ইমাম বুখারীর বৈশিষ্ট্য | বুখারী শরীফের বৈশিষ্ট্য | bukhari | bukhari hadith
ইমাম বুখারীর বৈশিষ্ট্য | বুখারী শরীফের বৈশিষ্ট্য | bukhari | bukhari hadith
ইমাম বুখারীর বৈশিষ্ট্য | বুখারী শরীফের বৈশিষ্ট্য | bukhari | bukhari hadith
ছহীহ বুখারী সংকলনের প্রেক্ষাপটঃ
প্রথম কারণঃ ইমাম বুখারী (রহঃ) বলেন, رأيت النبی صلی الله عليه وسلم كأنني واقف بين يديه وبيدى مروحة أذب بها عنه، فسألت بعض المعبرين فقال لي انت تذب عنه الكذب فهوالذي حملني على إخراج الجامع الصحيح- আমি নবী করীম (ছাঃ)-কে স্বপ্নে দেখলাম যে, আমি যেন তার সম্মুখে পাখা হাতে নিয়ে দণ্ডায়মান, যা দ্বারা আমি তাকে বাতাস করছি ও মাছির আক্রমণ প্রতিরােধ করছি অতঃপর কতিপয় স্বপ্নের ব্যাখ্যাকারীদের নিকট এর ব্যাখ্যা সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলে তারা বলেন, আপনি রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর প্রতি আরােপিত মিথ্যা হাদীছ প্রতিরােধ করবেন। বস্তুতঃ এ স্বপ্ন ও ইহার ব্যাখ্যাই আমাকে ছহীহ হাদীছ গ্রন্থ সংকলনে উদ্বুদ্ধ করে।
দ্বিতীয় কারণঃ ইমাম বুখারী (রহঃ) বলেন, একদা আমরা কয়েকজন ছাত্র উস্তাদ ইসহাক বিন রাহওয়াই-এর নিকট ছিলাম। তখন তিনি আমাদেরকে লক্ষ্য করে বলেন, لو جمعتم كتابا مختصرا لسنن النبی صلی الله عليه وسلم- فوقع ذلك في قلبي فأخذت في جمع هذا الكتاب ‘যদি তােমাদের কেউ এমন একটি হাদীছ গ্রন্থ রচনা করতে যাতে শুধুমাত্র ছহীহ হাদীছ সমূহই সন্নিবেশিত হবে, তাহলে কতই না ভাল হ'ত’! ইমাম বুখারী (রহঃ) বলেন, “এ কথাগুলি আমার হৃদয়ে গভীরভাবে রেখাপাত করে। অতঃপর আমি ছহীহ বুখারী সংকলন শুরু করলাম।
কিতাবের নাম:
ছহীহ বুখারীর পুরাে নাম হল- الجامع المسند الصحيح المختصر من أمور رسول الله صلى الله عليه وسلم وسننه وأيامه
উচ্চারণ: ‘আল-জামেউল মুসনাদুছ ছহীহুল মুখতাছার মিন উমূরে রাসূলিল্লা-হি ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ওয়া সুনানিহী ওয়া আইয়ামিহী’।
ছহীহ বুখারী সংকলনঃ
ইমাম বুখারী (রহঃ) সুদীর্ঘ ১৬ বছর কঠোর পরিশ্রম ও সাধনা করে ছহীহ বুখারী সংকলন করেছেন। তিনি প্রতিটি হাদীছ লিপিবদ্ধ করার সময় গােসল করে দু'রাক'আত ইস্তেখারার ছালাত আদায় করে হাদীছের বিশুদ্ধতা সম্পর্কে নিশ্চিত হয়ে লিপিবদ্ধ করতেন। তিনি ছহীহ বুখারীর বাব (অধ্যায়) সংযােজন করেছেন রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর পবিত্র কবর ও মসজিদে নববীর মাঝখানে বসে। তিনি প্রতিটি বাব লেখার সময়ও দু'রাক'আত করে ছালাত আদায় করতেন। আবার কারাে মতে মক্কায় বসে বাব সংযােজন করেছেন। তার সংগ্রহে ছয় লক্ষ হাদীছ ছিল। তার মধ্য থেকে যাচাই-বাছাই করে বিশুদ্ধ সাত হাযার দু’শত পচাত্তর খানা হাদীছ স্বীয় কিতাবে সন্নিবেশিত করেছেন। তারার হাদীছ বাদ দিলে অবশিষ্ট থাকে চার হাযার হাদীছ । হাদীছ সংগ্রহের জন্য ইমাম বুখারী (রহঃ) মক্কা, বছরা, কুফা, বালুখ, বাগদাদ, আসকালান, হিমস, দামেশক প্রভৃতি দেশের মুহাদ্দিছগণের দারস্থ হয়েছেন। তিনি সিরিয়া, মিসর ও জাষীরায় দু'দুবার, বছরায় চারবার, হিজাযে ক্রমাগত দুয় বছর অবস্থান করেছেন। আর কুফা ও বাগদাদে যে কতবার গমন করেছেন তা গণনা করা যায় না।
ছহীহ বুখারীর সত্যায়নঃ
ইমাম বুখারী (রহঃ) ছহীহ বুখারীর পাণ্ডুলিপি আলী ইবনুল মাদীনী, ইয়াহইয়া ইবনু মুঈন, আহমাদ ইবনু হাম্বল প্রমুখ সমকালীন জগদ্বিখ্যাত মহামনীষীদেরকে যাচাই করতে দেন। তারা উছুলে হাদীছের মানদণ্ডে যাচাই করে মাত্র চার খানা হাদীছ ব্যতীত সমস্ত হাদীছের বিশুদ্ধতার উপর ঐক্যমত পােষণ করেন। ঐ চারখানা হাদীছ সম্পর্কে তারা ভিন্নমত পােষণ করেন। অবশ্য ইমাম বুখারী (রহঃ)-এর শর্তে ঐ চারটি হাদীছও ছহীহ। সমকালীন বিশ্বের সমস্ত মুহাদ্দিছগণ এ গ্রন্থের চুলচেরা বিচার-বিবেচনা, পরীক্ষা-নিরীক্ষা, আলােচনা-সমালােচনা এবং পর্যালােচনা করে সর্বসম্মত ভাবে এ গ্রন্থটিকে অর্থাৎ 'মহাগ্রন্থ আল-কুরআনের পর সর্বাধিক বিশুদ্ধ ও নির্ভুল গ্রন্থ হিসাবে স্বীকৃতি দান করেছেন। আল্লামা মহিউদ্দীন ইয়াহইয়া বলেন, এ বিষয়ে পূর্ব-পশ্চিমের ওলামায়ে কেরাম ঐক্যমত পােষণ করেছেন যে, মহাগ্রন্থ আল-কুরআনের পরে বিশুদ্ধতম কিতাব হ’ল দুটি ছহীহ বুখারী ও ছহীহ মুসলিম'। আর ছহীহ বুখারী হ’ল এ দুটোর মাঝে বিশুদ্ধতম। ইমাম বুখারী (রহঃ) বলেন, الم أخرج في هذا الكتاب إلا صحيحا وما تركت
‘আমি এ কিতাবে ছহীহ ছাড়া কোন হাদীছ সন্নিবেশিত করিনি। (কিতাবের পরিধি বৃদ্ধি পাবে বিধায়) অনেক ছহীহ হাদীছও সন্নিবেশিত করিনি।
বুখারী শরীফের বৈশিষ্ট্য :
বিশ্বনবী হযরত মুহাম্মদ (স) এর মুখনি:সৃত বানী সমুহের গ্রন্থাকারে সংকলনে যেসব মুহাদ্দিস বিশেষ উল্লেখযোগ্য তাদের মধ্যে বুখারী ছিলেন অন্যতম । তার সহিহূল বুখারী গ্রন্থটি মুসলিম জাতীর জন্য এক অমরত্ব অবদান ।বুখারী শরীফের বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে আলোচনা করা হলো ।
১.তীক্ন বুদ্ধি সম্পন্ন রাবীদের স্থান : বুখারী শরীফের অন্যতম বৈশিষ্ট্য হলো ইমাম বুখারী তার গ্রন্থে পাচ প্রকার রাবীদের মধ্যে কেবল প্রখর বুদ্ধিসম্পন্ন রাবীদের হাদিস গ্রহন করছেন ।
২.হাদিস সংকলনে সতকর্তা : বুখারী শরীফের আরেকটি বিশেষ বৈশিষ্ট হল হাদিস সংকলনের সময় সতর্কতার সাথে হাদীস যাচাই বাছাই করেছেন এবং ত্রুটিযুক্ত হাদীস গ্রহন থেকে বিরত রয়েছেন।
৩.সমালোচিত রাবীর সংখ্যা কম : বুখারীতে মাতউন তথা সমালোচিত রাবীদের সংখ্যা খুবই কম ।বুখারী শরীফে ৪৫৩ জন রাবীর মধ্যে মাত্র ৮০ জন জন রাবী মাতউনের পাওয়া যায় ।
৪. সহীহ হাদীস সন্নেবেশিত : বুখারী শরীফের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ন বৈশিষ্ট্য হলো কেবল সহীহ হাদীসগুলো খুজে এখানে গ্রন্থাবদ্ধ করা হয়েছে ।
৫.হাদিস লেখার পূর্বে নামায আদায় : ইমাম বুখারী প্রতিটি হাদীস সংকলনের পূর্বে গোসল করে দুরাকাত এস্তেখারা নামাজ আদায় করছেন ।
৬.ছুলাছিলা : বুখারীর আরেকটি বৈাশষ্ট্য হলো ২২ টি ছুলাছিলা রয়েছে ,যা অন্য কোন গ্রন্থে নেই ।
৭.কুরআনের আয়াত গ্রহন : হাদীস এর ওপর কোন মাসয়ালা আসলে প্রমাণস্বরূপ তিনি কুরআনের আয়াত উপস্থাপন করতেন ।
৮.জামে'র অন্তভুক্ত : বুখারী শরীফে হাদীসের বিন্যাস অনুযায়ী এটা জামে'র অন্তভূক্ত ।
৯.সাক্ষাত প্রাপ্ত রাবীর বর্ণনা : আমাম বুখারী র. এমন সব রাবীর হাদীস নিয়েছেন যাদের সাথে তার সরাসরী সাক্ষাত হয়েছে ।
১০. ফিকহী মাসয়ালাা অনুযায়ী : ফিকহ শাস্ত্রের মতো অনূরূপ অধ্যায় ও শ্রেনী বিণ্যাস করে বুখারী শরীফ সাজানো হয়েছে ।
১১.ওহীর অধ্যায় : আলোচ্য গ্রন্থে ওহীর অধ্যায় আনা হয়েছে ।
১২.মসনদ অন্তভুক্ত : বুখারী শরীফ মসনদের অন্তভূক্ত করা হয়েছে ,যা অনেক গ্রন্থের নেই ।
১৩. দূর্বল হাদিস মুক্ত : বুখারী শরীফে কোন দূর্বল হাদিস মনের অজান্তেও গ্র্রহন করা হয়নি ।
১৪.হিফজ যোগ্য : পবিত্র কুরআন মাজীদের মতো বুখারী শরীফ মুখস্ত করা যায় ।
১৫. সনদ বিহীন : বুখারী শরীফে সনদ বিহীন হাদীস কোন ক্রমেই গ্রহন করা হয়নি ।
১৬. মানদন্ড স্থাপন : এ গ্রন্থে প্রথম স্তরে হাদীস গ্রহন ,দ্বিতীয় স্তরে হাদীস নির্বচন ,তৃতীয় স্তরে হাদীস বর্জন করা হয়েছে ।
১৭.ইমামদের মতামত : বুখারী শরীফে বিভিন্ন ইমামের মতভেদ উল্লেখ করা হয়েছে।
১৮.মাসয়ালার ভিত্তিতে হাদীস : বুখারী শরীফে অনেক বৈষিষ্ট্যর মধ্যে মাসয়ালার ভিত্তিতে প্রথমে শিরোনাম দিয়ে তারপর হাদীস সংকালিত হয়েছে।
আরো দেখুন:👇👇