সূরা ইখলাসের ফজিলত ও আলম | ইখলাসের শানে নুযুল | ইখলাসের গুরুত্ব
সূরা এখলাছ আকারে ছোট। উচ্চারণ ও অর্থ খুবই সহজ এবং সর্বক্ষেত্রে অতুলনীয়। এ সূরার বিশটি নাম রয়েছে। তার মধ্যে এখলাছ নামে সকল মুসলমানের নিকট পরিচিত। সূরা এখলাছ মক্কায় অবতীর্ণ হয়। আর সূরা ইখলাস এর আয়াত সংখ্যা চারটি। মহান আল্লাহ পাক রাব্বুল আলামিনের একত্ববাদের অর্থাৎ তাওহীদের পরিচয় তুলে ধরেছেন। সূরা ইখলাসের যেভাবে আল্লাহতালার পরিচয় তুলে ধরেছেন অন্য কোন সূরাতে সেভাবে আল্লাহ তায়ালার পরিচয় তুলে ধরেন নাই। এ সূরার ফজিলত সম্পর্কে বহু হাদিস বর্ণিত আছে।
সূরা এখলাসের শানে নুযুল
তিরমিজি ও হাকেম প্রমুখের রেওয়ায়েতে আছে, মুশরিকরা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সালামকে আল্লাহ তাআলা বংশ পরিচয় জিজ্ঞেস করেছিল, যার জবাবে কে সূরা নাযিল হয়। অন্য এক রেওয়াতে আছে যে, মদিনার ইহুদিরা এ প্রশ্ন করেছিল। এ কারণে যাহহাক (রহঃ) প্রমুখ তাফসিরবিদ এর মতে, সূরাটি মদীনায় অবতীর্ণ। (কুরতুবী)
কোন কোন রেওয়ায়েতে আছে যে, মুশরিকরা আরও প্রশ্ন করেছিল আল্লাহ তাআলা কিসের তৈরি? স্বর্ণ-রৌপ্য অথবা অন্য কিছুর? জবাবে সূরাটি অবতীর্ণ হয়েছে।
সূরা ইখলাসের ফজিলত
হযরত আবু আইয়ুব আনসারী রাঃ হতে বর্ণিত, হযরত রাসূলুল্লাহ সাঃ বলেন, তোমাদের মধ্যে কে একরাতে কোরআনের এক-তৃতীয়াংশ পাঠ করতে পারবে কি? তবে শোন যে ব্যক্তি সূরা ইখলাস পাঠ করল সে যেন কোরআনের তিনভাগের একভাগ পাঠ করল। (তিরমিজি শরীফ)
হযরত আনাস রাঃ থেকে বর্ণিত আছে, জনিক ব্যক্তি রাসূলুল্লাহ সাঃ এর কাছে এসে আরজ করল, আমি এই সূরাটি খুব ভালোবাসি। তিনি বললেন, এর ভালোবাসা তোমাকে জান্নাতে দাখিল করবে। (ইবনে কাসির)
হযরত আবু হুরায়রা রাঃ বর্ণনা করেন, একবার রাসূলুল্লাহ সাহ বললেন, তোমরা সবাই একত্রিত হয়ে যাও আমি তোমাদেরকে কোরআনের এক তৃতীয়াংশ শোনাবো। অতঃপর যাদের পক্ষে সম্ভব ছিল তারা একত্রিত হয়ে গেল। তিনি আগমন করলেন এবং সূরা ইখলাস পাঠ করে শোনালেন। তিনি আরো বলেন, এ সূরাটি কুরআনের এক তৃতীয়াংশের সমান। (মুসলিম, তিরমিজি শরীফ) আবু দাউদ তিরমিজি ও নাসায়ী দীর্ঘ রেওয়ায়েতে রাসূলুল্লাহ সাহ বলেন, যে ব্যক্তি সকাল বিকাল সূরা ইখলাস, ফালাক ও নাস পাঠ করে। তা তাকে বালা-মুসিবত থেকে বাঁচিয়ে রাখার জন্য যথেষ্ট হয়। (ইবনে কাসির)
ওকবা বিন আমের রাঃ এর রেওয়ায়েতে রাসূলুল্লাহ সাঃ বলেন, আমি তোমাদেরকে এমন তিনটি সুরা বলছি। যা তওরাত, ইঞ্জিল, যাবুর, কোরআনসহ সব কিতাবে রয়েছে। রাত্রিতে তোমরা ততক্ষণ নিদ্রায় যাই ও না, যতক্ষণ সূরা ইখলাস, ফালাক ও নাস না পাঠ কর। ওকবা রাঃ বলেন, সেদিন থেকে আমি কখনও এই আমল ছাড়েনি। (ইবনে কাসির)
এক রেওয়ায়েতে হযরত আনাস রাঃ হুজুর সাঃ থেকে বর্ণনা করেন, যে ব্যক্তি প্রথম ৫০ বার সূরা ইখলাস পাঠ করবে, তার ৫০ বছরের গুনাহ মাফ করে দেওয়া হবে। তবে বান্দার ঋণের কথা স্বতন্ত্র।
অন্য হাদীসে আছে, যে ব্যক্তি মৃত্যুশয্যায় সূরা ইখলাস পাঠ করবে, সে বিপদের সম্মুখীন হবে না এবং কবরের সংকীর্ণতা ও চাপ থেকে মুক্ত থাকবে। ফেরেশতাগণ তার হাত ধরে জান্নাতে পৌঁছে দিবেন।
আরো বর্ণিত আছে, যে ব্যক্তি ১১ বার সুরা ইখলাস পাঠ করবে, তার জন্য জান্নাতে একটি প্রাসাদ নির্মাণ করা হবে। আর ২০ বার পাঠ করলে দুইটি। ৩০ বার পাঠ করলে তিনটি প্রাসাদ নির্মাণ করা হবে। ইহা শুনে হযরত ওমর রাঃ বলেন, ইয়া রাসুলাল্লাহ! এমন হলে তো আমাদের প্রাসাদ বহুসংখ্যক হয়ে যাবে। তখন রাসূলুল্লাহ সাঃ বলেন, ওমর! মহান আল্লাহ তা'আলা এর চেয়েও অধিক প্রশস্ত। সুবহানাল্লাহ
সূরা ইখলাসের আমল
যে ব্যক্তি বাড়িতে প্রবেশ করার সময় সূরা ইখলাস পাঠ করবে। তার সেই বাড়ি থেকে অভাব দূর হবে এবং তার প্রতিবেশী ও অভাব থেকে মুক্ত হবে।
অন্য আরো এক হাদিসে বর্ণিত আছে, যে ব্যক্তি একবার সূরা ইখলাস পাঠ করবে, তার উপর বরকত নাজিল হবে। দুই বার পাঠ করলে তার ও তার পরিবার পরিজনের প্রতি বর্ষিত হবে এবং তার প্রতিবেশীর প্রতি বরকত রহমত বর্ষিত হবে।
যে ব্যক্তি ৫ বার সূরা ইখলাস পাঠ করবে তার জন্য ১২টি প্রাসাদ নির্মাণ করা হবে। ১০০ বার পাঠ করলে ৫০ বছরের গুনাহ মাফ করা হবে। তবে খুন-খারাবি ও ঋণ সংক্রান্ত গুণের কথা স্বতন্ত্র। যে ব্যক্তি ২০০ বার পাঠ করবে, আল্লাহ পাক তার ১০০ বছরের গুনাহ ক্ষমা করে দিবেন। যে ব্যক্তি ১০০০ বার পাঠ করবে, সে দুনিয়ায় বসে জান্নাত না দেখা পর্যন্ত মৃত্যুবরণ করবে না। (তিরমিজি শরীফ)
সুরা এখলাছ রেকাবি বা চীনা বরতনে মেশক বা জাফরান দ্বারা লিখে পানি দ্বারা ধৌত করতঃ উক্ত পানি পান করলে কঠিন রোগ থেকে আল্লাহ হেফাজত করবেন।
তাবিজ আকারে শিশুদের গলায় বেঁধে দিলে যাবতীয় রোগ ব্যাধি ও বিপদ-আপদ থেকে আল্লাহ হেফাজত করবেন।
হযরত আনাস রাঃ হতে আরো বর্ণিত আছে, হুজুরে আকরাম সাঃ বলেছেন, যে ব্যক্তি সূরা ইখলাস ২০০ বার পাঠ করবে, তার দুইশত বছরের গুনাহ মাফ করে দেওয়া হবে। তিনি আরও বর্ণনা করেছেন, হযরত রাসূলে পাক সাঃ এরশাদ করেন, যে ব্যক্তি সূরা ইখলাস প্রতিদিন ৩০ বার পাঠ করবে, মহান আল্লাহ তাকে দোজখের আজাব ও যাবতীয় বিপদ-আপদ হতে মুক্ত রাখবেন।
হযরত আলী রাঃ হতে বর্ণিত আছে, যে ব্যক্তি ফজরের নামাজ বাদ ১১ বার সুরা ইখলাস পাঠ করবে, ওই ব্যক্তি সারাদিন গুনাহের কাজ থেকে বিরত থাকবে। শয়তান তাকে ধোকা দেওয়া শক্তি পাবে না। সুবহানাল্লাহ