতের অপবাদ দেন এবং (১১ রাকাতের পর) মসজিদ ত্যাগ করেন। এতে করে তারা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর বর্ণিত সওয়াব থেকে বঞ্চিত হন। তিনি বলেছেন:“ইমাম নামায শেষ করা পর্যন্ত যে ব্যক্তি ইমামের সাথে কিয়ামুল লাইল (রাতের নামায) পড়বে তার জন্য সম্পূর্ণ রাতে নামায পড়ার সওয়াব লেখা হবে।” [হাদিসটি বর্ণনা করেছেন তিরমিযি (৮০৬)এবং ‘সহীহুত তিরমিযি গ্রন্থে (৬৪৬)আলবানী হাদিসটিকে সহীহ্ আখ্যায়িত করেছেন]এ শ্রেণীর লোকদের মধ্যে অনেকে ১০ রাকাত বিতির আদায় করে বসে থাকে; ফলে কাতার ভঙ্গ হয়। আবার কখনও তারা কথাবার্তা বলে; যার ফলে মুসল্লিদের সালাতে বিঘ্ন হয়।

আমরা এ ব্যাপারে কোন সন্দেহ পোষণ করছি না যে তাঁরা ভাল চাচ্ছেন এবং এক্ষেত্রে তাঁরা মুজতাহিদ; কিন্তু সব মুজতাহিদ সঠিক সিদ্ধান্তে পৌঁছেন না।

আর দ্বিতীয় পক্ষটি প্রথম পক্ষের সম্পূর্ণ বিপরীত। যারা ১১ রাকাতের মধ্যে তারাবীকে সীমাবদ্ধ রাখতে চান এরা তাদের কঠোর বিরোধিতা করেন এবং বলেন যে, তুমি ইজমা‘ থেকে বের হয়ে গেছ। অথচ আল্লাহ তা‘আলা বলেছেন:“আর যে তার কাছে সত্য প্রকাশিত হওয়ার পর রাসূলের বিরোধিতা করে এবং মু’মিনদের পথের বিপরীত পথ অনুসরণ করে আমি তাকে সেদিকে পরিচালিত করব যেদিকে সে অভিমুখী হয় এবং আমি তাকে প্রবেশ করাব জাহান্নামে। আর তা কতই না খারাপ প্রত্যাবর্তন।” [আন-নিসা, ৪:১১৫]

তারা বলেন যে, আপনার আগে যারা অতিবাহিত হয়েছেন তাঁরা শুধু ২৩ রাকাত তারাবীই জানতেন। এরপর তারা বিপক্ষবাদীদের তীব্র বিরোধিতা শুরু করেন। এটাও ভুল।[আশশারহুল মুমতি (৩/৭৩-৭৫)]

যারা ৮ রাকাতের বেশি তারাবীর নামায পড়া নাজায়েয মনে করেন তারা যে দলীল দেন সেটা হলো আবু সালামাহ্ ইবনে আব্দুর রহমান এর হাদিস যাতে তিনি আয়েশা (রাদিয়াল্লাহু আনহা) কে প্রশ্ন করেছিলেন :“রমজানে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর সালাত কেমন ছিল?” তিনি বললেন: “রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম রমজানে বা রমজানের বাইরে ১১ রাকাতের বেশি আদায় করতেন না। তিনি ৪ রাকাত সালাত আদায় করতেন- এর সৌন্দর্য ও দৈর্ঘ্য সম্পর্কে প্রশ্ন করবেন না (অর্থাৎ তা এতই সুন্দর ও দীর্ঘ হত)। এরপর তিনি আরো ৪ রাকাত সালাত আদায় করতেন-এর সৌন্দর্য ও দৈর্ঘ্য সম্পর্কে প্রশ্ন করবেন না (অর্থাৎ তা এতই সুন্দর ও দীর্ঘ হত)। এরপর তিনি ৩ রাকাত সালাত আদায় করতেন। আমি বলতাম:“ইয়া রাসূলুল্লাহ! আপনি কি বিতির পড়ার আগে ঘুমিয়ে যাবেন?” তিনি বলতেন:

“হে আয়েশা! আমার চোখ দুটি ঘুমালেও অন্তর ঘুমায় না।” [হাদিসটি বর্ণনা করেছেন ইমাম বুখারী (১৯০৯) ও ইমাম মুসলিম (৭৩৮)]

তারা বলেন: এই হাদিসটি নির্দেশ করছে যে, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রমজানে ও রমজানের বাইরে রাতের বেলা নিয়মিত এভাবেই সালাত আদায় করতেন। আলেমগণ এ হাদিস দিয়ে দলীলের বিপক্ষে বলেন যে, এই হাদিসটি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের আমল সাব্যস্ত করছে। কিন্তু কোন আমল দ্বারা তো ওয়াজিব সাব্যস্ত করা যায় না।

আর রাতের সালাত (এর মধ্যে তারাবীর নামাযও শামিল) যে কোন সংখ্যার মধ্যে সুনির্দিষ্ট নয় এ ব্যাপারে বর্ণিত স্পষ্ট দলীলগুলোর মধ্যে একটি হলো ইবনে উমর (রাঃ) এর হাদিস- “এক ব্যক্তি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে রাতের সালাত সম্পর্কে প্রশ্ন করলেন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন:“রাতের সালাত দুই রাকাত, দুই রাকাত। আপনাদের মধ্যে কেউ যদি ফজরের ওয়াক্ত হয়ে যাওয়ার আশংকা করেন তবে তিনি যেন আরো এক রাকাত নামায পড়ে নেন। যাতে করে এ রাকাতটি পূর্বে আদায়কৃত সংখ্যাকে বিতির (বেজোড়) করে দেয়।”[হাদিসটি বর্ণনা করেছেন,ইমাম বুখারী (৯৪৬)ও ইমাম মুসলিম (৭৪৯)]

বিভিন্ন গ্রহণযোগ্য ফিক্বহী মাজহাবের আলেমগণের মতামতের দিকে দৃষ্টি দিলে পরিষ্কার হয় যে, এ বিষয়ে প্রশস্ততা আছে। ১১ রাকাতের অধিক রাকাত তারাবী পড়তে দোষের কিছু নেই।

হানাফী মাজহাবের আলেম ইমাম আস্‌সারখাসী বলেন: “আমাদের মতে বিতির ছাড়া তারাবী ২০ রাকাত ।”[আল্‌মাবসুত (২/১৪৫)]

ইবনে ক্বুদামাহ বলেন: “আবু-আবদুল্লাহ অর্থাৎ ইমাম আহমাদ (রাহিমাহুল্লাহ) এর কাছে পছন্দনীয় মত হলো তারাবী ২০ রাকাত। এই মতে আরো রয়েছেন ইমাম ছাওরী, ইমাম আবু-হানীফা ও ইমাম শাফেয়ী। আর ইমাম মালেক বলেছেন: “তারবীহ ৩৬ রাকাত।”[আলমুগনী (১/৪৫৭)]

ইমাম নববী বলেছেন: “আলেমগণের ইজমা অনুযায়ী তারাবীর সালাত পড়া সুন্নত। আর আমাদের মাজহাব হচ্ছে- তারাবীর নামায ১০ সালামে ২০ রাকাত। একাকী পড়াও জায়েয, জামাতের সাথে পড়াও জায়েয।”[আলমাজমূ (৪/৩১)]

এই হচ্ছে তারাবী নামাযের রাকাতের সংখ্যার ব্যাপারে চার মাজহাবের অভিমত। তাঁদের সবাই ১১ রাকাতের বেশী পড়ার ব্যাপারে বলেছেন। সম্ভবত যে কারণে তাঁরা ১১ রাকাতের বেশি পড়ার কথা বলেছেন সেটা হলো:

১.তাঁরা দেখেছেন যে,আয়েশা (রাদিয়াল্লাহু আনহা)এর হাদিস নির্দিষ্ট কোন সংখ্যা নির্ধারণ করে না।

২.পূর্ববর্তী সাহাবী ও তাবেয়ীগণের অনেকের কাছ থেকে ১১ রাকাতের বেশি তারাবী পড়ার বর্ণনা পাওয়া যায়। [আল-মুগনী (২/৬০৪)ও আল-মাজমূ (৪/৩২)]

৩.নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যে ১১ রাকাত সালাত আদায় করতেন তা এত দীর্ঘ করতেন যে এতে পুরো রাতই লেগে যেত। এমনও ঘটেছে এক রাতে নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাঁর সাহাবীদেরকে নিয়ে তারাবীর সালাত আদায় করতে করতে ফজর হওয়ার অল্প কিছুক্ষণ আগে শেষ করেছিলেন। এমনকি সাহাবীগণ সেহেরী খেতে না-পারার আশঙ্কা করেছিলেন। সাহাবীগণ রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের পিছনে সালাত আদায় করতে পছন্দ করতেন এবং এটা তাঁদের কাছে দীর্ঘ মনে হত না। কিন্তু আলেমগণ খেয়াল করলেন ইমাম যদি এভাবে দীর্ঘক্ষণ ধরে সালাত আদায় করেন তবে মুসল্লিদের জন্য তা কষ্টকর হবে। যা তাদেরকে তারাবীর নামায থেকে বিমুখ করতে পারে। তাই তাঁরা তেলাওয়াত সংক্ষিপ্ত করে রাকাত সংখ্যা বাড়ানোর পক্ষে মত দিলেন।

সার কথা হলো- যিনি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণিত পদ্ধতিতে ১১ রাকাত সালাত পড়েন সেটা ভাল এবং এতে সুন্নাহ পালন হয়। আর যিনি তেলাওয়াত সংক্ষিপ্ত করে রাকাতের সংখ্যা বাড়িয়ে পড়েন সেটাও ভাল। যিনি এই দুইটির কোন একটি করেন তাঁকে নিন্দা করার কিছু নেই।

শাইখুল ইসলাম ইবনে তাইমিয়্যাহ বলেছেন: “যিনি ইমাম আবু হানীফা,শাফেয়ী ও আহমাদের মাজহাব অনুসারে ২০ রাকাত তারাবী সালাত আদায় করল অথবা ইমাম মালেকের মাজহাব অনুসারে ৩৬ রাকাত তারাবী আদায় করল অথবা ১৩ বা ১১ রাকাত তারাবী আদায় করল প্রত্যেকেই ভাল আমল করল। এ ব্যাপারে সুস্পষ্ট নির্দেশনা না থাকার কারণে ইমাম আহমাদ এ মতই পোষণ করতেন। তাই তেলাওয়াত দীর্ঘ বা সংক্ষিপ্ত করার অনুপাত অনুযায়ী রাকাত সংখ্যা বেশি বা কম হবে।”[আল-ইখতিয়ারাত, পৃষ্ঠা- ৬৪]

আস-সুয়ুতী বলেছেন: “রমজানে ক্বিয়াম তথা রাতের নামায আদায় করার আদেশ দিয়ে ও এ ব্যাপারে উৎসাহিত করে অনেক সহীহ ও হাসান হাদিস বর্ণিত হয়েছে। এক্ষেত্রে কোন সংখ্যাকে সুনির্দিষ্ট করা হয়নি। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ২০ রাকাত তারাবী পড়েছেন বলে সাব্যস্ত হয়নি। বরং তিনি রাতে সালাত আদায় করেছেন। কিন্তু কত রাকাত আদায় করেছেন এই সংখ্যা উল্লেখিত হয়নি। এরপর ৪র্থ রাতে দেরি করলেন এই আশঙ্কায় যে তারাবীর সালাত তাঁদের উপর ফরয করে দেয়া হতে পারে, পরে তাঁর উম্মত তা পালন করতে অসমর্থ হবেন।”

ইবনে হাজার হাইসামী বলেছেন: “নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছ থেকে তারাবীর সালাত ২০ রাকাত হওয়ার ব্যাপারে কোন সহীহ বর্ণনা পাওয়া যায়নি। আর এই ব্যাপারে যা বর্ণিত হয়েছে- “তিনি ২০ রাকাত সালাত আদায় করতেন; তা অত্যন্ত জয়ীফ (দুর্বল)।”[আল্‌মাওসূ‘আহ আল-ফিক্বহিয়্যাহ (২৭/১৪২-১৪৫)]

অতএব প্রশ্নকারী ভাই, আপনি তারাবীর সালাত ২০ রাকাত হওয়ার ব্যাপারে অবাক হবেন না। কারণ এর আগে ইমামগণ প্রজন্মের পর প্রজন্ম তা পালন করেছেন। আর তাঁদের সবার মধ্যেই কল্যাণ রয়েছে।

হযরত উমর রা:, আনসার ও মুহাজির সাহাবীদের আমল

আমাদের দেখতে হবে যে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের পূর্ণ সাহচার্য গ্রহণ করে যারা দ্বীন শিখেছেন। সে সব সাহাবীদের আমল কেমন ছিল। তাদের অনুসৃত পথই সুস্পষ্ট করে দিবে যে এটাই তো রাসূলের পথ। কেননা জেনে শুনে কখনোই তাঁরা রাসূলের পথের বিপরীদ কোন আমল করেননি। এবং কাউকে করতে দেখলে তারা চুপ করেও বসে থাকেননি।

সুতরাং কোন ব্যপারে সাহাবায়ে কেরামের ঐক্যমত পোষন করার অর্থই হবে যে এর বিপরীদ পথ কখনোই রাসূলের পথ নয়। তাই রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন:

عليكم بسنتي ، و سنة الخلفاء الراشدين المهديين من بعدي ، تمسكوا بها ، و عضوا عليها بالنواجذ،

আমার স্ন্নুত ও আমার হেদায়াত প্রাপ্ত খলীফাগনের সুন্নতকে আকড়ে রাখবে। একে আবলম্বন করব এবং মাড়ির দাঁত দিয়ে প্রানপন করে কামড়ে রাখবে। (সুনানে আবু দাউদ হাদীস: ৪৬০৭ , জামে তিরমিযী হাদীস: ২৬৭৬)

রাসূলের উক্ত হিদায়েত মুতাবিক আমরা তালাশ করে দেখি, তারাবীর নামাযের রাকাআতের সংখ্যার ব্যপারে তাদের থেকে কোন বর্ণনা পাওয়া যায় কি না।

হযরত আব্দুর রহমান আলক্বারী রহ: বলেন, আমি রমযান মাসে একদা হযরত উমর রা: এর সঙ্গে “মসজিদে গেলাম, তখন দেখলাম লোকজন বিভিন্ন দলে বিভক্ত হয়ে তারাবী নামায পড়ছেন। কেউ একা পড়ছেন আবার কেউ দু চার জন সঙ্গে নিয়ে পড়ছেন। তখন হযরত উমর রা: বললেন তাদের সবাইকে যদি এক ইমামের পেছনে জামাআত বদ্ধ করে দেই তাহলে মনে হয় উত্তম হবে। এর পর তিনি তাদেরকে হযরত উবাই ইবনে কা’ব রা: এর পেছনে এক জামাআতবদ্ধ করে দিলেন। (বুখারী শরীফ ২য় খন্ড, ২০১০পৃষ্ঠা, মুয়াত্তা মালেক ১খন্ড, ১১৪পৃষ্ঠা)

হযরত ওমর রা: এর উক্ত সিদ্ধান্তের কারণ হিসেবে ইবনে আব্দুল বার রহ;: তার বিখ্যাত গ্রন্থ আত তামহীদ এ লিখেন, হযরত উমর রা এখানে নতুন কিছুই করেননি। তিনি তাই করেছেন যা খোদ রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পছন্দ করতেন। কিন্তু তিনি শুধু এই আশঙ্কায় যে নিয়মিত জামাআতে পড়লে উম্মতের উপর তারাবীর নামায ফরজ হয়ে যেতে পারে। তাই তিনি নিজে জামাআতের ব্যবস্থা করেননি। উমর রা: বিষয়টি ভালোভাবে জানতেন। তিনি দেখলেন রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর ইন্তেকালের পর ওহী বন্ধ হয়েগেছে। সুতরাং তারাবীর নামায ফরজ হওয়ার এখন আর আশঙ্কা নেই। তখন তিনি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর পছন্দ অনুযায়ী ১৪ হিজরীতে জামাআতে পড়ার ব্যবস্থা করেন। আল্লাহ তাআলা যেন এই মর্যাদা ও সুযোগ তার জন্যই রেখে দিয়েছিলেন। (আততামহীদ ৮ম খন্ড, ১০৮-১০৯ পৃষ্ঠা)

হযরত উমর রা: এর সুচিন্তিত রায় ও উপস্থিত সাহাবাদের সম্মতিক্রমে বিশ রাকাআত তারাবীর ধারাবাহিক আমল এর বর্ণনা তুলে ধরা হলো।

১. হযরত ইয়াযিদ ইবনে খুসাইফা রা: থেকে হযরত সায়েব ইবন ইয়াযীদ বলেন: তারা (সাহাবা ও তাবেয়ীন) উমর ইবনুল খাত্তাব রা. এর যুগে রমযান মাসে ২০ রাকাআত তারাবী পড়তেন । তিনি আরও বলেন যে, তারা নামাযে শতাধিক আয়াত বিশিষ্ট সুরা সমূহ পড়তেন এবং উসমান ইবনে আফফান রা. এর যুগে দীর্ঘ নামাজের কারণে তাদের কেউ কেউ লাঠিতে ভর করে দাঁড়াতেন। (আসসুনানুল কুবরা, বায়হাকী-২/৪৯৬)

২. সাহাবী হযরত সায়েব ইবনে ইয়াযীদ রা. এর অন্য আরেকটি বিবরণ হল: আমরা উমর ইবনুল খাত্তাব রা. এর যুগে বিশ রাকাআত এবং বিতর পড়তাম। (আসসুনানুল কুবরা, বায়হাকী-১খন্ড,২৬৭-২৬৮পৃ:)

৩. তাবেয়ী আব্দুল আযিয ইবনে রুফাই রহ. এর বিবরণ: হযরত উবাই ইবনে কা’ব রা. রমযান মাসে মদীনায় লোকদের নিয়ে বিশ রাকাআত তারাবী এবং তিন রাকাআত বিতর পড়তেন। (মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা, ২খন্ড, ২৮৫পৃ:)

মোট কথা উপরোক্ত বর্ণনা এবং এ ধরণের অন্যান্য সহীহ বর্ণনার ভিত্তিতে এবং সাহাবা ও তাবেয়ীনের যুগ থেকে চলে আসা সম্মিলিতও অবিচ্ছিন্ন কর্মের ভিত্তিতে আলেম গণের সর্বসম্মতি বয়ান হল এই যে, হযরত উমর রা: এর যুগে মসজিদে নববীতে বিশ রাকআত তারাবী হত। এ ব্যপারে শাইখুল ইসলাম আল্লামা ইবনে তাইমিয়া রহ: বলেছেন: এ বিষয়টি প্রমানিত যে, উবাই ইবনে কা’ব রমজানে তারবীতে মুসল্লিদের কে বিশ রাকআত পড়াতেন এবং তিন রাকআত বিতর পড়াতেন। (মাজমূউল ফাতাওয়া: ১৩তম খন্ড,১১২-১১৩ পৃষ্ঠা)

৪.বিখ্যাত তাবেয়ী ইমাম আবু আব্দুর রহমান আসসুলামী রহ: বলেন: হযরত আলী রা: রমযানে কারীগণকে ডেকে একজনকে আদেশ করেন যে, তিনি যেন লোকদের নিয়ে বিশ রাকআত পড়েন । (আসসুনানুল কুবরা লিল বায়হাকী ১খন্ড, ৪৯৬,৪৯৭ পৃষ্টা)

উল্লেখিত আলোচনা দ্বারা সুস্পষ্ট হচ্ছে যে, হযরত উমর , রা: হযরত উসমান রা: এবং হযরত আলী রা: এর খেলাফত কালে জামাআতের সাথে প্রকাশ্যে বিশ রাকাআত তারাবী নামায পড়া হত। এবং এই সোলানী যুগে বিশ রাকাআত তারাবীর আমল সাবীলূল মুমিনীন- মুমিনদের সকলের অনুসৃত পথ। বর্তমান যারা যারা বিশ রাকআত তারাবীর উপর আপত্তি করে এবং সুন্নাহ বা হাদীসের খেলাফ বলে তারা মূলত সাবীলুল মুমিনীন থেকে বিচ্যুতিই গ্র্রহন করে নিয়েছে।

লক্ষণীয় বিষয় হল, মসজিদে নববীতে ১৪ হিজরী থেকেই হযরত উবাই ইবনে কা’ব রা: এর ইমামতিতে প্রকাশ্যে বিশ রাকআত তারাবী পড়া হত। প্রশ্ন হল, সেই সময় মুসল্লী ও মুুক্তাদী হতেন কারা? এই মুহাজির ও আনসারী সাহাবীগনই সেই মুবারক জামাতের মুক্তাদী ও মুসল্লী ছিলেন। শীর্ষ স্থানীয় সাহাবায়ে কেরাম যাদের থেকে অন্যান্য সাহাবী দ্বীন শিখতেন যারা কুরআনের শিক্ষা, হাদীস বর্ণনা ও ফিকহ-ফতওয়ার স্তম্ভ ছিলেন তাদের অধিকাংশই তখন মদীনায় ছিলেন। দুই একজন যারা মদীনার বাইরে ছিলেন তারাও মক্কা মদীনার সাথে নিয়মিত যোগাযোগ রক্ষা করতেন এবং খলিফায়ে রাশেদের কর্ম সিদ্ধান্ত সম্পর্কে ওয়াকেফ হাল থাকতেন, তাদের একজনও কি বিশ রাকাআত তারাবীর বিপক্ষে কোন আপত্তি করেছেন? তাই তো আল্লামা ইবনে আব্দুল বার রহ: আলইস্তিযকার কিতাবে বলেন, এটাই হযরত উবাই ইবনে কা’ব রা: থেকে বিশুদ্ধ রূপে প্রমাণিত এবং এতে সাহাবীগণের কোন ভিন্নমত নেই । (আল ইসতিযকার ৫ম খন্ড, ১৫৭ পৃষ্ঠা)

শাইখুল ইসলাম আল্লামা ইবনে তাইমিয়া বলেন: এটা প্রমাণিত যে, উবাই ইবনে কা’ব রা: রমযানের তারাবীতে লোকদের নিয়ে বিশ রাকাআত পড়তেন এবং তিন রাকাআত বিতির পড়তেন। তাই অধিকাংশ আলেম এই সিন্ধান্তে উপনিত হয়েছেন যে এটাই সুন্নত। কেননা উবাই ইবনে কা’ব রা: মুহাজির ও আনসারী সাহাবাগনের উপস্থিতিতেই বিশ রাকাআত পড়িয়েছেন এবং কোন একজন সাহাবীও তাতে আপত্তি করেননি। (মাজমুউল ফাতওয়া, ইবনে তাইমিয়া: ২৩ খন্ড, ১১২,১১৩ পৃষ্ঠা)

আল্লামা কাসানী রহ: বলেন : উবাই ইবনে কা’ব রা: সাহাবাদের নিয়ে প্রতিরাতে বিশ রাকাআতই পড়তেন এবং সাহাবীদের একজনও এ ব্যপারে আপত্তি করেননি। সুতরাং এ ব্যপারে তাদের সকলের ইজমা সম্পন্ন হয়েছে। (বাদায়েউস সানায়ে: ১ম খন্ড, ৬৪৪ পৃষ্ঠা)

Tag: তারাবির নামাজ কয় রাকাত, তারাবির নামাজ কয় রাকাত করে পড়তে হয়, তারাবির নামাজ কয় রাকাত ও কি কি, তারাবির নামাজ কয় রাকাত কি কি, তারাবির নামাজ কয় রাকাত কিভাবে পরে, তারাবীহ নামাজ কয় রাকাত, tarabi namaz koy rakat bangla, তারাবি নামাজ আসলে কয় রাকাত, tarabi namaz koi rakat, তারাবির নামাজ কত রাকাত ও কি কি, তারাবির নামাজ কত রাকাত পড়া উত্তম, তারাবি নামাজ কত রাকাত, তারাবির নামাজ কত রাকাত, তারাবির নামাজ কত রাকাত সহীহ হাদিস, তারাবির নামাজ কত রাকাত দলিল সহ, তারাবির নামাজ কত রাকাত পড়ার নিয়ম, তারাবির নামাজ কয় রাকাত পড়তে হয়, তারাবির নামাজ কত রাকাত করে পড়তে হয়, রমজান মাসের তারাবির নামাজ কয় রাকাত, তারাবির নামাজ কয় রাকাত পড়া যায়, তারাবির নামাজ কত রাকাত সহি হাদিস, তারাবির নামাজ কত রাকাত হাদিস
Next Post Previous Post