জুলুমের ভয়াবহ শাস্তি | জুলুমের ভয়াবহতা | মজলুমের আর্তনাদ | ইসলামিক গল্প | Islamic History
বনি ইসরাইলের এক ব্যক্তি সমুদ্রের তীরে বসবাস করত। একদিন সে কি এক প্রয়োজনে ঘর থেকে বের হলো। সমুদ্রের বিশাল পানি রাশির পাশ দিয়ে একটু দ্রুত পথে হাঁটছিল সে। কোন দিকে ভ্রুক্ষেপ নেই তার। কিন্তু হঠাৎ এক ব্যক্তির চিৎকার শুনে, তাকে থমকে দাঁড়াতে হলো। লোকটি উচ্চ আওয়াজে বলছিল, হে লোকসকল খবরদার! মানুষের উপর জুলুম করো না। আমাকে দেখে শিক্ষা গ্রহণ করো। জুলুমের শাস্তি কত নির্মম নিষ্ঠুর আমার প্রতি লক্ষ্য করে তোমরা তা বুঝতে চেষ্টা করো। কথাগুলো শুনে লোকটির মনে কৌতুহল জাগলো। সে তার নিকট এগিয়ে গিয়ে বললো, ভাই কি হয়েছে আপনার? এমন করছেন কেন? জবাবে সে একটি দীর্ঘ নিঃশ্বাস ছেড়ে একটু জোর গলায় বলল, কিছু হয়নি আমার।
এটা আমার প্রাপ্য পাপের ফসল। জুলুমের নির্মম পরিণতি।ভাই আমি কিছুই তো বুঝতে পারছি না। অনুগ্রহ করে বিষয়টা একটু খুলে বলুন? তুমি শুনবে! শুনতে চাও. আমার অতীত জীবনে মর্মান্তিক কাহিনী? আপনি বলেন, অবশ্যই শুনবো। তাহলে বস। আমি আমার বিগত জীবনের কাহিনী তোমাকে শোনাবো। একথা বলে সে শুরু করল। আমি ছিলাম একজন সিপাহী। সমুদ্রের তীরে হেঁটে হেঁটে প্রাকৃতিক সৌন্দর্য উপভোগ করা ছিল আমার প্রিয় শখ গুলোর একটি। আমাকে এ থেকে বিরত রাখতে পারতো না। কোনদিন সকাল বিকাল দুপুর সম্ভব না হলেও একবার তো অবশ্যই যেতাম।
বিশাল আফা নিরাশের পর্বতসম উর্মিমালা দেখে দারুণ পুলকিত হতাম। একদিনের ঘটনা। তখন ছিল সূর্যাস্তের সময় বরাবরের আমি সমুদ্রের তীরে সূর্যাস্ত দর্শন করছিলাম। সূর্য যখন একটা বড় থালার মত টকটকে লাল হয়ে উঠতে শুরু করল। তখন আমার মনে হল একটা রক্তগোলাপ যেন ধীরে ধীরে সমুদ্রের মাঝখানে ডুবে যাচ্ছে। আমি যখন সাগরের মাঝে সূর্যাস্তের মন মুগ্ধকর দৃশ্য দেখছি।
তখন একজন জেলে একটি বিশাল মাছ শিকার করছিল। তার চেহারা খুশিতে পুলকিত ছিল। আত্মা হৃদয় রাজ্যে প্রবাহিত হচ্ছিল আনন্দের স্নিগ্ধ সমীর আনন্দের হিল্লোল চলছিল তার গোটা দেশজুড়ে। আমি ধীরে ধীরে তার নিকট গেলাম। সোনালী রংয়ের বিশাল আকৃতির মাছটি প্রাণভরে দেখলাম। সত্যি কথা বলতে কি এত সুন্দর বিরাট আকৃতির মাছ জীবনে কোনদিন আমি দেখিনি। এক পর্যায়ে মাছটির প্রতি আমার লোভ এসে গেল। যেকোনো উপায়ে সেটা পাওয়ার জন্য হৃদয় মন ব্যাকুল হয়ে উঠলো। সিদ্ধান্ত নিলাম যেভাবেই হোক এ মাছটি আমি নিব। এটা আমাকে পেতেই হবে। এ মাছটি আমি চাই। মাছটি যতই দেখছি ততই আমার মনের মধ্যে তাকে হস্তগত করার লোভ তীব্রতার হচ্ছিল। কিছুতেই তা থেকে দৃষ্টি ফেরাতে পারছিলাম না। একসময় লোকটির নিকট মনের কথাটি প্রকাশ করে বললাম, ভাই তোমার মাছটি আমার খুব পছন্দ হয়েছে।
📕বেশি পড়ুন বেশি বেশি জানুন........
হযরত কা’ব বিন মালেক (রাঃ) এর মর্মান্তিক কাহিনী |হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আমর ইবনুল আস (রাঃ) হাদিস মুখস্থকরণ
তুমি এটা আমাকে দিয়ে দাও। জবাবে সে বলল, না। এ মাছ আমি কোনো অবস্থাতেই দিব না। আমি বললাম, কেন দিবেনা? মাছটি যে আমার খুব পছন্দ হয়েছে। যদি এ মাছটি তুমি দিতে না চাও। তবে উপযুক্ত মূল্য দিয়ে আমি এটা ক্রয় করতে চাই। উপযুক্ত মূল্য কেন হাজার দিরহাম দিল আমি হাত ছাড়া করব না। কেন? মাছটির প্রতি তোমার এত আগ্রহ কেন? আমি সারাদিন অনেক কষ্ট করে এ মাছটি স্বীকার করছি। অফুরন্ত আপনার নিকট যেমনি এটা পছন্দের তেমনি আমার নিকট এটা বহুগুণ পছন্দের। আর কষ্ট করে অর্জিত পছন্দের জিনিস কেউ হাতছাড়া করে কি? এসব আমি জানিনা। আমার পরিষ্কার কথা হলো মাছটি আমার ভালো লেগেছে। সুতরাং যে কোনো মূল্যে সেটা আমি হস্তগত করবোই।
জনাব, এ মাছের মালিক আমি। আমি না দিলে আপনি এটা কিভাবে নিবেন? আমি সিপাহী, মানুষের থেকে কিভাবে নিতে হবে। তা আমার ভালো করেই জানা আছে। আপনি সিপাই মানুষ, তাই বলে দুর্বলের উপর অত্যাচার করা তো আপনার জন্য শোভা পায় না। এত কথার প্রয়োজন নেই। যা বলছি মানতে চেষ্টা করো। অন্যথায় মাছ তো হারাবেই পয়সাও পাইবেনা। এটা কেমন কথা, আমার প্রিয় জিনিসটি আপনি জুলুম করে অন্যায় ভাবে নিয়ে যাবেন। আমি জুলুম-অত্যাচার বুঝি না। আমার অভিধানে অন্যায় বলতে আমি কিছু বুঝিনা। আমি যা চাই যা পছন্দ করি তা আমাকে পেতেই হবে। এটা আমার স্বভাব। জনাব, জুলুম করা ভালো নয়, এর পরিণতি ভালো নয়, তাই একটু ভেবে দেখেছেন কি? এত কিছু ভেবে দেখার সময় আমার নেই। আর মন্দ পরিণতির কথা বলছো এসবের পরোয়া আমার নেই। জনাব, একি বলছেন, আপনি একজন বুদ্ধিমান। মানুষের পক্ষে এমন কথা সাজে?
দেখো আমার ধৈর্যের বাধ কিন্তু ভেঙ্গে যাচ্ছে। তোমার মত একজন সাধারন ব্যক্তির সাথে এত কথার প্রয়োজন নেই আমার। তাহলে আপনি কি করতে চান? দেখো কি করতে চাই। এ কথা বলে তার নিকট থেকে আমি জোরপূর্বক মাছটি ছিনিয়ে নিয়ে বাড়ির দিকে রওয়ানা দিলাম। লোকটি অনুনয়-বিনয় করে কেঁদে কেঁদে মাছটি ফিরিয়ে দেয়ার জন্য আবেদন করেছিল। কিন্তু তার কোন কথায় আমি মাছটি ফিরিয়ে দেই নি।
অবশেষে সে একটি দীর্ঘ নিঃশ্বাস ছেড়ে শুধু এতোটুকু বলে চলে গেল যে, হে রহমানুর রহিম! আমি দুর্বল অসহায় তোমার দুর্বল বান্দা। আমার ওপর কত বড় জুলুম করছে। তুমি এই জুলুমের এমন বিচার করো যেন তা থেকে সকলে শিক্ষা গ্রহণ করতে পারে। আত্মার পার্থনাতে তখন আমি বিনয়ী তো হইনি জুলুমের পরিণতির কথা একবারও চিন্তা করেনি। বরং উল্টো রাগে আগুন হয়ে আমার চক্ষুদ্বয় টকটকে লাল হয়ে গেল। একজন সাধারন জেলে আমার কথা কেন মানল না। এইজন্য দুঃখ ও অপমান আমার সমস্ত শরীর কাঁপতে লাগল। তাই হঠাৎ আঘাত খাওয়া বাঘের গর্জন করে বললাম। এই খবিশ ভাগ এখান থেকে। সে বলল, না আমার মাছ না নিয়ে আমি যাব না। যাবি না এত টুকু বলে তার মাথায় প্রচন্ড জোরে আঘাত করলাম। আমার আঘাতের প্রচণ্ডতায় সে সঙ্গে সঙ্গে মাটিতে লুটিয়ে পরল। অতঃপর একটি বিকট চিৎকার করে জ্ঞান হারালো। লোকটি জমিনে পরে আছে আশেপাশে কোন লোকজন নেই।
এ মুহূর্তে লোকটির জ্ঞান ফেরানোর চেষ্টা করা আমার প্রয়োজন ছিল। কিন্তু সেদিন আমি এতই নিষ্ঠুর হয়ে গিয়েছিলাম যে তার প্রতি আমার সামান্যতম সহানুভূতি ও সৃষ্টি হলো না। বিন্দুমাত্র মানবতা বোধ জাগ্রত হল না। তাই আমি সেখানে এক মুহুর্ত দাঁড়িয়ে না থেকে তাকে একাকী রেখে আমার বাড়ির দিকে রওয়ানা দিলাম। বেশিদূর যাওয়া হলো না আমার শুরু হল জুলুম-অত্যাচারের ভয়ঙ্কর শাস্তি। আমি মাছ হাতে নিয়ে দ্রুত বেগে হাঁটছি। কিন্তু খোদার কি কুদরত কিছুদূর অগ্রসর হবার পর মাছটি আমার আঙ্গুল কামড়ে ধরল। ঘটনার আকস্মিকতায় ভয় পেয়ে গেলাম। হাত ছাড়ানোর চেষ্টা বারবার করলাম কিন্তু কিছুতেই তা সম্ভব হলো না।
পরে ওই অবস্থাতে বাড়িতে এলাম। ঘটনা শুনে আশেপাশের অসংখ্য লোক সমবেত হল। অবশেষে মাছটি কেটে ফেলে বহু চেষ্টা তদবিরের পর বাড়ির সকলে মিলে সেই মাছের কবল থেকে আমাকে উদ্ধার করতে সমর্থ হলো। মাছটি আমার আঙ্গুল কামড়ে ধরা শুরু থেকে আমি প্রচন্ড ব্যথায় অস্থির ছিলাম। আংগুল থেকে মাছ ছাড়ানোর পর ব্যথার মাত্রা আরও বৃদ্ধি পেল। অসহ্য যন্ত্রণায় ছটফট করতে লাগলাম। অবশেষে একজন অভিজ্ঞ ডাক্তার আংগুল পরীক্ষা করে বললেন, এই আঙ্গুল কেটে ফেলতে হবে।
অন্যথায় তার পছনের সর্বোচ্চ সংক্রমিত হয়ে ভয়াবহ অবস্থা সৃষ্টি করতে পারে। ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী আঙ্গুল কাটা হল। কিন্তু সেই ব্যক্তি হাতের তালু পর্যন্ত সংক্রমিত হলে হাত কেটে ফেলার নির্দেশ দিলেন। ডাক্তারের নির্দেশ সঙ্গে সঙ্গে পালন করা হলো। কিন্তু হাতের তালু কেটে ফেলার পর সেই বেদি হাতের কব্জিতে দেখা দিল। বর্ণনাকারী বলেন, ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী এভাবে আমি আমার হাত বারবার কাঁটতে থাকলাম। আর ওই মারাত্মক রোগটি আমার দেহের অভ্যন্তরের দিকে অগ্রসর হতে থাকলো। একপর্যায়ে আমার মনে ভয় ঢুকে গেল। আমি বাড়িঘর লোকালয় ত্যাগ করে জঙ্গলে পালিয়ে গেলাম। একদিন আমি জঙ্গল থেকে বের হয়ে মরুভূমিতে এলাম। প্রচন্ড ব্যাথায় তখন আমি চিৎকার করে কাঁদি। কিন্তু আমার চিৎকার শোনার মত কোন লোক সেখানে ছিল না। এক সময় একটি গাছের ছায়া বসে পড়লাম।
কিছুক্ষণ পর একটু আরাম অনুভূত হলে, আমি সেখানে ঘুমিয়ে গেলাম। সেই ঘুম ই আমি স্বপ্নে দেখলাম, এক ব্যক্তি আমাকে বলছে, হে নির্বোধ! এভাবে একের পর এক তোমার দেহের সকল অঙ্গ প্রতঙ্গ কেটে ফেলল এই কঠিন মুসিবত থেকে তুমি উদ্ধার পাবে না। স্মরণ করো, তুমি একদিন এক দুর্বল অসহায় জেলের মাছ জোরপূর্বক ছিনিয়ে নিয়েছিল। এটা হল তোমার সেই জুলুমের শাস্তি। মনে রেখো যতদিন পর্যন্ত তুমি তার হক পেরিয়ে না দেবে ততদিন তুমি এ আযাব থেকে কিছুতেই মুক্তি পাবে না উপরোক্ত স্বপ্ন দেখার পর আমি আর বিলম্ব করলাম না। সাথে সাথে ওই জেলের খোঁজে সমুদ্রের তীরে চলে গেলাম।
সেখানে গিয়ে দেখলাম, সে মৎস্যশিকারি সমুদ্রে জাল ফেলে বসে আছে। আমি অদূরে দাঁড়িয়ে তার জাল টানা অপেক্ষা করতে লাগলাম। কিছুক্ষণ পর সে জাল টানলো দেখা গেল জালে প্রচুর মাছ আটকা পড়ছে। সে মাছগুলো খাঁচায় পড়ে অবসর হওয়ার পর আমি তার নিকট গিয়ে বললাম, হে আল্লাহর বান্দা! তুমি আমাকে ক্ষমা করে দাও। সে জিজ্ঞেস করল, তুমি কে? আমি বললাম, আমি সেই হতভাগা সিপাহী। যে একদিন তোমার মাথায় আঘাত করে তোমার প্রিয় পছন্দের মাছ টি নিয়েছিলাম। অতঃপর আমার হাতটি কাপড়ের নীচ থেকে বের করে ফেললাম। তোমার উপর জুলুম করার কারণে আল্লাহ আমাকে এ শাস্তি দিয়েছেন।
হাতের দৃশ্য দেখা মাত্রই বর্জ্যপাতের আহতের নেয় লোকটি চমকে উঠলো। অতঃপর নিশ্চুপ থাকার পর উচ্চ স্বরে বলল, এমন ভয়ানক অবস্থা থেকে আমি তোমাকে ক্ষমা করে দিলাম। আর তার কথা শেষ হওয়ার সাথে সাথে হাতের ক্ষতস্থান থেকে একটি পোকা বের হয়ে মাটিতে পড়ে গেল। সঙ্গে সঙ্গে সব ব্যথা ও বেদনা দুরীভুত হলো। তাহলে বুঝা গেল জুলুমের শাস্তি কত ভয়ানক। তা আমরা সহজে উপলব্ধি করতে পারি। এছাড়া পরকালের ভয়ানক নির্মম শাস্তি তো আছেই। আমরা যেন মানুষের হক সঠিকভাবে আদায় করতে পারি। আল্লাহ তাআলা আমাদেরকে সেই তৌফিক দান করুক। আমিন
📘পোস্টি ভালো লাগলে আরো পড়ুন........
আসমা বিনতে আবি বকর রাঃ এর দুঃখের জীবনহযরত বেলাল (রাঃ) কাহিনী
হযরত আবু বক্কর সিদ্দিক (রাঃ) এর আল্লাহর ভয়