কুরবানির মাসআলা/মাসায়েল | মান্নত কুরবানী | অসিয়ত কুরবানী | কুরবানীর গোশত বণ্টন | কুরবানীর পশু জবাই করার নিয়ম | Eid al-Adha | Qurbani | Islamer Alo

মান্নত কুরবানির প্রসঙ্গে মাসআলা।

প্রশ্নঃ- শরীয়তের দৃষ্টিতে মান্নত কুরবানীর হুকুম কি ?? 

উত্তরঃ- যেকোনো কাজ সিদ্ধি হওয়ার উদ্দেশ্যে কুরবানীর মান্নত করিলে উক্ত কাজ সিদ্ধি হওয়ার পর তাহার উপর কুরবানী ওয়াজিব হইবে। সেই ব্যক্তি নেসাবের মালিক হোক বা না হোক, ধনী হোক আর গরিব হোক। কাজ সিদ্ধি না হলে মান্মত পূর্ণ করা ওয়াজিব হইবেনা। (ফতোয়ায়ে শামী ৫/২০৩পৃ.)

প্রশ্নঃ- মান্নত কোরবানির পশুর হুকুম কি হইবে ?? 

উত্তরঃ- কুরবানির পশুর মতই মান্নত কুরবানির পশুর হকুম অর্থাৎ কুরবানী শুদ্ধ হবার জন্য যেসব শর্ত প্রযোজ্য যেমন পশুর বয়স পূর্ণ হওয়া, দোষ মুক্ত হওয়া ইত্যাদি মান্নত কোরবানির ক্ষেত্রে ও ঐসব শর্ত প্রযোজ্য। (রদ্দুল মুহতার ৫/২০৩ পৃ.)

কুরবানির মাসআলা/মাসায়েল | মান্নত কুরবানী | অসিয়ত কুরবানী | কুরবানীর গোশত বণ্টন | কুরবানীর পশু জবাই করার নিয়ম | Eid al-Adha | Qurbani | Islamer Alo

প্রশ্নঃ- যদি কেউ মান্নত করে যে তাহার অসুখ বা বিপদ দূর হইলে বা উদ্দেশ্য হাসিল হইলে তাহার একটি পুত্রকে আল্লাহর ওয়াস্তে কুরবানি করিবে। যদি কাজ সিদ্ধি হয় বা বিপদ দূর হয় তার হুকুম কি ?? 

উত্তরঃ- উক্তরূপ মান্নত করিলে তাহার মান্নত যদি পূর্ণ হয় অর্থাৎ কাজ ছিদ্দী বা বিপদ দূর হয় তবে তার পক্ষ হতে একটি ছাগল অথবা ভেড়া বা দুম্বা ইত্যাদি দ্বারা কুরবানী আদায় করিতে হইবে। (রদ্দুল মুহতার, গায়াতুল আওতার)

ওসিয়াত কোরবানির সংক্রান্ত বিষয়

প্রশ্নঃ- পিতার উপর কুরবানী ওয়াজিব ছিল কিন্তু কুরবানি করতে পারে নাই উহার হুকুম কি ?? 

উত্তরঃ- পিতার উপর কুরবানী ওয়াজিব ছিল কিন্তু কোনো কারণবশত উহা আদায় করিতে পারে নাই। এমন অবস্থায় তাহার জন্য ওসিয়ত করা ওয়াজিব যাতে তার পক্ষ থেকে কুরবানী করা হয়।  (রদ্দুল মুখতার  ৫/২১৩)

প্রশ্নঃ- কারো উপর কুরবানী ওয়াজিব ছিল কিন্তু কুরবানির দিনগুলো পূর্ণ হবার পূর্বে সে মারা গেল তবে তাহার হুকুম কি ?? 

উত্তরঃ- এরূপ ব্যক্তির উপর কুরবানি ও ওসিয়ত কোনটাই জরুরী নয়।  (ফতোয়ায়ে হিন্দিয়া)

প্রশ্নঃ- ওসিয়াত করিয়া যদি কোন ব্যক্তি মারা যায় তবে তাহার ওসিয়ত পূর্ণ করার হুকুম কি ?? 

উত্তর:- ওসিয়াত করিয়া যদি কোন লোক ইন্তেকাল করেন তবে তাহার পরিত্যক্ত সম্পদের এক-তৃতীয়াংশ হইতে ওসিয়ত পূর্ণ করিতে হইবে।  ( ফতোয়ায়ে শামী ৫/২১৩)

প্রশ্নঃ- ওসিয়াতকৃত কুরবানির গোশত বন্টনের হুকুম কি ?? 

উত্তর:- ওসিয়াতকৃত কুরবানির গোশত সম্পূর্ণ ফকির মিসকিন কে সদকা করা ওয়াজিব। ওসিয়তকারী  ব্যক্তির ওয়ারিশগণ খাইতে পারবেনা বা ধনী লোককে হাদিয়া দিতে বা খাওয়াতে পারবে না। তবে যদি ভাই, ভাতিজা, চাচা দূরবর্তী ওয়ারিশগণ সদকা বা যাকাত খাওয়ার উপযুক্ত হয় তবে তাদের খাওয়ার অনুমতি আছে।  ( ইমদাদুল ফতোয়া ৩/৫৭৩ পৃ.)

কোরবানির পশু জবাই করার বিবরণ

প্রশ্নঃ- কুরবানির পশু জবাই করা সম্পর্কে শরীয়তের বিধান কি ?? 

উত্তরঃ- কুরবানি দাতা নিজের কোরবানির পশু নিজের হাতে জবাই করা উত্তম। যদি নিজে জবাই করতে না পারেন তাহলে অন্যের দ্বারা জবাই করাবে। তবে নিজে জবাই করার স্থানে উপস্থিত থাকা উত্তম। মহিলা হলে পর্দার আড়ালে থাকিবে। ( রদ্দুল মুখতার)

প্রশ্নঃ- কুরবানির পশু জবাই করার জন্য কি কি শর্ত আছে ?? 

উওরঃ-  জবাইকৃত জন্তু হালাল হওয়ার জন্য তিনটি শর্ত আছে উহা ব্যতীত হালাল হইবে না। যথাঃ (ক) জবাইকারী মুসলমান হওয়া। (খ) কিতাবি অর্থাৎ একত্ববাদে বিশ্বাসী হওয়া।  (গ) জবাই করার সময় বিসমিল্লাহ পড়া অর্থাৎ আল্লাহর নাম নেওয়া। (সূরা মায়েদা)

অমুসলিমদের দ্বারা জবাই করাইলে হালাল হইবে না। দ্বিতীয়ত আহলে কিতাব দ্বারা জবাই করাইলে আল্লাহপাকের নাম উচ্চারণ করার শর্ত।

প্রশ্নঃ- জবাইকারীর সাথে অংশগ্রহণকারীদের বিসমিল্লাহ পড়ার হুকুম কী?? 

উত্তরঃ- জবাইকারীর সাথে অংশগ্রহণকারী সকললেই বিসমিল্লাহ বা আল্লাহ পাকের নাম উচ্চারণ করিতে হইবে। অর্থাৎ জবাইকারীর সাথে  যারা তলোয়ার দরবে তাদের সকলকেই বিসমিল্লাহি আল্লাহু আকবার বলা ওয়াজিব। তাহাদের কেহ যদি ইচ্ছে করে তরক করে তবে কোরবানী শুদ্ধ হইবে না। তবে যাহারা হাত-পা ও মাথা ইত্যাদি ধরিবার কাজে অংশগ্রহণ করিবে তাহাদের জন্য বিসমিল্লাহ পড়া উত্তম। (কাজীখান)

প্রশ্নঃ- জবাইয করার সময়  বিসমিল্লাহ আল্লাহু আকবার বলার পরে যদি পশু পালাইয়া যায় অথবা ছুরি পরিবর্তন করা হয় তবে তাহার হুকুম কি হবে ?? 

উত্তরঃ- জবাইকারী বিসমিল্লাহি আল্লাহু আকবর' বলার পর যদি পশু পালাইয়া যায় তবে দ্বিতীয় বার বিসমিল্লাহ বলিয়া জবাই করিতে হইবে। অপরদিকে ছুরি পরিবর্তন করে পুনরায় বিসমিল্লাহ বলা জরুরী নয়।  (মাজমাউল আনহুর)

কোরবানির গোশত বণ্টনের বিবরণ

প্রশ্নঃ- একাধিক ব্যক্তি একটা পশুতে অংশীদার হইলে উহার গোশত নিজেদের মধ্যে কিভাবে বন্টন করিবে বা উহার নিয়ম কি?? 

উত্তরঃ- কয়েকজন শরিক মিলিত হইয়া কোরবানি করিলে গোশত ওজন করিয়া ভাগ করিতে হইবে। শুধু অনুমান করিয়া ভাগ করিলে জায়েজ হইবে না। বরং কম বেশি হওয়ার ক্ষেত্রে গুনাহ হইবে এবং ইহা পারস্পারিক সন্তুষ্ট সত্তেও না জায়েজ। তবে যদি গোশতের সাথে মাথা,পা, চামড়া ইত্যাদি মিলাইয়া বন্টন করা হয় তবে যে অংশ মাথা, পা কিংবা  চামড়া রহিয়াছে উক্ত অংশে গোশত কম ওজন করা জরুরি।  (ফতোয়ায়ে শামী, রদ্দুল মুহতার ও হেদায়া)

প্রশ্নঃ-কুরবানির গোশত অপরকে দেওয়া সম্পর্কে শরীয়তের নিয়ম কি?? 

উত্তরঃ- কুরবানির গোশত ৩ ভাগ করে একভাগ নিজের ঘরের জন্য। এক ভাগ আত্মীয়-স্বজন ও বন্ধু-বান্ধব দের জন্য এবং তৃতীয় ভাগ ফকির মিসকিনদের মাঝে বন্টন করে দেওয়া মুস্তাহাব। যদি কারো পরিবারের লোক সংখ্যা বেশি হয় তবে তাহা হইলে প্রয়োজনবোধে দুই ভাগ বা সম্পন্ন নিজে রাখিতে পারিবেন। ( ফতোয়ায়ে শামী)

প্রশ্নঃ- কুরবানির গোশত বিক্রয় করা ও বিনিময় বা ওজরত দেওয়া যাইবে কিনা ?? 

উত্তরঃ- কুরবানির গোশত বিক্রি করা জায়েজ নাই। যদি কেউ বিক্রয় করে তবে তাহার মূল্য সদকা করা ওয়াজিব। অনুরূপভাবে কোরবানির গোশত দ্বারা জবাইকারী, প্রস্তুতকারীকে পারিশ্রমিক দেওয়া বা বিনিময় দেওয়া জায়েয নয়। বরং ভিন্নভাবে তাহাদেরকে পারিশ্রমিক দিয়ে দিতে হবে। ( ফতোয়ায়ে শামী, আলমগীর)

প্রশ্নঃ- কুরবানির পশুর চামড়া ব্যবহারের হুকুম কি?? 

উত্তরঃ- কুরবানির পশুর চামড়া কোন কাজের বিনিময় দেওয়া জায়েয হইবে না। কাজেই জবাইয়ের বিনিময়, গোশত তৈরীর বিনিময়, ইমাম, মোয়াজ্জেন, শিক্ষক বা কোন কর্মচারীর বেতন হিসেবে দেওয়া জায়েয নেই। (জাওয়াহিরুল ফিকাহ)

অতএব কোরবানির পশুর চামড়া নিজে ব্যবহার করিতে পারিবে অপরকে হাদিয়া দিতে পারিবে। ফকির মিসকিন কে দান করিতে পারিবে। ( জাওয়াহিরুল ফতুয়া)

Next Post Previous Post