শবে বারায়াতে করণীয় এবং বর্জনীয় | শবে বরাতে করণীয় ও বর্জনীয় | shabe barat | shab e barat

শবে বারায়াতে করণীয় এবং বর্জনীয় | শবে বরাতে করণীয় ও বর্জনীয় | shabe barat | shab e barat 

শবে বারায়াতে করণীয় এবং বর্জনীয় | শবে বরাতে করণীয় ও বর্জনীয় | shabe barat | shab e barat

শবে বরাতে যা করনীয় ও বর্জনীয়

আল্লাহ তায়ালা মানবজাতিকে পৃথিবীতে প্রেরণের শত বছর আগে তাদের রিজিক নির্ধারণ করে রাখলেও প্রতি বছর প্রতিটি মানুষের জীবনে যা’ ঘটবে, তা’ নির্ধারণ করা হয় পবিত্র শবে বরাতে। এ রাতে আল্লাহর রহমতের ফল্গুধারা উন্মুক্ত থাকে বান্দাহর জন্য। তাঁর অবারিত করুণা পুণ্যবান মানুষের ওপর সিঞ্চিত হয়। এ রাতকে হাদিস শরিফে ‘লাইলাতুন নিসফি মিন শাবান’ বা ‘মধ্য শাবানের রজনী’ বলা হয়েছে।

সাহাবি-তাবিয়ীগণের যুগের অনেক পরে এ রাতকে ‘লাইলাতুল বারাআত’ বা ‘বিমুক্তির রজনী’ বলে আখ্যায়িত করার প্রচলন শুরু হয়। মুহাদ্দিস ও ঐতিহাসিকগণ উল্লেখ করেছেন যে, ৪৪৮ হি. সনে বাইতুল মুকাদ্দাসে প্রথম এ রাতে প্রচলিত পদ্ধতিতে সালাত আদায়ের প্রচলন শুরু হয়। মিরকাতুল মাফাতীহ ৩/৩৮৮ হুজুর (স) রমজানের রোজা ব্যতীত শাবান মাসে যতো অধিক রোজা রাখতেন, অন্য মাসে ততো অধিক রোজা রাখতেন না।

এ জন্যেই হুজুর (স) শাবান মাসকে নিজের সঙ্গে সম্পৃক্ত করেছেন। হযরত আসমা ইবনে জায়েদ (রা) সূত্রে বর্ণিত-রাসূল ইরশাদ করেছেন : শাবান আমার মাস, আর রমজান আল্লাহর মাস। গাউসুল আযম হযরত আবদুল কাদের জিলানী (র) তার গুনিয়াতুত্বালেবীন কিতাবে লিখেছেন, দুনিয়ার ঈদুল আজহা ও ঈদুল ফিতর নামে মুসলমানদের জন্যে যেমন দু’টি ঈদ রয়েছে, তেমনি ঊর্ধ্বাকাশসমূহে ফেরেশতাগণের জন্যেও দু’টি ঈদ রজনী রয়েছে। এর একটি হচ্ছে শবে কদর, অপরটি শবে বরাত।

মুমিন বান্দাগণের জন্যে ঈদ-উত্সব দিনে থাকে। আর ফেরেশতাগণের ঈদ-উত্সব নির্ধারণ করা হয়েছে রাতে। কেননা মানুষ নিদ্রা যায় পক্ষান্তরে ফেরেশতাদের কোনো নিদ্রা নেই। তাই এ রজনীতে ব্যাপক পরিমাণ নফল আদায়ের মধ্যে অনেক ফজিলত নিহিত রয়েছে।

শবে বরাতে যা করনীয় বা শবে বরাতে করনীয় কি

হাদিস শরীফে শবে বরাতের নিম্নোক্ত পালনীয় আমল উল্লেখ রয়েছে :

১. কোনো বিশেষ ব্যবস্থা বাআয়োজন না করে সাধারণভাবে এ রাতে কবরস্থানে যাওয়া এবং মৃত ব্যক্তিদের জন্যে দোয়া করা, দরুদ-ইস্তেগফার পাঠ করে দোয়া করা।

২. এ রাতে জাগ্রত থেকে আল্লাহর ইবাদত তথা কুরআন তেলাওয়াত করা, অধিক হারে দরুদ পাঠ করা এবং নফল নামাজ পড়া। তবে নামাজের জন্য কোনো বাধ্যবাধকতা নেই; বরং সামর্থ্যানুসারে জামাত ব্যতীত অনির্দিষ্টভাবে নামাজ পড়া এবং নিজের জন্য ও সকল মুসলমানের জন্য দোয়া করা।

৩. শবে বরাতের পরদিন অর্থাত্ ১৫ শাবান নফল রোজা রাখা। রাসূলে আকরাম (স) ইরশাদ করেছেন : যখন তোমাদের সামনে শাবান মাসের পঞ্চদশ রাত শবে বরাত উপস্থিত হয়, তখন তোমরা সেই রাতে নামাজ পড়ো আর দিনের বেলায় রোজা রাখো। তবে যে কোনো নফল রোজা রাখার ক্ষেত্রে মূলনীতি হলো, কমপক্ষে একসাথে দু’টি রোজা রাখা উচিত। তাই পনের শাবানের সঙ্গে চৌদ্দ অথবা ষোল শাবান যোগ করে রোজা রাখাটাই অতি উত্তম।

শবে বরাতে বর্জনীয় বা শবে বরাতে বর্জনীয় কি

বরকতময় এ রজনীতে তওবা-ইস্তেগফার ও ইবাদত-বন্দেগীর মাধ্যমে মহান আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনে নিমগ্ন থাকাই মুমিনের কর্তব্য। অথচ কিছুসংখ্যক লোক এ রাতে এমন কিছু কাজে লিপ্ত হয়ে পড়ে, যেগুলো ইসলামে সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। যেমন : পটকাবাজি, তারাবাজি, আতশবাজি, অতিরিক্ত আলোকসজ্জা, পোলাও-বিরানি ও হালুয়া-রুটি নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়া ইত্যাদি। এগুলো নিছক কুসংস্কার বৈ কিছু নয়।

মুহাদ্দিসে কেরাম বলেছেন, আতশবাজি একটি সামাজিক কুসংস্কার, অপচয় ও অপরাধের কাজ। ইয়াজুজ-মাজুজ আল্লাহর দিকে তীর নিক্ষেপ করবে তাকে ঘায়েল করার জন্য। আতশবাজির মাধ্যমে অনেকাংশে সেটারই অনুকরণ হয় বলে এটি শরিয়তে নিষিদ্ধ। অন্যদিকে আল্লাহ ও তাঁর ফেরেশতাগণ এ রজনীতে দুনিয়াবাসীর প্রতি রহমত নাজিল করতে প্রথম আকাশে অবতরণ করেন। বান্দাদেরকে তার রহমত ও বরকত লাভ করার জন্য অবিরাম আহ্বান জানাতে থাকেন; ঊর্ধ্বমুখী আতশবাজির দ্বারা যেন প্রকারান্তরে তত্প্রতিই বিদ্রূপ প্রকাশ হয়ে পড়ে। শবে বরাতে একটি উল্লেখযোগ্য কুসংস্কার হলো, হালুয়া-রুটি না হলে যেন শবে বরাত পালন অসম্পূর্ণই থেকে যায়। মূলত শরিয়তে এর কোনো নিয়ম নেই। কারণ, এদিন সূর্যাস্ত থেকেই আল্লাহ তায়ালা পৃথিবীর নিকটবর্তী আকাশে এসে বান্দাকে ডাকতে থাকেন।

তাই তার ডাকে সাড়া না দিয়ে এসব ভোজনে লিপ্ত থাকা একদিকে যেমন ইবাদতে বিঘ্ন ঘটায়, অন্যদিকে উদরপূর্তির দরুন এ মুক্তির রজনীতে ইবাদতে আলস্য চলে আসে। রাত্রি জাগরণের মাধ্যমে অধিক পরিমাণ ইবাদত-বন্দেগী করার ইচ্ছা করলে হালকা-পাতলা খানা খাওয়া ভালো। অনেক স্থানে এ রাতে গরু-ছাগল-মুরগী জবাইয়ের ধুম লেগে যায়। এ সবই সুন্নাত পরিপন্থী। অনেক স্থানে দেখা যায়, বরাত রজনীতে মুসল্লিদেরকে একত্রিত করে রাতব্যাপী ওয়াজ-নসিহতের আয়োজন করা হয়।

যেহেতু এ রাতে নফল নামাজ, কুরআন তেলাওয়াত, জিকির-আজকার, দরুদ পাঠ, কবর জিয়ারতের মতো বিভিন্ন ইবাদত করতে নবী করিম (স) হতে ইঙ্গিত এসেছে, তাই অন্যান্য ইবাদত ব্যতীত শুধু ওয়াজ-নসিহত করে জাগরণ করা মাকরূহ হবে। তবে রাতের শুরুতে ইবাদতের নিয়ম-কানুন জানানোর উদ্দেশ্যে এ রাতের গুরুত্ব অনুধাবনের জন্যে কিছু সময় আলোচনা করা যেতে পারে। মুক্তির বারতা নিয়ে আগত পবিত্র শবে বরাতে প্রতিটি মুসলমানের উচিত এ রাতের যাবতীয় ফজিলত অর্জনের জন্য প্রয়াসী হওয়া।

এ জন্যে পূর্বদিনেই নির্দিষ্ট পরিমাণ ঘুমিয়ে নেয়া প্রয়োজন। যাতে রাতের বেলা ঘুম আমাদেরকে কাহিল করতে না পারে। কারণ, কোন অংশে আল্লাহর রহমতের দৃষ্টি বান্দার প্রতি নিবদ্ধ হয়, তা-তো হলফ করে বলা যায় না। খোদ নবী করীম (স.) আল্লাহর দরবারে আগ থেকেই দোয়া করতেন এ বলে— হে আল্লাহ! আমাকে রজব ও শাবান মাসের বরকত দাও এবং রমজান পর্যন্ত পৌঁছাও। এ হাদিসের দ্বারা এ রাতের গুরুত্ব সহজেই অনুধাবন করা যায়।

Next Post Previous Post