অহংকারের পরিচয় ও ভয়াবহতা এবং অহংকারীর শাস্তি | অহংকার থেকে বাচার উপায় | ইসলামের আলো

আল্লাহর সাথে বান্দার সম্পর্কের সবচেয়ে বড় বাধা হল অহংকার। অহংকার হল আল্লাহ তাআলার চাদর। যে ব্যক্তি আল্লাহ তাআলার চাদর নিয়ে টানাটানি করবে, আল্লাহ্ তাঁর উপর রাগান্বিত হন। এই পৃথিবীতে যারা অহংকার করেছে, তারা লাঞ্ছিত, অপমানিত হয়ে এই পৃথিবী থেকে বিদায় নিয়েছে। অহংকারীকে কেউ পছন্দ করেনা।

অহংকারের পরিচয় ও ভয়াবহতা এবং অহংকারীর শাস্তি | অহংকার থেকে বাচার উপায় | ইসলামের আলো
অহংকার এর পরিচয়ঃ-
অহংকার অর্থ হল নিজেকে বড় মনে করা, আমিত্ব, আত্মঅহংকার বেড়ে যাওয়া।

শরীয়তের পরিভাষায়, দুনিয়াবী কোন গুণে নিজেকে ইচ্ছাকৃতভাবে বড় মনে করা। যাতে অন্যকে তুচ্ছ বলে মনে হয়। অহংকার একজন মুমিন মুসলমানের জন্য সকল কল্যান লাভের অন্যতম বাধা।

কুরআনের আলোকে অহংকারের ভয়াবহঃ-  আল্লাহ তা'আলা পবিত্র কুরআনুল কারীমে ইরশাদ করেন,  নিশ্চয় যারা আমার এবাদত করতে অহংকার করবে। অচিরেই তারা জাহান্নামের দাখিল হবে লাঞ্চিত হয়ে।  (সূরা মুমিন, আয়াতঃ৬০)

আল্লাহ তা'আলা অন্যত্র বলেন, দাম্ভিক ও অহংকারীদের অন্তর খোদা এভাবেই মোহর লাগিয়ে বন্ধ করে দেন।  (সূরা মুমিন, আয়াত ৩৫)

আল্লাহ তা'আলা আরও বলেন, নিশ্চয় আল্লাহ তাআলা অহংকারীকে পছন্দ করেন না।

মহান আল্লাহ তায়ালা আরো বলেন, যারা পৃথিবীতে অন্যায় ভাবে গর্ববোধ করবে, আমি তাদেরকে আমার বিধান থেকে দূরে রাখব।  (সূরা আরাফ, আয়াতঃ১৪৬)

আল্লাহ তাআলা এরশাদ করেন, ইবলিশ সেজদা করতে অস্বীকার করল। অহংকার করল। ফলে, সে কাফের দের দলভুক্ত হয়ে গেল। ( সূরা বাকারা, আয়াতঃ৩৪)

আল্লাহ তাআলা অহংকারীর অবস্থান সম্পর্কে পবিত্র কোরআনুল কারিমে বলেন, অহংকার এর বাসস্থান অত্যন্ত নিকৃষ্ট। ( সূরা যুমার, আয়াতঃ৭২)

হাদিসের আলোকে অহংকারের ভয়াবহঃ-    হযরত আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ রাঃ হতে বর্ণিত, রাসূল করীম সাঃ এরশাদ করেন, যার অন্তরে অনু পরিমাণ অহংকার আছে, সে কখনও জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবে না। এক ব্যক্তি আরজ করল, ইয়া রাসূলাল্লাহ! সকলেই তো এটা পছন্দ করে যে, তার পোশাক ভালো হোক, জুতাজোড়া ভালো হোক, এসব অহংকার এর মধ্যে শামিল হবে? তিনি বলেন, আল্লাহ তায়ালা নিজেই সুন্দর তাই সৌন্দর্য কে ভালবাসে। আর অহংকার হল হকের ক্ষেত্রে অহমিকা প্রদর্শন করা এবং মানুষকে হেয় প্রতিপন্ন করা।  (মেশকাত শরীফ)

হযরত আবু হুরায়রা রাঃ হতে বর্ণিত তিনি বলেন, রাসূল করীম সাঃ এরশাদ করেন, তিন শ্রেণীর মানুষ এমন যাদের সাথে আল্লাহতালার কিয়ামতের দিন কথা বলবেন না এবং তাদেরকে পাপ পঙ্কিলতা থেকে পবিত্র করবেন না। অপর বর্ণনায় আছে, আল্লাহ তাআলা তাদের প্রতি দৃষ্টিপাত করবেন না। আর তাদের জন্য থাকবে কঠিন শাস্তি। তারা হচ্ছে বৃদ্ধ ব্যভিচারী,  মিথ্যাবাদী বাদশা ও অহংকার গরিব। ( মুসলিম শরীফ)

হযরত আবু হুরায়রা রাঃ হতে বর্ণিত, রাসূল সাঃ বলেন, আল্লাহ তাআলা এরশাদ করেন, অহংকার আমার চাদর এবং মহত্ব আমার ইজার। কেউ যদি এর কোনটি নিয়ে আমার সাথে দ্বন্দ্ব করে, তাকে আমি জাহান্নামে নিক্ষেপ করব। (মেশকাত শরীফ)

অহংকারের রুপঃ-  অহংকার একটি আপেক্ষিক বিষয়। এতে একাধিক বিষয়ের উপস্থিতি দরকার। ১. অহংকারী  ২. যার সাথে অহংকার করা হয় ৩. যে বিষয় নিয়ে অহংকার করা হয়। অহংকার ও আত্মপ্রীতি মধ্যে পার্থক্য এখানেই আত্মপ্রীতিতে কেবল কর্তার উপস্থিতিই যথেষ্ঠ। মানুষ যদি একাই সৃজিত হয় এবং তার সাথে অন্য কেউ না থাকে। তবে সে আত্মপ্রীতি তে লিপ্ত হতে পারবে অহংকার করতে পারবে না। এ থেকে বুঝা গেল, অহংকার কেবল নিজেকে বড় মনে করার নাম নয়। কেননা, মাঝে মাঝে মানুষ নিজেকে বড় মনে করে কিন্তু অপরকে নিজের চেয়ে বড় অথবা সম্মান জ্ঞান করে। এতে অহংকার হয় না। অনুরূপভাবে অপরকে হেয় মনে করাও অহংকার জন্য যথেষ্ট নয়। 

কেননা মাঝে মাঝে মানুষ অপরকে হেয় মনে করে কিন্তু নিজেকে তার চেয়েও হেয় মনে করে। এমন অবস্থায় অহংকারী হয় না। অহংকারের জরুরী বিষয় হলো নিজের একটি মর্যাদা জানা এবং অপরের একটি মর্যাদা জানা। অতঃপর নিজের মর্যাদাকে অপরের মর্যাদার চেয়ে সেরা মনে করা। বিশ্বাসের এর মধ্যে তিনটি বিষয় একত্রিত হলে অহংকার হবে। কেবল নিজের মর্যাদা জানার নাম অহংকার নয়। বরং ওই তিনটি বিষয় জানার ও বিশ্বাসে অহংকার হলে মনের মধ্যে একটি ফুৎকার সঞ্চার হয় এবং মান সন্মান ও আনন্দের দিকে গতিশীলতা সৃষ্টি হয়। সম্মান ও আনন্দের দিকে এ গতিশীলতাকে অহংকার বলে। রাসূলে পাকের উক্তি হে আল্লাহ, আমি আপনার নিকট আশ্রয় চাই অহংকার এর ফুৎকার থেকে।

অহংকারের কারণঃ- এহইয়াউ উলুমুদ্দীন কিতাবে অহংকারের সাতটি কারণ বর্ণনা করা হয়েছে। আর তা হলোঃ 

  • এলেম বা জ্ঞান। 
  • আমল বা ইবাদত।
  • বংশমর্যাদা। 
  • সৌন্দর্য। 
  • শক্তি। 
  • ধন সম্পদ। 
  • বন্ধুবান্ধব ও সঙ্গী সাথীদের প্রাচুর্য।

অহংকারের ক্ষতি ঃ- 

(১) চিরস্থায়ী জাহান্নামের উপযুক্ত হওয়া।

(২) হামান, কারুন, ফেরাউন, নমরুদের সঙ্গী হওয়া।

(৩) আল্লাহর নেয়ামত, রহমত, জান্নাত থেকে বঞ্চিত হওয়া।

অহংকার থেকে বাঁচার উপায় ঃ- 

১. সব সময় আল্লাহ তা'আলাকে স্মরণ করতে হবে অর্থাৎ জিকির করতে হবে।

২. এছাড়াও অহংকার ইবলিশ, ফেরাউন, কাফের, মুশরিকদের চরিত্র। আর বিনয়-নম্রতা আম্বিয়া, আউলিয়া, সালেহীনদের চরিত্র। একজন মুসলমানের জন্য ইবলিশ, ফেরাউন, কাফের, মুশরিকদের চরিত্র পরিত্যাগ করে আম্বিয়া আউলিয়াদের চরিত্রে চরিত্রবান হওয়া আবশ্যক।

৩. মানব সৃষ্টির মূল পদার্থ হল এক ফোঁটা নাপাক পানি এবং শেষ হলো একটি দুর্গন্ধময় মৃতদেহ। সুতরাং মানুষের অহংকার করা চরম নির্বুদ্ধিতা ছাড়া আর কিছুই নয়।

৪.মানুষ হল আল্লাহর বান্দা বা গোলাম। আল্লাহপাক হলেন মনিব, মালিক ও প্রভু। সুতরাং মালিকের সামনে গোলামের অহংকার করা নির্বুদ্ধিতার পরিচয়।

৫. পবিত্র কোরআন ও হাদিসে বর্ণিত অহংকারের ভয়াবহ পরিণতি সম্পর্কে জ্ঞাত হয়ে তা বর্জন করা এবং বিনম্রতার ফজিলত উপকারিতা বুঝে তা অর্জন করার জন্যে চেষ্টা করা আবশ্যক।

Next Post Previous Post