আবু জাফর মোহাম্মদ সালেহ (রহঃ)  এর জীবনী | আবু জাফর মোহাম্মদ সালেহ | Abu Zafar Mohammad Saleh

বীর মুজাহিদ আল্লামা শাহ সুফি আবু জাফর মোহাম্মদ সালেহ (রহঃ) 

আবু জাফর মোহাম্মদ সালেহ (রহঃ)  এর জীবনী | আবু জাফর মোহাম্মদ সালেহ | Abu Zafar Mohammad Saleh

                       জন্ম ও বংশ পরিচয়

                   -------------------------------------

শাহ সুফি আবু জাফর মোহাম্মদ সালেহ (রহঃ) বাংলা ১৩২১ সালের জৈষ্ঠ্য মাস মোতাবেক, ইংরেজি ১৯১৫ সনে রোজ বৃহস্পতিবার বর্তমান পিরোজপুর জেলার অন্তর্গত নেছারাবাদ থানায় ছারছীনা নামক গ্রামের প্রসিদ্ধি আকন বংশে সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন।তাঁর পিতা ছিলেন বাংলার প্রখ্যাত পীরে কামেল শাহ সূফী হযরত মাওলানা নেছারুদ্দীন আহমদ রহ.। তাঁর মাতার নাম মুহতারামা বেগম আফসারুন্নেসা। 


                             শিক্ষা জীবন

                   -----------------------------------

হযরত পীর সাহেব কেবলার প্রাথমিক শিক্ষা শুরু হয় তার পারিবারিক পরিম- লেই। এরপরে মকতব শেষ করে প্রথম শ্রেণী থেকে জামাতে উলা পর্যন্ত পড়াশুনা করেন স্বীয় পিতা কর্তৃক প্রতিষ্ঠিতঐতিহ্ যবাহী ছারছীনা মাদ্রাসায় । প্রতিটি জামাতে তিনি কৃতিত্বের সাথে সমাপ্ত করেন। এর পরে উচ্চ শিক্ষা লাভের জন্য চলে যান ভারতের শাহরানপুরে অবস্থিত মাজাহেরুল উলুম মাদ্রাসায়। এখান থেকে তিনি কুরআন ও হাদীসের সর্বোচ্চ সনদ লাভ করেন। মাঝখানে কিছুদিন তিনি দেওবন্দের দারুল উলুমেও পড়াশুনা করেন। হযরত পীর সাহেব কেবলা তাফসীর, হাদীস, ফেকহ, আকায়েদ, উসূল, আরবী সাহিত্য, মানতিক, বালাগাতসহ যাবতীয় জ্ঞানে পান্ডিত্য অর্জন করেন। ইলমে শরীয়তের পাশাপাশি তিনি তাঁর পিতার কাছ থেকে ইলমে মারেফতও হাছিল করেন। ছোটবেলায় ফুরফুরা শরীফের আলা হযরত পীর ছাহেব কিবলা মুজাদ্দেদে যামান আবূ বকর র. নিজের হাতের তাসবীহ দ্বারা তাকে বরণ করে নেন এবং নিজেই তাকে ‘শাহ সাহেব’ উপাধিতে ভুষিত করেন। মুজাদ্দিদে যামানের তত্ত্ববধানেই তার অধ্যাত্মিক জীবনের সূচনা হয়। ছাত্র অবস্থায়ই তিনি চার তরীকায় কামালিয়াত অর্জন করেন। 


                        বিবাহ ও আওলাদ

                   -------------------------------------

বর্তমান গোপালগঞ্জের কোটালীপাড়া থানার কুশলা গ্রামে স্বনামধন্য চৌধুরী বংশের মৌলবী মুহাম্মদ তৈয়্যেবুর রহমানের প্রথমা কন্যার সাথে হযরত পীর সাহেব কেবলা বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন। এ মহান ওলীর ঔরশে দুই পুত্র ও পাঁচ কন্যা সন্তান জন্ম গ্রহণ করেন।

                    হেদায়াত ও তাবলীগে দীন

             ------------------------------------------------

ইলমে শরীয়ত ও ইলমে মা’রেফাতের কামালিয়াত লাভ করে তিনি হেদায়াত, তাবলীগ, তা’লীম ও প্রতিষ্ঠা,বই-পুস্তক প্রণয়ন, পেপার-পত্রিকা প্রকাশসহ বিভিন্ন দীনি কাজ আঞ্জাম দিয়েছেন। তিনি বাংলার টেকনাফ থেকে তেঁতুলিয়া এবং আসাম, হেজাজ, তায়েফ, বাইতুল মুকাদ্দাস, বাগদাদ, কারবালা, ইরাক, ভারত., পাকিস্তান, সৌদি আরব, মিশরসহ মধ্য প্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে সফর এবং প্রোগ্রাম করেছেন। এক গবেষণায় দেখা গেছে যে, তার জীবদ্দশায় তিনি দাওয়াতী কাজে আনুষ্ঠানিকভাবে যে সকল বক্তব্য দিয়েছেন তার সংখ্যা লক্ষাধিক। 


                                হজ্জ পালন

                      ----------------------------------

হযরত পীর সাহেব কেবলা কতবার হজ্জ ও ওমরা পালন করেছেন তার সঠিক পরিসংখ্যন পাওয়া না গেলেও দেখা গেছে যে, প্রায় প্রতি বছরই তিনি পবিত্র হজ্জ পালনার্থে মক্কা ও মদীনায় গমন করতেন। তিনি সর্বপ্রথম হজ্জ আদায় করেন বাংলা ১৩৫৬ সনে। স্বীয় পিতা হযরত মাওলানা শাহ সূফী নেছারুদ্দীন আহমদ রহ. এর সাথে মসজিদে নববীতে ও মসজিদে হারামে বিভিন্ন সময় এবং মাহে রমজানে ই’তেকাফ করেছেন।

                      শিক্ষা বিস্তারে অবদান 

             ------------------------------------------------

বাংলাদেশে ইসলামী শিক্ষা বিস্তারে হযরত শাহ সূফী আবূ জাফর মুহাম্মদ ছালেহ (রহ) এর অবদান বাংলাদেশের ইতিহাসে সোনালী হরফে খচিত থাকবে। তিনি আমৃত্যু অদম্য উৎসাহ নিয়ে বাংলাদেশে দীনী শিক্ষা বিস্তারে ঝাঁপিয়ে পড়েন। কর্মক্ষেত্রে প্রত্যেকের ঘরে ঘরে খাঁটি নায়েবে নবী তৈরী করার জন্য পিতা কর্তৃক প্রতিষ্ঠিত ছারছীনা আলীয়া মাদ্রাসা ব্যাপক তালকীনের কাজে ব্যাপৃত হন। জীবনের শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত তিনি হেদায়েত, তাবলীগ, তা’লীম ও তালকীনের খেদমত আঞ্জাম দিয়ে গেছেন। এমনকি তার ইন্তেকালও হয়েছে তাবলীগী সফরে থাকা অবস্থায়। কুরআন ও হাদীসের নির্দেশ মোতাবেক তিনি ওয়াজ মাহফিল, সভা-সমিতি, খানকাহ, মকতব, মসজিদ, মাদ্রাসা- প্রচার ও প্রসারসহ আরও প্রতিষ্ঠা করেছেন ‘ছারছীনা দারুস্সুন্নাত জামেয়া-ই- নেছারী য়া দীনিয়া’। পীরে মরহুমের রেখে যাওয়া সেই দীনিয়া মাদ্রাসাকেও প্রত্যন্ত অঞ্চলে পৌঁছে দেওয়ার জন্য শক্ত হাতে মাঠে নেমেছেন বর্তমান হযরত পীর সাহেব কেবলা।মরহুম হযরত পীর সাহেব কেবলা এছাড়াও বাংলাদেশে বিভিন্ন স্থানে মসজিদ,মকতব, মাদ্রাসা, খানকাহ, ইবতেদায়ী মাদ্রাসা, শিক্ষকদের জন্য অরাজনৈতিক সংগঠন- জমইয়াতুল  মুদাররেসীন, মাদ্রসা শিক্ষা বোর্ড, সিলেবাস ও কারিকুলাম, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, স্কুল-কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয় ইসলামী শিক্ষা প্রবর্তনসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠার পিছনে অগ্রগামী ভূমিকা পালন করেছেন। মাদ্রাসায় শিক্ষকদেরকে স্কুল-কলেজ পর্যায়ে শিক্ষকদের মত অভিন্ন পে- স্কেল প্রদান, দাখিলকে এস.এস.সি ও ফাযিলকেত্বক সম্মান প্রদানের নীতি তাঁর প্রচেষ্টায় প্রবর্তন করা হয়েছিল। 


                   শিক্ষা বিস্তারে স্বর্ণপদক লাভ 

              ------------------------------------------------

শিক্ষা ক্ষেত্রে বিশেষ অবদান রাখার জন্য ১৯৮০ ঈসায়ী সনে শাহ সুফি  আবু জাফর মোহাম্মদ সালেহ (রহঃ) কে তৎকালীন প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান শিক্ষামোদী জাতীয় পুরস্কার ‘স্বর্ণ পদক’ প্রদান করেন। 

 

                       দীনিয়া  মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠা       

             ------------------------------------------------

 শাহ সুফি আবু জাফর মোহাম্মদ সালেহ রহঃ  জীবনের শেষদিকে দেখলেন যে, আলিয়া মাদ্রাসার আসল লক্ষ্য- উদ্দেশ্য সবকিছুই ধ্বংসের পথে। তাই তিনি এ সমস্যা সমাধানের জন্য অনেক প্রচেষ্টা চালান। যাতে পূর্বের আমল আখলাক, লেবাস-পোশাক, শিক্ষাদীক্ষা ফিরে আসে। কিন্তু তাতে যথার্থ ফলাফল না পেয়ে মাদ্রাসাকে তার সকিয় মর্যাদায় প্রতিষ্ঠিত রাখার জন্য, ফেতনার কড়াল গ্রাস থেকে মুক্ত করার জন্য শাস সুফি নেছারুদ্দীন রহঃ এর জীবনের চরম ও পরম আশা সুন্নাতে রাসূলকে জিন্দা রাখার জন্য ১৯৮৫ সালে ছারছীনাতে একটি নতুন প্রতিষ্ঠান কায়েম করেন, যার বর্তমান নাম ছারছীনা দারুসসুন্না জামেয়া-এ নেছারিয়া দীনিয়া মাদ্রাসা।


                       অরাজনৈতিক সংগঠন

              ------------------------------------------------

তাঁর ওয়ালেদ (মরহুম) কর্তৃক প্রতিষ্ঠিত অরাজনৈতিক সংগঠন ‘বাংলাদেশ জমইয়তে হিযবুল্লাহর’ মাধ্যমে তিনি এদেশে ইসলামী আন্দোলনকে চাঙ্গা করেছেন। এ সংগঠনের ব্যানারেই তিনি ১৯৭৯ সনে ২৮ ও ২৯ মে ইসলামী আদর্শ প্রতিষ্ঠা বিরোধী কার্যকলাপ উচ্ছেদের জন্য ঐতিহাসিক গণমিছিল ও পল্টন ময়দানে ‘ইসলামী মহাসম্মেলন’ সার্থকভাবে সমাপ্ত করেন। এ সম্মেলনে তৎকালীন প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান উপস্থিত থেকে আলোচনা করেন। এ সম্মেলন থেকে দশ দফা দাবী পেশ করা হয় এবং তা বাস্তবায়নের জন্য মরহুম পীর সাহেব কেবলার নেতৃত্বে একটি সর্ব দলীয় ইসলামী সংগ্রাম পরিষদ গঠিত হয়। এছাড়াও ইসলামী বিশ্ব বিদ্যালয়কে গাজীপুরে রাখার জন্য ১৯৯০ সালে এক সম্মেলনের আয়োজন করেন এবং সেখান হতে তৎকালীন এরশাদ সরকারের কাছে ১১ দফা দাবী পেশ করেন। 

                            সমাজ সংস্কার

              ------------------------------------------------

হযরত পীর সাহেব কেবলা ছিলেন তৎকালীন শ্রেষ্ঠতম সমাজ সংস্কারক। তিনি দলীয় রাজনীতির উর্ধ্বে থেকে সমাজের সর্বস্তরের সংস্কার করেন। সাধন করেছেন। তিনি বিভিন্ন বাহিনীর ইউনিফর্মকে হাফ প্যান্ট এর পরিবর্তে প্রেসিডেন্ট আইয়ূব খানের মুখ দিয়ে ফুল প্যান্টে ঘোষণা করান। রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম ঘোষণা করিয়েছিলেন প্রেসিডেন্ট এরশাদের মাধ্যমে। মসজিদের পানি ও বিদ্যুত বিল মওকুফ এবং শুক্রবার সাপ্তাহিক ছুটি, ‘রেডক্রস’কে ‘রেড ক্রিসেন্ট’ নামে নামকরণ- তিনিই করেছিলেন। সামাজিক অনাচার ও অশ্লীলতার বিরুদ্ধে হুঁশিয়ারী, ইসলাম পরিবর্তনের অপচেষ্টার প্রতিবাদ বেপর্দেগী ও ইসলাম গর্হিত কার্যকলাপ এবং গান-বাজনা বন্ধের আহ্বান হযরত পীর সাহেব কেবলাই করেছিলেন। মোটকথা তিনি সমাজের বিভিন্ন ক্ষেত্রে সমাজ সংস্কার করেছিলেন। 


                             সমাজসেবা

             ------------------------------------------------

হযরত পীর সাহেব কেবলা সর্বদা অসহায় মানুষের সেবা করতেন। বিভিন্ন স্থানে মুসলিম নির্যাতনের সোচ্চার কন্ঠে তীব্র ভাষায় প্রতিবাদ জানাতেন। আহমদাবাদ দাঙ্গায়, ভোলা বন্যায়, ১৯৮৮ সালের বন্যাসহ বিভিন্ন সময় বিভিন্নভাবে ক্ষতিগ্রস্ত ও নওমুসলিমদের পূনর্বাসনের জন্য এগিয়ে যেতেন, ত্রাণ বিতরণ করতেন। গরীব প্রতিবেশীদেরকে বিভিন্নভাবে সহযোগিতা করতেন। 

                          লেবাস-পোশাক

               ------------------------------------------------

হযরত পীর সাহেব কেবলা ওয়ালেদ মরহুমের মত অনাড়ম্বর জীবন-যাপন করতেন। সাদা রঙ এর জামা- পায়জামা পরিধান করতেন। ঘু-িওয়ালা নেছফে ছাক জামা, গোল টুপি এবং পাগড়ী পরিধান করতেন। 


                            ইবাদত বন্দেগী

                   -------------------------------------

হযরত পীর সাহেব কেবলা আমলের ব্যাপারে যথেষ্ট কঠোর ছিলেন। ফরয ও ওয়াজিবের ব্যাপারে তো কোনো কথাই নেই। সুন্নাত, মুস্তাহাব আমলও তিনি পরিত্যাগ করতের না। মাদ্রাসার ছাত্র শিক্ষকসহ মুরব্বীদেরকে আমলের জন্য বেশ তাকিদ দিতেন। তিনি তার দৈনন্দিন রুটিন রাসূলে পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামএর মুজাচ্ছাম ও ইসলাম নমূনায় তৈরী করে তদানুযায়ী আমল করতেন। 

                              অন্তিমকাল

                   ---------------------------------------

অস্তগামী সূর্য যেমন আস্তে আস্তে তলিয়ে যেতে থাকে,লোকচক্ষু থেকে তেমনি সিংহপুরুষ, অমিততেজী, কর্মবীর, মহান সাধক, হযরত মাওলানা শাহ সূফী আবূ জাফর মুহাম্মদ ছালেহ রহ.ও বৃদ্ধ বয়সে শারীরিকভাবে দূর্বল হয়ে পড়েন। ১৯৯০ ইং  সনের ১৩ ফেব্রুয়ারি, মোতাবেক বাংলা ১লা ফাল্গুন রোজ মঙ্গলবার বিকাল ৪টা পঁয়তাল্লিশ মিনিটে সকল চেষ্টাকে ব্যর্থ করে দিয়ে লক্ষ লক্ষ মুরীদানকে এতীম করে শোক সাগরে ভাসিয়ে তিনি রফীকে আ’লার ডাকে সাড়া দিয়ে চলে যান। انا لله و إنا اليه راجعون


                       জানাজার নামাজ

               _________________________

১৬ই ফেব্রুয়ারি ১৯৯০ইং জুমাবার সকাল ৯ টার সময় জাতীয় ঈদগাহ ময়দানে তার প্রথম জানাজা হয়। এরপরে হুজুর কেবলাকে বিমানবাহিনীর হেলিকপ্টারযোগে ছারছীনাতে এনে দ্বিতীয় জানাজা আদায় করা হয়। ছারছীনা জামে মসজিদের উত্তর পাশে নীজ পিতা আল্লামা শাহ সুফি নেছারুদ্দিন আহমদ (রহঃ) এর কবরের পাশে তাকে সমাহিত করা হয়। 


  বাংলাদেশের জাতীয় সংসদে শোক প্রস্তাব  

                     ______________________

তার ইন্তেকালে দেশের শীর্ষস্থানীয় নেতৃবৃন্দ সহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতারা ও বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ শোক প্রকাশ করেন। এমনকি বাহিরের রাষ্ট্র ও তার জন্য শোক প্রকাশ করে। ১৯৯০ই সালের ৩ রা জুন জাতীয় সংসদে হযরত পীর ছাহেব কেবলার মৃত্যুতে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী কাজী জাফর আহমেদ শোক প্রস্তাব উত্থাপন করেন এবং তা গৃহীত হয়। আল্লাহ তায়ালা তার সকল খেদমত কবুল করে  তাকে জান্নাতুল ফেরদাউস দান করুন ও তার হাতে গড়া দীনিয়া মাদ্রাসাকে কবুল করুন ,আমাদেরকে ও তার আদর্শের উপর অবিচল থাকার তাওফিক দান করুন আমিন।

Next Post Previous Post