সুনানে নাসায়ীর বৈশিষ্ট্য | নাসায়ী শরীফের বৈশিষ্ট্য | nasai sharif

সুনানে নাসায়ীর বৈশিষ্ট্য | নাসায়ী শরীফের বৈশিষ্ট্য | nasai sharif

সুনানে নাসায়ীর বৈশিষ্ট্য | নাসায়ী শরীফের বৈশিষ্ট্য | nasai sharif

সুনানে নাসায়ীর বৈশিষ্ট্য | নাসায়ী শরীফের বৈশিষ্ট্য | nasai sharif


সুনানে নাসায়ীর বৈশিষ্ট্য:

সুনানে নাসাঈর এমন কিছু বৈশিষ্ট্য রয়েছে যা তাকে অপরাপর হাদীছ গ্রন্থ থেকে পৃথক স্বাতন্ত্র্য দান করেছে। নিম্নে সুনানে নাসাঈর কতিপয় বৈশিষ্ট্য উল্লেখ করা হ'ল। -

১. প্রায় তাকরার বা দ্বিরুক্তিমুক্ত : কুতুবুস সিত্তার অন্যান্য গ্রন্থের ন্যায় সুনানে নাসাঈতে তাকরার তথা পুনঃউল্লিখিত হাদীছের সংখ্যা কম। এতে তারার হাদীছ নেই বললেই চলে।

২, হাদীদের দুর্বোধ্য শব্দের ব্যাখ্যা : এ গ্রন্থে কোন কোন স্থানে হাদীদের দুর্বোধ্য শব্দের ব্যাখ্যা করা হয়েছে। যেমন একটি হাদীছ উল্লেখ করার পর তিনি বলেন,“আর-রিকসু' অর্থাৎ জিনের খাদ্য। অনুরূপভাবে রাসূল (ছাঃ) - এর বাণী, ‘তার পেশাবে বাধা দিও না'। এর অর্থে তিনি বলেন, অর্থাৎ তার পেশাব বন্ধ করে দিও না।

৩. অধিক বাৰী সম্বলিত হাদীছ ; ইমাম নাসাঈ স্বীয় গ্রন্থে শক্তিশালী ও ছহীহ সনদের ভিত্তিতে হাদীছ সন্নিবেশিত করেছেন। এক্ষেত্রে তিনি দশজল রাবী বিশিষ্ট হাদীছও উল্লেখ করেছেন। যেমন তিনি একটি হাদীছ উল্লেখ করে বলেন, ' এর চেয়ে দীর্ঘ সনদ বিশিষ্ট হাদীছ আমার জানা নেই।


৪. ফিকহী বিন্যাস : এ গ্রন্থের হাদীছগুলাে ফিকহী তারতীব অনুযায়ী সুবিন্যস্ত করা হয়েছে। এ গ্রন্থ শুরু হয়েছে পবিত্রতা' অধ্যায় দ্বারা এবং শেষ হয়েছে “পানীয় দ্রব্যের বর্ণনা দ্বারা। অধ্যায় বিন্যাসে মৌলিক অর্থের দিকে বিশেষভাবে লক্ষ্য রাখা হয়েছে।

৫. সকল বিষয়ের হাদীছের সন্নিবেশ : ইমাম নাসাঈ (রহঃ) এ গ্রন্থে জীবনের সকল দিক সম্পর্কিত ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র শাখা-প্রশাখায় হাদীছ সন্নিবেশিত করেছেন।

আরো দেখুন:👇👇

৬. ইলালুল হাদীদ বর্ণনা : এ গ্রন্থে ইমাম নাসাঈ (রহঃ) পৃথকভাবে শিরােনাম নির্ধারণ করে হাদীছের ইল্লত (ত্রুটি) সম্পর্কে বিস্তারিত আলােচনা করেছেন। হাদীছের ক্রটি বর্ণনার পর তিনি সঠিকটা উল্লেখ করেছেন। মতানৈক্যের ক্ষেত্রে অধিক প্রাধান্যযােগ্য বিষয়টি উল্লেখ করেছেন।

৭. অনুচ্ছেদ রচনা : সুনানে নাসাঈর হাদীছের অধ্যায়, অনুচ্ছেদ-পরিচ্ছেদগুলাে ধারাবাহিকভাবে বিন্যস্থ। এ গ্রন্থের অনুচ্ছেদ-পরিচ্ছেদের শিরােনাম অত্যন্ত সংক্ষিপ্ত ও সহজবােধ্য। হাদীছ ও শিরােনামের মধ্যে সাযুজ্য বিদ্যমান। এ গ্রন্থে তরজমাতুল বাব সংযােজনে ইমাম বুখারী (রহঃ) -এর ফিকহী ধারাকে অনুসরণ করা হয়েছে।

৮, স্বল্পসংখ্যক তা'লীক হাদীছ । এ গ্রন্থে ইমাম নাসাঈ (রহঃ) অতি স্বল্প সংখ্যক তা'লীক হাদীছ উল্লেখ করেছেন। এ গ্রন্থে প্রায় ১৮০টি তা'লীক হাদীছ উল্লিখিত হয়েছে।

৯, হাদীছের মাল ও স্তর বর্ণনা; এ গ্রন্থে কখনাে কখনাে হাদীছের স্তর ও মান বর্ণিত হয়েছে। যেমন একটি হাদীছ উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘এ হাদীছটি মুনকার বা প্রত্যাখ্যাত'। অনুরূপভাবে আরেকটি হাদীছ উল্লেখ করে তিনি বলেন, ইয়াহইয়া ইবনে সাঈদ বর্ণিত এই হাদীছের সনদ হাসান। কিন্তু তিনি প্রত্যাখ্যাত। আমি আশংকা করছি যে, মুহাম্মাদ ইবনে ফুযাইলের ভ্রান্তি রয়েছে’ | কখনাে তিনি রাবীর ক্রটি বর্ণনা করেছেন। যেমন তিনি বলেন,‘আওযাঈ (রহঃ) এই হাদীছ যুহরী থেকে শুনেননি। এই হাদীছটি ছহীহ, যা ইউনুস যুহরী থেকে বর্ণনা করেছেন’।


১০. সনদের অবস্থা বর্ণনা : এতে মুত্তাছিল, মুনকাতি', মুরসাল ইত্যাদি অবস্থা বর্ণনা করা হয়েছে। যেমন একটি হাদীছ উল্লেখ করে তিনি বলেন, এ মাখরামাহ তার পিতা থেকে কিছুই শুনেনি'। অন্যত্র একটি হাদীছ উল্লেখ করে তিনি বলেছেন, হাসান সামুরা (রাঃ) -এর সংকলন থেকে হাদীছটি গ্রহণ করেছেন। আর হাসান সামুরা থেকে কেবল আকীকা সম্পর্কিত হাদীছটিই শুনেছেন'।

১১. অধিক সনদ উল্লেখ : ইমাম নাসাঈ (রহঃ) কোন হাদীছের একাধিক সনদ কিংবা একই হাদীছের বিভিন্ন সনদ থাকলে তাও উল্লেখ করেছেন।

১২. আহকাম সম্বলিত হাদীছ : ইমাম নাসাঈ (রহঃ) স্বীয় সুনাল গ্রন্থে আহকাম সম্বলিত হাদীছ সন্নিবেশিত করেছেন। ড. তাকীউদ্দীন নাদভী বলেন, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) থেকে আহকাম সম্বলিত যে সকল হাদীছ ছহীহ সাব্যস্ত হয়েছে সে সকল হাদীছ স্বীয় সুনানে নাসাঈতে একত্রিত করা ইমাম নাসাঈ (রহঃ) -এর উদ্দেশ্য ছিল। যাতে সেগুলাে দ্বারা ফকীহগণ দলীল গ্রহণ করতে পারেন। এভাবে তিনি হাদীছ ও ফিকহের মাঝে সমন্বয় সাধন করেছেন'।

১৩, নসবনামা উল্লেখ ; সুনানে নাসাঈতে রাবীর নাম উল্লেখের সাথে সাথে কখনাে কখনাে তার বংশপরিক্রমাও উল্লেখ করা হয়েছে।

১৪. কুরআনের আয়াতের উদ্ধৃতি : এ গ্রন্থে ‘অনুচ্ছেদ’-এর অনুকূলে কুরআনুল কারীমের কোন আয়াত থাকলে তা সন্নিবেশিত করা হয়েছে। যেমন ‘তাহারাত' অধ্যায়ে ‘ওযু অনুচ্ছেদে' ওযুর ফরয সমূহ বর্ণনায় সূরা মায়েদার নিম্নোক্ত আয়াত উল্লেখ করেছেন, !‘হে ঈমানদারগণ! যখন তােমরা ছালাতের জন্য প্রস্ত্তত হও, তখন তােমাদের মুখমন্ডল ও হস্তদ্বয় কনুইসহ ধৌত কর এবং তােমাদের মাথা মাসাহ কর এবং পদযুগল টাখনু সহ ধৌত কর’ (মায়েদাহ ৫/৬)

১৫. নাসিথ-মানসূখ দৃষ্টিকোণে অনুচ্ছেদ প্রণয়ন : ড. তাকীউদ্দীন নাদভী বলেন, “ইমাম নাসাঈ (রহঃ) -এর অন্যতম একটি রীতি হ’ল অনুচ্ছেদ রচনা করে খায় মানসূখ হাদীছ সন্নিবেশিত করা। অতঃপর অপর বাবে তার নাসিথ (রহিতকারী) হাদীছ উল্লেখ করা। যেমন ‘আগুনে পাকানাে খাদ্য খেয়ে ওযু করা অনুচ্ছেদ’-এ আবু হুরায়রা (রাঃ) থেকে হাদীছ এনেছেন, তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) -কে বলতে শুনেছি, “আগুনে পাকানাে খাদ্য খেয়ে তােমরা ওয়ূ করবে'।অতঃপর আরেক বাব রচনা করেছেন এভাবে ‘আগুনে পাকানাে খাদ্য খেয়ে ওযূ না করা অনুচ্ছেদ'। অত্র অনুচ্ছেদে তিনি উম্মে সালমা (রাঃ) থেকে বর্ণিত হাদীছ এনেছেন, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) (আগুনে পাকানাে রান খেলেন। অতঃপর বেলাল (রাঃ) আসলে তিনি ছালাতের জন্য বেরিয়ে গেলেন, পানি স্পর্শ করলেন না’ | এতে আগুনে পাকানাে খাদ্য খেয়ে ওযূ না করার ইঙ্গিত রয়েছে। আল্লামা সিন্ধী বলেন, এ হাদীছটি নাসিথ বা রহিতকারী হওয়ার প্রমাণ বহন করে।

                    

কুতুবে সিত্তায় সুনানে নাসাঈর স্থান :

সুনানে নাসাঈ কুতুবে সিত্তার অন্যতম গ্রন্থ। এ সম্পর্কে হাজী খলীফা স্বীয় কাশফুয যুনূন' গ্রন্থে লিখেছেন, এটা কুতুবে সিত্তার অন্যতম গ্রন্থ’ | তবে এটা কুতুবে সিত্তার কততম কিতাব এ ব্যাপারে বিস্তুর মতভেদ আছে। যেমন খ্যাতনামা বিদ্বান আল্লামা মােল্লা আলী কারী (রহঃ) মিরকাত’ গ্রন্থে লিখেছেন, ‘যখন বলা হবে কুতুবিল খামসা বা উদ্‌লিল মসা তখন এর মধ্যে পরিগণিত হবে যথাক্রমে বুখারী, মুসলিম, সুনানে আবু দাউদ, জামে আত- তিরমিযী ও মুজাতাবা আন-নাসাঈ তথা সুনানে নাসাঈ। ড. সুবহী ছালেহ স্বীয় ‘উলূমুল হাদীছ' গ্রন্থে কুতুবুস সিত্তার ধারাক্রম লিখেছেন এভাবে, ছহীহ হাদীছ গ্রন্থের মধ্যে পরিগণিত হ’ল বুখারী, মুসলিম, সুনানে আবুদাঊদ, জামে তিরমিযী, সুনানে নাসাঈ এবং সুনানে ইবনে মাজাহ’ | প্রণেতা বলেন, -ছহীহ গ্রন্থের প্রথম স্তরে রয়েছে দুহীহ বুখারী, অতঃপর দুহীহ মুসলিম, অতঃপর সুনানে আবু দাউদ, তিরমিযী, নাসাঈ, ইবনু মাজাহ। উল্লেখ্য যে, প্রচলিত ছিহাহ সিত্তাহ বলা ঠিক নয়। কারণ বুখারী ও মুসলিম সুনানে আরবা'আতে অনেক যঈফ বা দুর্বল হাদীছ রয়েছে। এর পরিবর্তে কুতুবে সিত্তাহ' বলা যেতে পারে

হাদীছশাস্ত্রে সুনানে নাসায়ীর অবস্থান:

দুহীহায়নের পরে এবং এটা সুনানে আবু দাউদ ও তিরমিযীর উপর অগ্রগন্য। অর্থাৎ তৃতীয়। ড. তাকীউদ্দীন নাদভী বলেন, আল্লামা আনােয়ার শাহ কাশ্মীরী ও হাযেমীর মতে, কুতুবে সিত্তায় সুনানে নাসাঈর স্থান তৃতীয়।
Next Post Previous Post