ইবনে মাজাহর এর বৈশিষ্ট্য | সুনানে ইবনে মাজাহ এর বৈশিষ্ট্য | ইবনে মাজাহ এর বৈশিষ্ট্য | ibn majah hadith
ইবনে মাজাহর এর বৈশিষ্ট্য | সুনানে ইবনে মাজাহ এর বৈশিষ্ট্য | ইবনে মাজাহ এর বৈশিষ্ট্য | ibn majah hadith
ইবনে মাজাহর এর বৈশিষ্ট্য | সুনানে ইবনে মাজাহ এর বৈশিষ্ট্য | ইবনে মাজাহ এর বৈশিষ্ট্য | ibn majah hadith
সুনানু ইবনে মাজাহ সংকলন :
ইমাম ইবনু মাজাহ (রহঃ) -এর দীর্ঘদিনের কঠোর সাধনা ও অধ্যবসায়ের ফসল সুনানু ইবনে মাজাহ। এটি কুতুবুস সিত্তার অন্যতম গ্রন্থ। এ গ্রন্থটি সংকলন শেষে ইমাম ইবনু মাজাহ (রহঃ) স্বীয় প্রখ্যাত উস্তাদ ইমাম আবু যুর আর-রাযীর নিকট পেশ করলে তিনি চুলচেরা বিশ্লেষণপূর্বক একে ইলমে হাদীছের এক অনন্য সাধারণ ও উপকারী গ্রন্থ হিসাবে স্বীকৃতি দেন। এ সম্পর্কে ইমাম ইবনু মাজাহ (রহঃ) বলেন, عرضت هذه السنن على أبي زرعة فنظر فيه، وقال: أظن إن وقع هذا في أيدي الناس تعطلت هذه الجوامع أو أكثر هاء
‘আমি এ সুনান গ্রন্থটির সংকলনকার্য সমাপনান্তে আমার উস্তাদ আবু মুর'আ আর-রাযীর নিকট পেশ করলে তিনি সূক্ষভাবে নিরীক্ষাপূর্বক মন্তব্য করেন যে, আমি মনে করি এ সুনাল গ্রন্থটি জনসাধারণের হাতে পৌঁছলে বর্তমান পর্যন্ত সংকলিত সবগুলাে অথবা অধিকাংশ হাদীছগ্রন্থ অগ্ৰযােজনীয় হয়ে যাবে।
ইবনে মাজাহতে সংকলিত হাদীছ সংখ্যা :
ইমাম ইবনু মাজাহ (রহ:) লক্ষাধিক হাদীছ যাচাই-বাছাই করে এ গ্রন্থটিতে মােট ৪৩৪১ টি হাদীছ লিপিবদ্ধ করেছেন। এর মধ্যকার ৩০০২ টি হাদীছ এমন যেগুলাে পাঁচটি প্রসিদ্ধ গ্রন্থের সবগুলােতে অথবা কোন কোনটিতে রয়েছে। এছাড়া ১৩৩১ টি হাদীছ ব্যতিক্রম। যেগুলাে কুতুবুস সিত্তার অন্য পাঁচজন গ্রন্থকার বর্ণনা করেননি। এতে মােট ৩৭ টি অধ্যায় ও১৫৪৫ টি পরিচ্ছেদ রয়েছে। হাফেয ইবনু কাছীর (রহঃ) বলেন, وثلاثين كتابا، وألف وخمسمائة باب، و على أربعة آلاف حديث ويشتمل على اثنين “এতে ৩২ টি অধ্যায়, ১৫০০ টি পরিচ্ছেদ এবং চার সহস্রাধিক হাদীছ রয়েছে'। শুআইব আরনাউত সহ কোন কোন বিদ্বান বলেন, সুনানু ইবনে মাজাহাত এককভাবে বর্ণিত হাদীছ সংখ্যা পুনরাবৃত্তি সহ মােট ১২১৩ টি। তন্মধ্যে ৯৮ টি ছহীহ, ১১৩ টি মুতাবি আভের কারণে ছহীহ, ২১৯ টি শাওয়াহেদের কারণে ছহীহ; ৫৮ টি হাদীছ হাসান, ৪২ টি, মুতাবি'আতের কারণে হাসান, ৬৫ টি, শাওয়াহেদের কারণে হাসান, ৬ টি হাসান হওযার সম্ভাবনাময়:৭ টি হাদীছ মারফু হিসাবে বর্ণিত হযেছে, কিন্তু তা মাওকুফ হিসাবে ছহীহ। ৪ টি হার্দীছ মুরসাল, ৩৮৪ টি, হাদীছ যঈফ; ১৮৪ টি অত্যধিক যঈফ, ১ টি হার্দীছ, শায; ২১ টি হাদীছ সুনকার ও মাওযু (জাল)। ১১টি হাদীছের মান/স্বর নির্ণয় করা সম্ভব হয়নি। এ পরিসংখ্যানে স্পষ্ট হয়েছে যে, ইবনু মাজাহতে এককভাবে বর্ণিত পুনরাবৃত্তি বিহীন ছহীহ এবং হাসান লিযাতিহী ও হাসান লি গাযরিহী হাদীছ সংখ্যা মূলত ৬০০ টি। উল্লেখ্য যে, গান্ডুলিপির ভিন্নতার কারণে হাদীছের সংখ্যা, পরিচ্ছেদ ও অধ্যায়ের সংখ্যায় কম-বেশী পরিলক্ষিত হয়। ইবনু মাজাহর বর্ণনাকারী ।
সুনানু ইবনে মাজাহ গ্রন্থটি প্রধানত চারজন বিখ্যাত মুহাদ্দিদের ধারাবাহিক বর্ণনা পরম্পরা সূত্রে বর্ণিত হয়েছে। তাঁরা হলেন,
১. আবুল হাসান আলী ইবনু ইবরাহীম ইবনুল কাদান,
২. সুলায়মান ইবনে ইয়াযীদ,
৩. আবু জাফর মুহাম্মাদ ইবনে ঈসা,
৪. আবু বকর হামিদ আল- আবরাহী।
ইবনু মাজাহ- এর সত্যায়ন ও মূল্যায়ন:
ইলমে হাদীছে প্রসিদ্ধ জগৎ বিখ্যাত বিদ্বানমন্ডলী সুনানু ইবনে মাজাহর ভূয়সী প্রশংসা করেছেন। তাদের কয়েকজনের অভিমত নিম্নে উল্লেখ করা
হ'ল। -
১. সুনানু ইবনে মাজাহ সংকলনের পর তৎকালীন জগদ্বিখ্যাত মুহাদ্দিছ আবু যুর আ আর-রাহীর নিকট পেশ করা হলে তিনি একে অতি মূল্যবান গ্রন্থ হিসাবে সত্যায়ন করেন। তিনি বলেন, “আমি আবু আব্দুল্লাহ ইবনু মাজাহর হাদীছ গ্রন্থটি অধ্যয়ন করেছি। কিন্তু এতে খুব অল্প হাদীছই এমন পেয়েছি যাতে কিছুটা ত্রুটি রযেছে। তাছাড়া আর কোন দোষ আমি পাইনি। অতঃপর এ পর্যায়ে তিনি দশটির মত হাদীছ উল্লেখ করেন।
২. ইবনু হাজার আসকালানী (রহঃ) বলেন, ইমাম ইবনু মাজাহ (রহঃ) কর্তৃক সংকলিত মুনান গ্রন্থটি ব্যাপক হাদীছ সংবলিত ও উত্তম। এতে অনেকগুলাে অধ্যায় ও দুষ্প্রাপ্য হাদীছ রয়েছে।
৩. হাফেয ইবনু কাছীর (রহঃ) বলেন, كتابه في السنن جامع جيد كثير الأبواب والغرائب، هو كتاب مفيد قوي الترتيب في الفقه ‘এটি উপকারী গ্রন্থ, ফিকহের দৃষ্টিতে এর অধ্যাযসমূহ সুদৃঢ়ভাবে সজিভ'। এ গ্রন্থটি দু'দিক দিয়ে কুতুবুস সিত্তাহর মধ্যে বিশেষ মর্যাদার অধিকারী। এর রচনা, সংযােজন, সজ্ঞান ও সৌকর্য অনন্য। এতে হাদীছসমূহ এক বিশেষ পদ্ধতিতে ও অধ্যায় ভিত্তিতে সাজানাে হয়েছে। অন্য কান কিভাবে সাধারণত এই সৌন্দর্য দেখা যায় না।
৪. শাহ আব্দুল আযীয মুহাদ্দিছ দেহলভী ইবনে মাজাহ গ্রন্থের উচ্ছ্বসিত প্রশংসা করে বলেছেন, وفي الواقع از حسن ترتيب وسرد أحاديث بے تکرار واختصار آنچه این کتاب دارد هيچ يك از كتب ندارد প্রকৃতপক্ষে সজ্জায়ন-সৌন্দর্য ও পুনরাবৃত্তি ব্যতীত হাদীছসমূহ একের পর এক উল্লেখ করা এবং তদুপরি সংক্ষিপ্ততা প্রভৃতি বিশেষত্ব এ কিভাবে যা পাওয়া যায়, অপর কোন কিতাবে তা দুর্লভ।
সুনানু ইবনে মাজাহ-এর বৈশিষ্ট্যাবলী :
সুনানু ইবনে মাজাহ-এর এমন কিছু দুর্লভ ও অনুপম বৈশিষ্ট্য আছে, যা একে অন্যান্য হাদীছ গ্রন্থাবলী থেকে পৃথক করেছে। যেমন-
১. দীর্ঘ ভূমিকা সংযােজন : এ গ্রন্থটি দীর্ঘ ভূমিকা দ্বারা আরম্ভ হযেছে। যাতে দ্বীনের মূলনীতি, তাওহীদ ও সুন্নাতের মহত্ব সম্পর্কে আলােচনা করা হয়েছে। এ ভূমিকারমধ্যে প্রায় ২৩৭ টি হাদীছ সন্নিবেশিত হয়েছে। এই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা অন্যান্য সুনান গ্রন্থের মধ্যে একে অনন্য বিশেষত্ব দান করেছে।
২. ফিকহী তারতীব অনুযায়ী বিন্যস্ত : সুনানু ইবনে মাজাহকে অপূর্ব ফিকহী তারতীব অনুযায়ী সুবিন্যস্ত করা হয়েছে। এ সম্পর্কে হাফেয ইবনে কাছীর (রহঃ) বলেন, এটি একটি উপকারী গ্রন্থ। ফিকহী দৃষ্টিকোণে এর অধ্যায়সমূহ খুবই সুন্দর ও মযবূত করে সাজানাে হয়েছে।
২. মাসআলা সঞ্চয়নে সহায়ক : কুতুবুস সিত্তার অপরাপর গ্রন্থের তুলনায় এ গ্রন্থ থেকে ফিকহী মাসআলা সঞ্চয়ন খুবই সহজসাধ্য। এ সম্পর্কে ইবনুল আছীর বলেন, ইমাম ইবনু মাজাহ সংকলিত এ গ্রন্থটি খুবই কল্যাণপ্রদ এবং ফিকহী মাসআলা সঞ্চয়নে
অত্যন্ত উপকারী।
৩. ইত্তেবাযে সুন্নাত দ্বারা অনুচ্ছেদ শুরু :সুনানু ইবনে মাজাহর অনুচ্ছেদ বিন্যাস শুরু হয়েছে ‘ইত্তেবাযে সুন্নাত' শীর্ষক পরিচ্ছেদ দ্বারা। যাতে ঐ সকল হাদীছ সংযােজিত হয়েছে, যা দ্বারা সুন্নাত বা হাদীছের প্রামাণিকতা, তার অনুসরণ ও সে অনুযায়ী আমল করার আবশ্যকতা প্রমাণিত হয়।
৪. প্রায় তাকরারমুক্ত : এ গ্রন্থে হাদীছ সন্নিবেশের ক্ষেত্রে ভাকরারনীতি যথাসম্ভব পরিহার করা হয়েছে। বিশেষ প্রযােজন ও ক্ষেত্র ছাড়া কোন হাদীছ তাকরার বা পুনরাবৃত্তি করা হয়নি।
৫. দুলাছ্যিাত হাদীছ : হাদীছশাস্ত্রে ছুলাছিত ভথা তিনজন রাবীর মধ্যস্থতায় বর্ণিত হাদীছের গুরুত্ব ও মর্যাদা অপরিসীম। এ গ্রন্থে সন্নিবেশিত পাঁচটি ছুলাছিয়াত হাদীছ এর গুরুত্ব ও মর্যাদাকে বৃদ্ধি করেছে।
৬. দুর্লভ হাদীছ সন্নিবেশ : এ গ্রন্থে এমন কিছু দুর্লভ হাদীছ সন্নিবেশ করা হয়েছে, যা কুতুবুস সিত্তার অন্য কোন গ্রন্থে নেই। যার ফলে এ গ্রন্থটির মর্যাদা ও গ্রহণযােগ্যতা বেশী।
৭. রাবী পরিচিতি : এ গ্রন্থে হাদীছ বর্ণনা শেষে অনেক ক্ষেত্রেই রাবী পরিচিতির লক্ষ্যে রাবী সম্পৃক্ত শহরের নাম উল্লেখ করা হয়েছে। এটি সুনানু ইবনে মাজাহ-এর এক অনন্য বৈশিষ্ট্য। যেমন – এ হাদীছটি বর্ণনা শেষে মন্তব্য করেছেন যে, এই হাদীছটি ফিলিস্তীনের রামলাবাসী রাবী কর্তৃক বর্ণিত। তাদের ছাড়া অন্য কোন রাবীর নিকট থেকে এ হাদীছটি পাওয়া যায় না'।
৮. রাবীর দোষ-গুণ বর্ণনা : ইমাম ইবনু মাজাহ (রহঃ) এ গ্রন্থে হাদীছ বর্ণনা শেষে ক্ষেত্রবিশেষ রাবীর দোষগুণের বর্ণনাও পেশ করেছেন। যেমন কোন এক হাদীছ বর্ণনা শেষে মন্তব্য করেছেন, “আবু আব্দুল্লাহ গরীব, তার থেকে কেবল ইবনু আবী শায়বা ব্যতীত কেউ হাদীছ বর্ণনা করেননি।
৯. শিক্ষার্থীদের জন্য বিশেষ উপকারী : এ গ্রন্থে অনেক যঈফ ও মাওযূ হাদীছ উল্লিখিত হয়েছে। যেগুলিকে হাদীছ হিসাবে গন্য করাহলেও তা আমলযােগ্য নয়। কিন্তু যখন তার মুতাবি'আত ও শাওয়াহেদ পাওয়া যাবে তখন তা হাসান লিগায়রিহী সুরে উন্নীত হবে এবং তার উপর আমল করা যাবে। শিক্ষার্থীরা এসব বর্ণনা জেনে ও উমূলের নিয়ম অবগত হয়ে উপকৃত হবে। পরিশেষে বলব, সুনানু ইবনে মাজাহ কুতুবুস সিত্তাহ’ তথা দুটি শীর্ষ হাদীছ গ্রন্থের মধ্যে একটি। যদিও এর মধ্যে অনেক জাল ও যঈফ হাদীছের সন্নিবেশ ঘটেছে। তারপরও এ গ্রন্থের রচনাশৈলী ও অধ্যায় বিন্যাস অনন্য। মহান আল্লাহ এই গ্রন্থের বিশুদ্ধ হাদীছগুলােকে আমাদের আমলী যিন্দেগীতে বাস্তবায়নের তাওফীক দান করুন। আমীন!!