মৃত সাগর | লূত সাগরের আয়তন ও বৈশিষ্ট্য এবং ইতিহাস | Dead Sea | Israel | Jordan | Dead Sea History
![]() |
মৃত সাগরের ইতিহাস |
লূত সাগর বা মৃত সাগরের অবস্থান এবং আয়তনঃ- পবিত্র বায়তুল মুকাদ্দাস ও জর্দান নদীর মাঝে লূত সাগর বা মৃত সাগর অবস্থিত। লূত সাগরের পূর্বে ঈজরাইল। সাগর উত্তর-দক্ষিণে লম্বালম্বিভাবে বিস্তৃত। ৭৭ কিলোমিটার এবং প্রস্থ ৫ থেকে ১৮ কিলোমিটার। সমুদ্র সমতল থেকে এর অবস্থান ৪০০ মিটার নিচে।সাগরের গড় গভীর ১২০ মি. বা ৩৯৪ ফুট পর্যন্ত।
লূত সাগর বা মৃত সাগরের বৈশিষ্ট্যঃ- অপার রহস্য ঘেরা এই সাগর। কোন কিছু এই লুত সাগরের পানিতে ডুবে না। কোন প্রাণী লুত সাগরের বুকে পড়লে তার মৃত্যু অবধারিত। এর পানি অত্যধিক লবনাক্ত। সাধারণত সমুদ্রের পানিতে লবণাক্ততা প্রতি হাজার গ্রামে ৩.৫ ভাগ। আর লুত সাগরের পানির লবণাক্ততার মাত্রা প্রতি হাজার গ্রামে ২৩৮ ভাগ। এই অতিরিক্ত মাত্রায় লবণাক্ততার কারণে এর পানির ঘনত্ব অনেক বেশি। এ কারণেই কোনকিছু এতে ডুবে না। লুত সাগরের পানি অত্যান্ত বিষাক্ত। ফলে পানাহার ও ব্যবহারের জন্য সম্পূর্ণ অনুপযুক্ত। স্বর বর্ণের খনিতে যেমন কোন কিছু পড়লে যেমন স্বল্প সময়ের মধ্যে বিলিয়ে যায়। তেমনি অতিরিক্ত লবণ মিশ্রিত পানিতে কোন প্রাণী বা জীবজন্তু পড়লে তা বিলীন হতে সময় লাগে না। রাসায়নিক বিশ্লেষণে দেখা গেছে এর পানিতে অত্যাধিক পরিমাণে পটাশিয়াম ক্লোরাইড, ম্যাগনেসিয়াম ক্লোরাইড, ক্যালসিয়াম ক্লোরাইড, সোডিয়াম ক্লোরাইড এবং সোডিয়াম সালফেট রয়েছে। এগুলোর সমন্বয়ে যে কোন কিছু বিষাক্ত হওয়ার জন্য যথেষ্ট। এরূপ বিরল বৈশিষ্ট্য সাগর পৃথিবীতে দ্বিতীয় নেই। ভূবিজ্ঞানী বৈশিষ্ট্যের একটা ব্যাখ্যা দেওয়ার চেষ্টা করেছেন। আর তাদের মতে, উষ্ণমন্ডল এ অবস্থিত সাগরের চারদিকে মরু অঞ্চল থাকায় এবং বাষ্পীভবন বেশি। অন্যদিকে বৃষ্টিপাত কম এবং নদী সাগর পানি সরবরাহ পরিমানকৃত কম। অধিক লবণাক্ত তার কারণ উল্লেখ করা যেতে পারে। লুত সাগরের একমাত্র সংযোগ রয়েছে জর্দান নদী। এই নদীর পানিতেও জলজ প্রাণীর বসবাসের জন্য উপযুক্ত নয়। উচ্চ বায়ুমণ্ডলীয় আচ্ছা চাপ থাকার কারণে এ স্থানটি শ্বাসকষ্টে ভুগতে থাকা রোগীদের জন্য বেশ উপকারী। চর্ম রোগীদের জন্য দীর্ঘ সময় স্নান করা বেশ উপকারী। এ সাগরে কোন মাছ বা উদ্ভিদ বাঁচতে পারে না বলে একে ডেড সী বা মৃত সাগর বলা হয়। এখানে শুধুমাত্র সামান্য কিছু ছত্রাক ও ব্যাকটেরিয়া অণুজীব সন্ধান পাওয়া যায়।
📖 আরো পড়তে পারেন......
ইমাম আবু হানিফা (রহঃ) এর জীবনী
লূত সাগর বা মৃত সাগরের ইতিহাসঃ- লুত সাগর এই নামকরণ লুত আলাইহিস সালাম এর আমলে সংঘটিত হয়েছে এক বিরল দৃষ্টান্ত স্থাপনকারী। ঐতিহাসিক ঘটনার সঙ্গে এর সংশ্লিষ্টতার আবাস দান করে। ঐতিহাসিক ধারণা মতে, লুত আলাইহিস সালাম এর জাতির বসবাস ছিল লুত সাগরের এই জায়গাটিতে। অভিশপ্ত এই জাতিকে আল্লাহতালা ধ্বংস করে দেন এবং ভবিষ্যতে মানুষের কাছে দৃষ্টান্ত হিসেবে চিরস্থায়ী করে রেখে দেন। বিভিন্ন সূত্র থেকে জানা যায়, হযরত লূত আলাই সালাম এর জাতির অবর্ণনীয় নৈতিক অধঃপতন ঘটেছিল। তারা স্ত্রীর সংসর্গ ত্যাগ করে প্রকাশ্য দিবালোকে জনসমাবেশের মধ্যে সমকামিতার মত জঘন্য অপরাধে নিজেদের অভ্যাস ত্যাগ করে ফেলেছিল। পুরুষ লোলোপাত তাদের মধ্যে এতটাই প্রকট হয়ে উঠেছিল। যে অতিথি পর্যন্ত নিজেকে নিরাপদ ভাবতে পারত না। হযরত লুত আলাই সালাম এর স্ত্রী এই পাপীদের সহযোগী ছিল। শুধু তাই নয় ওই এলাকা দিয়ে কোন প্রতীক বা কোন কাফেলা যাতায়াত করতে পারত না। এরা সব লুটপাট করে নিয়ে যেত, খুন করত তাদেরকে। এই অধঃপতিত বেপরোয়া জাতিকে আল্লাহতালা কঠিন শাস্তির মাধ্যমে ধ্বংস করে দিলেন। জমিনে তার উল্টো তার গভীরে তিনি তাদের প্রোথিত করে দেন। একই সঙ্গে তাদের ওপর নিক্ষেপ করা হয় প্রস্তর। পবিত্র কোরআনে বিভিন্ন সুরায় ঘটনা সম্পর্কে উল্লেখ পাওয়া যায়, সূরা আরাফে আল্লাহ তা'আলা বলেন,
ولطا اذ قال لقومہ أتأتون الفحشة ما سبقکم بھا من احد من العالمین (٨٠) انکم لتأتون الرجال شھوةمن دون النساءٕ بل انتم قوم مسرفون (٧١) وما کان جواب قومہ الا ان قالوا اخرجوھم من قریتکم انھم اناس یتطھرون (٧٢) فانجینہ واھلہ الا امرأتہ کانت من الغبرین(٨٣) وامطرنا علیھم مطرا فانظر کیف کان عقبة المجرمین (٨٤)
অনুবাদঃ- আর আমি লূতকে প্রেরণ করেছিলাম। যখন সে স্বীয় সম্প্রদায়কে বলল, তোমরা কী এসব অশ্লীল কাজ করছ? যা তোমাদের পূর্বে সারাবিশ্বে কেউ করেনি। (৮০) তোমরা যৌন তাড়নায় স্ত্রীদেরকে বাদ দিয়ে পুরুষদের কাছে গমন করছো। তোমরা হচ্ছো এক সীমালংঘনকারী সম্প্রদায়। (৮১) তাঁর সম্প্রদায় এ ছাড়া কোন উত্তর দিল না যে, বের করে দাও এদেরকে শহর থেকে। এরা খুব সাধু থাকতে চায়। (৮২) অতঃপর আমি তাকে ও তাঁর পরিবারকে বাঁচিয়ে দিলাম। কিন্তু তার স্ত্রীকে বাচাইনি। সে তাদের মধ্যেই রয়ে গেল, যারা রয়ে গেল। আমি তাদের ওপর প্রস্তর বৃষ্টি বর্ষণ করেছিলাম। (৮৩) অতএব, দেখো! গোনাহগারদের পরিণতি কেমন হয়েছে। (৮৪) সূরা ঃ- আারাফ ( আয়াত ঃ ৮০-৮৪)
মাজহারি কিতাবে, আমর ইবনে দীনার বলেন, এই জাতির পূর্বে পৃথিবীতে কখনো এ হেন কুকর্ম দেখা যায়নি। সাধ গোত্রের পূর্বে কোন ব্যক্তির চিন্তা ঐদিকে যায়নি। ( তাফসীর ইবনে কাসীর) আরও বলা হয়েছে, উমাইয়া খলিফা আব্দুল মালেক বলেন, কোরআনে হযরত লুত আলাই সালাম এর সম্প্রদায়ের ঘটনা উল্লেখ না হলে, আমি কল্পনাও করতে পারতাম না যে, কোন মানুষ এরকম কাজ করতে পারে।
একারণে সাহাবী তাবেয়ী ও মুজতাহিদগণ এ অপরাধকে সাধারন ব্যভিচারের চাইতেও অধিক গুরুতর অপরাধ ও গুনাহ বলে সাব্যস্ত করেছেন। ইমাম আযম আবু হানিফা রহমাতুল্লাহ আলাইহি বলেন, যারা এ কাজ করে তাদেরকে ওরকম শাস্তি দেওয়া উচিত। যেমন, হযরত লুত আলাইহিস সালামের সম্প্রদায়কে আল্লাহর পক্ষ থেকে দেওয়া হয়েছে। অর্থাৎ আকাশ থেকে প্রস্তরখন্ড ঘোষিত হয়েছে তাই এরকম উঁচু পাড় হতে নিচে ফেলে দিয়ে উপর থেকে প্রস্তর নিক্ষেপ করা উচিত। (আহমদ, আবু দাউদ, তিরমিজি ও ইবনে মাজাহ) হযরত ইবনে আব্বাস রাঃ হতে বর্ণিত আছে, তিনি বলেন, রাসূলে পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এরশাদ করেন, একাজে জরিত উভয় ব্যক্তিকে হত্যা করো। (তাফসীর ইবনে কাসীর) সুতরাং আল্লাহ তায়ালা আমাদেরকে এসব গুনাহের কাজ থেকে হেফাজত করুক।
পোস্টি ভালো লাগলে এগুলো পড়ুন...